শীতে উষ্ণ ঢাকা
বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে শীতের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। এসময় সব জায়গাতেই শীতের প্রভাব দেখা যায়। এসময় গা হিম করা ঠাণ্ডা নামবে, গায়ে উঠবে উষ্ণ পোশাক, রাস্তার পাশে আগুনে তাপ নেবে শীতার্ত মানুষ এসবই শীতকালে জনজীবনের চিত্র। তবে ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে এরকম দেখা যাচ্ছেনা।
হাড় কাঁপানো শীত যেন প্রবেশই করতে পারছে না এসব শহরে। বিশেষ করে দিনের বেলায় তো শীতের অনুভূতি বেশ কম। ঢাকার তাপমাত্রা এখনো ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় শীত কম অনুভূত হওয়ার কারণ আবহাওয়া বা জলবায়ুর পরিবর্তনের মধ্যে লুকিয়ে নেই। এর মূল কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও সবুজ ভূমি এবং জলাশয় কমে যাওয়া। এসব কারণে শীতকালেও অস্বাভাবিক উষ্ণ থাকছে রাজধানী।
ঢাকা শহরের জলবায়ু ও আবহাওয়া নিয়ে করা বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য দ্রুত কমে আসছে। বিশেষ করে শীতকালে এ পার্থক্য বেশি অনুভূত হচ্ছে। গবেষণাটিতে দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে ঢাকার গড় তাপমাত্রা দেশের অন্য যেকোনো গ্রামীণ এলাকার চেয়ে পৌনে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তবে রাজশাহী শহরের সঙ্গে গ্রামীণ এলাকার তাপমাত্রার পার্থক্য পৌনে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আশরাফ দেওয়ানের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংক ‘ঢাকার স্থানীয় আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ার কৌশল এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা’ শীর্ষক ওই গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয় গত বছরের জুনে যুক্তরাজ্যের রয়েল ম্যাটেরোলজিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞান সাময়িকীতে।
গবেষণাটির জন্য ১৯৬৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকার তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। শহরের ২৩টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের সঙ্গে ঢাকার বাইরের এলাকাগুলোর তাপমাত্রার তুলনা টানা হয়। গবেষণাটিতে সুপারিশ হিসেবে ঢাকার বাড়িগুলোর ছাদে গাছ লাগানো, শহরে সবুজ এলাকা বাড়াতে বৃক্ষরোপণ, যে কটি জলাভূমি টিকে আছে তা রক্ষা করা এবং ড্যাপ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
তবে হিমালয়ের পাদদেশের এলাকা উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের এ চিত্র মোটামুটি তীব্রভাবে দেখা যাচ্ছে। সেখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। ঢাকা শহরেই তুলনামূলক উষ্ণতা বিরাজ করছে প্রকৃতিতে, যার প্রভাব ফুটে উঠছে জনজীবনে।