Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনাকালে এক শিক্ষার্থীর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

‘‘গত দুই বছর ধরে কিছু একটা করব, কিছু একটা করতে হবে ভেবেছি; কিন্তু কখনই কিছু করা হয়ে ওঠেনি। যখন নবম শ্রেণিতে পড়তাম, হাতের কাজগুলো আম্মুর কাছ থেকে শিখতাম। আমার কাজ দেখে সবাই অনেক প্রশংসা করতেন; কিন্তু কিছু করার উৎসাহটা কেউ দিত না। তাই সাহসও পেতাম না। করোনাকালে ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ‘ওমেন অ্যান্ড ই-কর্মাস ফোরাম (উই)’- এর গ্রুপের মাধ্যমে আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পথচলা শুরু হয়।’’

 

কথা হয়েছিল করোনাকালে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা এক তরুণীর সাথে। তার নাম জান্নাতুল নাঈম রিতু। সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অর্থনীতি বিষয় নিয়ে অর্নাস ২য় বর্ষে পড়াশোনা করছে। স্বাভাবিক দিনগুলোতে টিউশনি করে সে আয় করত। হঠাৎ করোনা আসায় সে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সবার মত রিতুরও ঘর বন্দী সময় কাটতে থাকে বিষণ্ণতায়। অনলাইনে ক্লাসের পরও যথেষ্ট সময় সে হাতে পায়। এই সময়গুলো সে কীভাবে পার করবে, তা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।

 

করোনাকালে এক শিক্ষার্থীর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

 

রিতু এরইমধ্যে একজন বড় আপুর মাধ্যমে নারীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার প্লাটফর্ম ‘ওমেন অ্যান্ড ই-কর্মাস প্লাটফর্ম (উই)’- এর গ্রুপের সন্ধান পায়। সে বলে, ‘প্রথমে কিছুই বুঝতাম না, প্রচুর   থাকতাম। ই-কর্মাস এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজীব আহমেদ স্যারের কথাগুলো মেনে চলতাম। আস্তে আস্তে পরিচিত হতে থাকলাম। মূলত রাজীব আহমেদ স্যারের এত বড় প্লাটফর্মে এসে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করার কথা চিন্তা করে কাজ শুরু করে দিলাম।’

 

রিতুর হাতের কাজ জানা থাকায় তেমন বেগ পেতে হয় না। সে তার কাজগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরা শুরু করে। বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ ও নিজের প্রোফাইল থেকে সেসব প্রচার করতে থাকে। মাত্র মাস খানেকের মধ্যে সে বেশ সাড়া পেতে থাকে। বিভিন্নজনের কাছ থেকে অর্ডার আসতে থাকে। কাজ করে ডেলিভারি দিয়ে ভালো রিভিউ সে পায়। না, শুধু ভালো রিভিউ না, পরিচিত জনরা বলতে থাকে, ‘রিতু, তুমি শেষ পর্যন্ত সেলাইয়ের কাজ করবে? পড়াশোনা করে কী লাভ তাহলে?’

 

করোনাকালে এক শিক্ষার্থীর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

 

রিতু বলে, ‘লোকজনের অমন কথায় আমি কিছুই মনে করিনি; বরং মনের মধ্যে আরও সাহস পেয়ে গেলাম। পিছে কে কী বলল, তাতে কিছু যায়-আসে না। সামনে বলার সাহস নেই, এটাই যথেষ্ট। শুধুমাত্র নিজের একটি পরিচয় হোক, অন্যের কাছে নিজেকে পরিচিত করার উপায় থাকুক। ধৈর্য আর পরিশ্রম দিয়ে আমি আমার কাজগুলো করি, খুব আনন্দ পাই কাজ করে। ছোট ছোট আনন্দ খোঁজার চেষ্টা অনেক বড় আনন্দের সন্ধান দেয় বলে আমি মনে করি।’

 

উদ্যমী এই তরুণী প্রতিনিয়ত বেবিকাথাঁ, বড়দের নকশিকাথাঁ, হাতের কাজের জামার অর্ডার পাচ্ছে। সেগুলো রেডি করে দূরবর্তী গ্রাহকদের কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাচ্ছে। নিকটবর্তীরা বাসায় এসে অর্ডার করছে, কাজ শেষ হলে নিয়ে যাচ্ছে। রিতু তার হাতের কাজ দিয়ে ইতোমধ্যে নিপুণতার প্রমাণ দিয়েছে, সেইসাথে বিশ্বস্ততা অর্জন করে ফেলেছে।

 

রিতু জানায়, ‘আমি শুধু নকশিকাঁথা বা সেলাই নিয়ে কাজ করি না। ফুড প্রোডাক্টস নিয়েও কাজ করি। সাবুদানার চিপস, ঝিনুক পিঠা, বেনী পিঠা তৈরি করি এবং অনলাইনে বিক্রি করি। ফুড প্রোডাক্টের অনেক অর্ডার পেয়েছি। প্রবাসিরাও অর্ডার করছে। আরও সাড়া পেলে পণ্যের তালিকা আরও বৃদ্ধি করার ইচ্ছে আছে।’

 

করোনাকালে এক শিক্ষার্থীর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

 
তরুণ এই উদ্যোক্তার পরিকল্পনা- ভেজাল ও অসাধুতার শিকল ভেঙ্গে বৃহত্তর পরিসরে গড়ে তুলবে তার হোডমেড প্রোডাক্টের বিশাল পরিসর। তার দেখাদেখি অন্যান্য তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে আসবে বলেও প্রত্যাশা রয়েছে তার। সে ‘ওমেন অ্যান্ড ই-কর্মাস প্লাটফর্মের (উই)’র অবদানকে বেশ আন্তুরিকভাবে স্বীকার করে।

 

জান্নাতুল নাঈম রিতু এই করোনাকালে থেমে নেই। কাজ করছে ঘরে বসে, পাশাপাশি করছে পড়াশোনা। যখন দেশজুড়ে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা, তখন সে আয়ের বিকল্প পথ আবিষ্কার করে ফেলেছে। স্বপ্ন দেখছে আরও বড় কিছু করার। রিতুর এই উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প থেকে এটিই প্রমাণ করে যে করোনাকালে ঘর বন্দী সময়টা কারও জন্য সুখকর ও সম্ভাবনার হয়ে উঠতে পারে। তার জন্য প্রয়োজন আগ্রহ, ধৈর্য আর কান কথাকে কানে না তোলা।   

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ