প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য
পরিবারে একটা নবজাতক এলে আনন্দের কমতি থাকে না। নবজাতকের উপস্থিতিতে সকলে আনন্দে মেতে থাকেন। হৈ হৈ রব পড়ে থাকে সবসময়। কিন্তু এত আনন্দের মাঝে প্রসবের পর মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক কোন পর্যায়ে থাকে তার খোঁজ হয়তো সবাই নেয় না। অথচ এ সময়টা তে মায়েদের মনের উপর চলে নানান টানাপোড়েন। মনে হয় অকারণেই কান্না পায়, কোনো কিছুই খেতে মন চায় না, মনে কোনো আনন্দ নেই, রাত জেগে জেগে ক্লান্ত। মাঝেমধ্যেই শিশুর উপর বিরক্তি আসে, মনে হয় শিশুটিকে লালনপালন করতে পারবেন না। এমন সব ভাবনা থেকে মনের উপর চাপ তৈরি হয়। মানসিক সমস্যা আরো বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে মায়েদের তিন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়।
পোস্ট পার্টাম ব্লু
এই সমস্যাটি মূলত সন্তান জন্ম দেওয়ার শারীরিক ধকল ও হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে৷ এসময়ে অকারণে কান্নাকাটি, আবেগের উঠানামা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, খিটখিটে মেজাজ, ক্লান্ত প্রকাশ পায়। এধরণের পরিস্থিতি দু সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এর থেকে বেশি সময় হলে অবশ্যই বিষয়টির প্রতি নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন
পোস্ট পার্টাম ব্লুয়ের লক্ষণ গুলো অধিক সময় ধরে দেখা দিলে তখন তা পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে রূপ নেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো পোস্ট পার্টাম ব্লুয়ের মত মনে হলেও এগুলো আরো দীর্ঘমেয়াদি ও অধিক যন্ত্রণাদায়ক হয়।
ফলে দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকে, কোনো কাজে আগ্রহ বা আনন্দ পায় না, সদ্যোজাত সন্তানের প্রতি মায়া বা আকর্ষণ কমে যায়, ঘুম ও ক্ষুধা হীনতা অথবা উল্টো অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, অকারণ অপরাধ বোধ এবং প্রায়ই কান্নাকাটি করার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করলে মায়েরা আঘাত প্রবণ হয়ে উঠেন , নিজেকে এবং শিশু সন্তানটিকেও মেরে ফেলার মত দুর্ঘটনা ঘটান। তাই এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস
এই সমস্যাটি মায়েদের জন্য আরও বেশি গুরুতর। এই সমস্যাটি দেখা দিলে অস্বাভাবিক আচরণ ও কথাবার্তা, ভ্রান্ত বিশ্বাস (যেমন অকারণে সন্দেহ), হ্যালুসিনেশন (অদৃশ্য ব্যক্তিদের কথা শোনা), অকারণে হাসা এবং বিড়বিড় করে কথা বলা, ঘুম না হওয়া, সদ্যোজাত শিশুর যত্ন নিতে না পারা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। এই সময়ে মোটেও বিলম্ব করা যাবে না; এসব লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ঔষধ সেবন করতে হবে। নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।
প্রসূতি মায়ের এই সময়টা তে পরিবারের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। মায়ের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্য করতে হবে।