মুঘল আমলের ‘নারী মসজিদ’ বিলুপ্তির পথে
রাজশাহীর বাঘায় মুঘল আমলে স্থাপিত নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘নারী মসজিদ’। প্রায় ৫০০ বছর আগে সুদূর বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য ৫ জন সঙ্গী নিয়ে হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রহ.) বাঘায় এসেছিলেন। আধ্যাত্মিক শক্তির বলে এই এলাকার জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচারে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন তিনি। এ সময়ে শাহদৌলার অনেক অলৌকিক কীর্তি দেখে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তার কাছে ইসলাম ধর্মের দীক্ষা নেন।
বাঘা ওয়াকফ এস্টেটের দেয়া তথ্যমতে, হযরত শাহদৌলার (রহ.) পুত্র হযরত শাহ আবদুল হামিদ দানিশ মন্দের (রহ.) মৃত্যুর পর তার তৃতীয় পুত্র মাওলানা শাহ আব্দুল ওয়াহাব (রহ.) বাঘার খানকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ওই সময় দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের প্রেরিত শাহী ফরমানযোগে ৪২টি মৌজা মাদদ মাস স্বরূপ দান লাভ করেন (১০৩০ হিজরি)। তখন শালিআনা ছিল ৮ হাজার টাকা।
হযরত আব্দুল ওয়াহাবের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলের মধ্যে হযরত শাহ মোহম্মদ রফিক (রহ.) ১০২৮ হিজরি সনে ২০৩৭ আনা শালিআনার সম্পত্তি ওয়াকফ করেন। ওয়াকফ এস্টেটের মুতওয়াল্লি (ষষ্ঠ রইশ) সাইজুল ইসলামের আমলে রইশ পরিবারের ও বাইরের পর্দানশিন নারীদের জন্য মসজিদ নির্মাণ করেন। তারা এ মসজিদে নামাজ আদায় করতেন।
প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই মসজিদের স্থাপত্য রীতিতে মুঘল ভাবধারার ছাপ সুস্পষ্ট। অবহেলা ও অযত্নের কারণে বর্তমানে এই মসজিদটিতে জুম্মার নামাজই শুধু পড়া হয়। অথচ আগে এ মসজিদে ৫ ওয়াক্তই নামাজই পড়া হত। সংস্কারের অভাবে মসজিদটি বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে।
বা ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা এ স্থাপনা সংরক্ষণে তেমন কোন উদ্যোগ নেই।
তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটির অবস্থান প্রায় ৩০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর। বর্গাকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট, প্রস্থ ১৩ ফুট। চারপাশের দেয়াল ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি চওড়া। উত্তর ও দক্ষিণে লম্বাকৃতির মসজিদের পূর্বদিকে রয়েছে খিলান আকৃতির প্রবেশ পথ।
হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এই নারী মসজিদকে টিকিয়ে রাখতে এলাকাবাসীর দাবি রক্ষণাবেক্ষণ ও পুরনো নকশা অক্ষুণ্ণ রেখে সংস্কারের ব্যবস্থা করা।