রায়া, এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা নারীর গল্প!
পরিচিত হতে হয় কুমান্দ্রা নামক এক প্রাচীন জনপদের সাথে। রায়া অনেকবার বাবা বেঞ্জার মুখে ড্রাগনদের গল্প শুনে এসেছে। হাজার হাজার বছর আগে কুমান্দ্রা জনপদে ড্রাগনরা বাস করতো। তাদের বদৌলতে ফুল, ফল, বৃষ্টিতে সমৃদ্ধ ছিল জনপদ। কিন্তু মানুষরা মোটেও একতায় বিশ্বাসী থাকতে পারেনি। যত একে অপরের সাথে বিরোধ বাড়তে শুরু করে, ড্রুন নামক একদল বিজাতীয় গোষ্ঠী সুযোগ লুফে নেয় এবং জনপদের ক্ষতি করতে শুরু করে।
ড্রাগনরা অবশ্য এই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে মানুষকে উদ্ধার করার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে শুরু করলে ড্রাগনরা প্রাণত্যাগ করে এবং তাদের ক্ষমতা শিশু নামে একটি ড্রাগনের কাছে প্রদান করে।
ঠিক ৫০০ বছর পর শিশু সামান্য একটি কিংবদন্তী ছাড়া কিছু নয়। আর এককালীন সুখ ও সমৃদ্ধির জনপদ কুমান্দ্রা পাঁচটি ভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত। সবকিছুই ঠিক চলছিলো। কিন্তু রায়ার জীবনে একসময় নেমে আসে বিশ্বাসঘাতকার করাল গ্রাস। কারণ, কুমান্দ্রার হারানো সেই একতা আর নেই। আর তারপরেই শুরু হয় রায়ার যাত্রা – নিজের দেশের মানুষদের উদ্ধার করতে হবে। আবার ফিরিয়ে আনতে হবে কুমান্দ্রাকে। আর তারজন্যে তাকে খুঁজে পেতে হবে শিশুকে। আর যাদুর হিরকখন্ডগুলো।
"রায়া এন্ড দ্য লস্ট ড্রাগন" একটি এনিমেশন মুভি হলেও মুভিটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিই তুলে ধরার চেষ্টা করে – আর সেটি হল একতা। রায়ার গল্পটি বেশ কিছু বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তো বটেই। সচরাচর ব্লকবাস্টার এনিমেশনগুলোর থেকে রায়ার গল্পটি ভিন্ন। আমেরিকান এনিমেশন মুভিগুলো সচরাচর জটিল ভাবনাগুলোকে এতটাও গুরুত্ব দেয়না। কিন্তু রায়ার গল্পে কিছু কিছু স্থানে সংলাপের মাধ্যমে ক্ষমা, সাহস এবং বিশ্বাস নিয়ে আকর্ষণীয় আলোচনা পাওয়া যায়। রায়া চরিত্রটিকে সাহসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ অনিশ্চয়তার টানাপোড়েনটুকু অনুভব করেই এগিয়ে যেতে হয়েছে।
হ্যাঁ, রায়া এমন একটি গল্প যেখানে রায়া নামের একজন নারী এমন এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে যেখানে একতাই মূলমন্ত্র। প্রথমবার দেখার আগে মনে হতেই পারে রায়া সেই এক পুরনো এক রাজকুমারীর গল্প। যে গল্পে রাজকুমারীর প্রজাদের রক্ষার জন্যেই আত্মত্যাগের পথে বলীয়ান হয়ে সংগ্রাম চালাতে হবে। কিন্তু আদপেই গল্পটি তেমন নয়। বরং এর গল্পটা কিছুটা ভারি বলেই ঠেকে। তারপরেও পুরো গল্পের মজাটুকু নষ্ট হয়নি। বরং এশিয়ান অঞ্চলের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার অপূর্ব চিত্রায়ন লক্ষ্য করা যায়।
যেমনটা বলছিলাম, রায়ার চরিত্রের পালাবদল এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিণতিটুকুই আসলে দেখার মতো। প্রথমেই বলে নিয়েছি, রায়াকে ঠিক ডিজনির অন্যান্য রাজকুমারী কেন্দ্রিক গল্প ভাবলে ভুল করা হবে। বর্তমান করোনাকালীন পরিস্থিতিতে একতার মতো বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তাই যেন চোখে আঙুলে দেখিয়ে দিতে চায়।
আমরা দেখি রায়াকে, যে কিনা আপন চোখে পৃথিবীর অসঙ্গতিগুলো দেখে। পরিস্থিতিগুলো বুঝে একজন নারীর দৃষ্টিকোণে এগিয়ে চলে। এমন একটি মুভি দেহার সময় একটি কথাই মনে পড়ে – যদি দর্শক-পূর্ণ হলে এই মুভিটি দেখা যেতো – তাহলে এই এডভেঞ্চার মুভিটি আরো বেশি উপভোগ করা যেতো।