Skip to content

২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্পত্তির সমানাধিকারেও পিছিয়ে আছেন নারীরা

সম্পত্তিতেও পিছিয়ে আছেন নারীরা কথাটি বললে অনেকেই মাথা দুলিয়ে মন্তব্যটি নাকচ করে দিবেন। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে পুরো বিষয়টিই আমাদের চোখে ধরা পড়ে। সময় বদলে গেছে এবং নারীরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অথচ যদি একবার ভালোভাবে সামগ্রিক চিত্রের প্রতি মনোযোগ দেয়া যায়, বিষয়টি স্পষ্টভাবে চোখে ধরা পড়ে। 

একটি রাষ্ট্রের রাজধানী কেন্দ্রিক জীবন-ব্যবস্থা দিয়ে বিচার করার প্রবণতাটুকুকে দায়ী করা যায়। নগরকেন্দ্রিক জীবনে নারীরা নানা প্রতিকূলতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিস্থিতি উৎরে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমগ্র দেশের দিকে একবার চোখ ফেরালে বিষয়টির সত্যতা নজরে আসে। 

যেমন, পাহাড়ি অঞ্চলের অনেক উপজাতির মধ্যে নারীদের নিজের কষ্টার্জিত সম্পত্তিতেও অধিকার থাকেনা। সমানাধিকারের কথা তো বাদই দেয়া যাক। মূলত, এই বিষয়টির ক্ষেত্রে প্রথাগত নিয়ম না থাকা কিংবা নিয়মকে অনুসরণ না করার প্রবণতা দায়ী। এক্ষেত্রে মূলত সমাজের অবকাঠামোগত পরিবর্তন এবং সময়ের পরিবর্তনের সাথে নিজস্ব অজ্ঞতার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। 

২০১১ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৮১ শতাংশ জমির মালিকানা পুরুষদের এবং ১৯ শতাংশ জমির মালিকানা নারীদের নামে। দীর্ঘ ১০ বছরে হয়তো এদিক সেদিক কিছুটা পরিবর্তন ঘটতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতি আগের মতোই। সচরাচর পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির হাতেই সম্পত্তির বিষয়গুলো থাকে। তাছাড়া আইনি জটিলতা ও মোকদ্দমার বিষয়গুলোর প্যাচ ঘোঁচ সচরাচর পুরুষরাই সামলে থাকে। বর্তমান সময়েও আইনি জটিলতার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণকে ভালো দৃষ্টিতে দেখা হয়না। ফলাফলে, নারীদের বিশাল একটি অংশ ভূমি আইন ও সংরক্ষণের সাথে পরিচিত নয়।

অসম বণ্টনের আরেকটি উদাহরণ আমরা পাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে। এক্ষেত্রে ধর্মকে অবশ্যই দোষ দেয়া চলেনা। বরং বিভিন্ন অনুশাসন সম্পর্কে নারীদের অজ্ঞতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুসলিম নারীদের অনেকেই দেনমোহর, কাবিননামার মতো জরুরী বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোমতো জানেনা। ২০১১ সালের একটি জরিপ থেকেই জানা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ নারীদের মোহরানার টাকা পরিশোধ করা হয়নি। তাছাড়া গ্রামীণ পটভূমিতে ভুলভাল বুঝিয়ে সম্পত্তি দখল করার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না।

এসব বিষয়গুলো একটু ভালোভাবে খতিয়ে দেখলেই একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে – সম্পত্তির সমানাধিকারেও নারীরা পিছিয়ে। এমনকি একজন স্বশিক্ষিত নারীকেও নিজের সম্পত্তি বিষয়ক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে নানা ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। রাজনৈতিক প্রতিপত্তি, আইনি জটিলতা নিরসন এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের সবসময়ই নানাবিধ সামাজিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। 

মূলত নিয়ম কিংবা অনুশাসন মানার ক্ষেত্রেও নারীদের সম্পত্তির অধিকার বিষয়ক নিয়মগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। এখানে "বিশ্বাস" নামক অনুভূতিকে পুঁজি করে এমন একটি বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। যেহেতু নারীকে একজনের অধীনস্থ হয়ে থাকতে হয় – এবং যেহেতু সম্পর্কগুলো খুব দ্রুতই ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই – তাই অধিকাংশ সময় নারীদের অজ্ঞই রাখা হয়। হয়তো অনেক সময় 'বিশ্বাসের' জায়গাটুকু অটুট থাকে। কিন্তু অভিভাবকের মৃত্যু কিংবা অঘটনের পর নানাভাবে নারীকে ঠকানো হয়।

এরকম বিভিন্ন জটিল এবং আপাতদৃষ্টিতে লঘু বিষয়গুলোই সমাজের মধ্যে নারীদের সম্পত্তি কিংবা আইনি অধিকারকে ব্যাহত করে চলছে। স্বভাবতই আমাদের সংকট নিরসনের একটিই উপায় – সচেতনতা বৃদ্ধি। কিন্তু মূলত আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির থেকে নারীদের সম্পত্তি বিষয়ক আইন, ধর্মীয় অনুশাসনগুলো সম্পূর্ণভাবে পূরণের বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নাহলে, সচেতনতা দিয়ে সমাজের মধ্যকার বহুদিনের জমে থাকা অভ্যাসকে সরানো সম্ভব হবেনা।

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ