করোনাকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভের দৌরাত্ম্য
করোনার প্রকোপে স্থবির পুরো বিশ্ব। একটি ছোট্ট ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো বিশ্বজুড়ে। সক্ষম হয়েছে মানুষকে দীর্ঘসময়ের জন্য গৃহবন্দি করতেও। তবে তা বলে কি থেমে যাবে যোগাযোগ? একদমই না। সালটা যে ২০২০। থেমে থাকার দিন এখন আর নেই। পড়াশোনা থেকে শুরু করে যেকোনো অনুষ্ঠান সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে চলছে সবই। করোনা মহামারীর এ সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভের দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে খুব ভালোভাবে।
ধীরে ধীরে প্রযুক্তির আগমনের সাথে মানুষ প্রযুক্তির প্রতি অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ার উপর মানুষের নির্ভরশীলতা তো আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। করোনাকালে সেই নির্ভরশীলতা যেন আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এখন আরো শক্তিশালী রূপে। আর এক্ষেত্রে লাইভের চাহিদা তো প্রায় আকাশছোঁয়া। যেকোনো প্রয়োজনে ফেসবুক লাইভ, ইউটিউব লাইভের ছড়াছড়ি। প্রত্যেকের কথা বলার জন্য নিজস্ব প্লাটফর্ম 'লাইভ'।
যদিও পুরোটা ভার্চুয়ালি, কিন্তু কি নেই সেখানে। 'লাইভ'-এ গান হচ্ছে, আবৃত্তি হচ্ছে, নাচ হচ্ছে, টক শো হচ্ছে ৷ শিক্ষাদান, চিকিৎসকের পরামর্শ, অফিসের মিটিং, রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম, বাদ যাচ্ছে না কিছুই৷ সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্লাটফর্ম। আত্মীয়-বন্ধু-প্রিয়জনের সঙ্গে লাইভ, আবার অচেনা আমজনতার উদ্দেশ্যেও লাইভ, চলছে সবই। থেমে নেই টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও। করোনার বাধা, অতিথিকে সশরীরে হাজির করতে পারবেন না অফিসে। তাই আয়োজন করে নিচ্ছে লাইভের। ভিউয়ের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আর হবে নাই বা কেন, মানুষ যে টেলিভিশন এর থেকে সোশাল মিডিয়ার পাতায়ই চোখ রাখতে বেশি পছন্দ করেন।
শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানসিক নৈকট্য আনয়নে লাইভ যে জোরালো ভূমিকা পালন করছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনলাইন বিজনেস এবং বিজ্ঞাপন মাধ্যমও হচ্ছে ফেসবুক লাইভ। ফেসবুক বিনা মূল্যে দেওয়া বিজ্ঞাপনের জন্য একটি অন্যতম মাধ্যম। যেকোনো ব্যক্তি বা ব্র্যান্ড চাইলেই এখন যেকোনো সময়ে ফেসবুক লাইভে এসে তার বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে। বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সরাসরি পণ্য প্রদর্শনী ও গ্রাহককে সক্রিয় করার একটি কার্যকরী কৌশল হচ্ছে ফেসবুক লাইভ। অনেকেই করোনাকালে লকডাউন এ পড়ে আর্থিক অনটনে পড়েছেন। তারা শুরু করেছে অনলাইন বিজনেস, লাইভে এসে প্রদর্শনী করে তারা পণ্য বিক্রি করছে।
বড় বড় তারকারাও তাদের ভক্তদের ও নিজেদের আনন্দ দেয়ার লক্ষ্যে করেছেন নিয়মিত লাইভের আয়োজন। যেমন ধরুন ভক্তদের আনন্দ দিতে তামিম ইকবালের লাইভ। জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ক্রিকেটারকে নিয়ে ফেসবুকে নিয়মিত লাইভ আড্ডার আয়োজন করেছেন। তিনি বলেন এই লাইভ কেবলই আনন্দ দেওয়ার জন্য। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, ফাফ ডু প্লেসিস, কেন উইলিয়ামসন এর মতো বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদেরকেও নিয়ে আসেন তিনি। ভক্তরাও উন্মুখ হয়ে উপভোগ করতেন তার লাইভের আয়োজন।
শুধু তারকা আয়োজিত কিংবা বিনোদন বা শিক্ষা নিয়ে নয়, চিকিৎসা, সমাজসেবা, পরিবেশ থেকে শুরু করে চলছে রাজ্যের লাইভ আয়োজন। অভিনব এসব পথ দেখিয়ে মানুষ প্রমাণ করছে, ঘরে বসে থাকা মানেই কর্মহীন বা হতাশায় ডুবে থাকা নয়; বরং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলা।
অনেকে এই ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে পাশে দাঁড়িয়েছে অসহায় মানুষের। মুখে তুলে দিয়েছে খাবার। এ প্রক্রিয়ায় লাইভে চলেছে নিলামও, করোনায় খেতে না পারা মানুষের সাহায্যে ১৮ বছর ধরে নিজের হাতে পরা ব্রেসলেটটি নিলামে তুলে দেন ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা। 'অকশন ফর অ্যাকশন'-এর ফেসবুক পেজের লাইভে নিলামে ব্রেসলেটটিকে বিক্রি করেন তিনি। লাইভে নিজের প্রিয় ব্যাট নিলামে তুলেছিলেন মুশফিক-সাকিবও।
মূলত প্রযুক্তি মানুষের জীবনে কতটা আশীর্বাদ হতে পারে তাই দেখা যাচ্ছে চলমান করোনা মহামারির সময়ে। প্রযুক্তির এই যুগে মানুষকে গৃহবন্দি করলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা যে মোটেও সম্ভব নয় তা বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভের দৌরাত্ম্য দেখেই বোঝা যাচ্ছে।