Skip to content

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্পর্শেই লুকিয়ে থাকে সভ্যতা ও অসভ্যতা

সাশ্রয়ী বা অনেক সময় দ্রুত যাতায়াতের মাধ্যম হওয়ায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যাতায়াত করছে সবাই। ঠিক একই কারণে, গন্তব্য যেখানেই হোক, রিকশা কিংবা সিএনজি থেকে বাস অথবা লেগুনাতেই বেশি চলাচল করে মেয়েরা। আর সেখানেই সমস্যার শুরু। ইচ্ছাকৃত ধাক্কা বা অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ, চোখে-মুখে বিরক্তি আর অস্বস্তির নামই হয়তো গণ-পরিবহন। যেখানে একটি স্পর্শই প্রমাণ করে কে কতটা সভ্য কিংবা অসভ্য।

 

শুরুটা হয় অবশ্য বাসে ওঠার লাইন থেকে। সিরিয়ালে দাঁড়াতে হলে কাউকে দেখা যায় মেয়েটার খুব কাছে এসে দাঁড়ায় এক রকম ইচ্ছা করেই। এটা নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগা মেয়েটা হয়তো কিছুই বলে না, কিন্তু তার ভেতরে যে যুদ্ধ চলে, তাতে আমাদের সমাজ সভ্যতা ছোট হয়ে যায়। পাশ ঘেঁষে ইচ্ছেকৃত দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার বোধ কে তৈরি করে দেবে? এমন না যে লোকটা মেয়েটাকে সরাসরি স্পর্শ করছে। কিন্তু এই যে ভাণ ধরে থেকে পরোক্ষ অসভ্যতা সে করছে, তা তো মিথ্যে না। অনেক মেয়েই এই বিব্রতকর পরিস্থিতির স্বীকার হচ্ছেন প্রতিদিনই।

 

তারপর আসে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। বাসের দরজা হয়ে যখন মেয়েটা ভেতরে ঢোকে, তখন সরাসরি তার পিঠে বা স্পর্শকাতর জায়গায় স্পর্শ করে বাসের হেলপার। মেয়েটা টের পেয়ে যায়। কিন্তু ভিড় ঠেলে নিজের আসন বুঝে নেবার যুদ্ধে সে আর কিছু বলতে পারে না। বলতে গেলে সে যে তার পাশে কাউকে পাবে সে ব্যাপারেও তার সন্দেহ থেকে যায়। অকারণ ঝামেলা এড়ানোর জন্য মেয়েটাকে চুপ থাকতে হয়। কিন্তু তার মন থেকে সেই খচখচানি ভাব নিশ্চয়ই দূর হয় না।

 

পরবর্তীতে আসে আরো বাজে ঘটনা। মেয়েটা যে আসনে বসে, সেখানে হয়তো তাকে কোনো একটা পুরুষ লোকের কাছে বসতে হয় অথবা তার পাশে এসে কোনো পুরুষ এসে বসে। পাশাপাশি বসতে হয় প্রায় গায়ে গা লাগিয়েই। বাসের ছোট ছোট বসার জায়গা নিয়ে কিছু বলারও থাকে না। অধিকাংশ পুরুষ সেই পাশে বসা মেয়েটার হাতের সাথে হাত বা পায়ের সাথে পা মিশিয়ে বসার নানান বাহানায় থাকে। অন্যদিকে মনোযোগ দিয়ে এমনভাবে এসব অসভ্যতা করে, যা নিয়ে পাশের মেয়েটির অভিযোগ করারও কিছু থাকে না। অগত্যা সে অপেক্ষায় থাকে কখন পথ ফুরাবে।

 

সব আসন পূর্ণ। এবার দাঁড়িয়ে যেতে হবে। এ এক জঘন্য দৃশ্য। মেয়েটাকে কোনো একজন উঠে গিয়ে তো বসতে দেবেই না, বরং একজনের পর একজন তাকে ঘেঁষে পার হতে থাকবে, শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে দাঁড়াবে, ঝাঁকি খেতেই উপরে গিয়ে পড়বে, মেয়েটার দমবন্ধ অবস্থায় মুখ লুকিয়ে কান্না আড়াল করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। কারণ, যেকরেই হোক তাকে গন্তব্যে পৌঁছাতেই হবে।

 

হিউম্যান হলারে দেখা যায় পাঁচজনের আসনে বসছে ছয়জন। সেক্ষেত্রে একটা মেয়েকে প্রায় পিষ্ট হতে হতে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। কিছু পুরুষ আছে- যারা কৌশলে কোনো মেয়ের পাশে বসতে চায় অথবা এমনভাবে বসে, যেন কোনো মেয়েকে বাধ্য হয়ে তার পাশেই বসতে হয়। এই অবস্থার সমাধান না দেখে মেয়েটা চরম বিরক্ত হয়েই সেই পথ পাড়ি দেয়।

 

এই যে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় পাবলিক পরিবহণে যাতায়াত করা প্রতিটা মেয়ের জীবনের এমন ভোগান্তি, এর সমাধান কি দ্রুত সম্ভব? মেয়েদের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা খুব দ্রুত সম্ভব বলেও মনে হচ্ছে না। আবার এই শহরের নিশ্চিত জ্যাম আর বাস বা বাসে উঠে আসন পাওয়া, এসব ব্যাপারেও কোনো সম্ভাব্য সমাধান চোখে পড়ছে না। তাহলে কী করতে হবে এখন? আপাতত অবশ্যই কিছু করার আছে।

 

যখনই কোনো মেয়ে দেখবে ইচ্ছে করে কেউ তাকে এ রকম পরিস্থিতে ফেলে দিচ্ছে, তাৎক্ষণিক সেটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। বিষয়টা অভ্যাসে পরিণত হলে এসব সভ্যতা বিবর্জিত কাজ করার আগে অধিকাংশই ভেবে নেবে কয়েকবার। আর কারো সামনে এ রকম দৃশ্য চোখে পড়লে মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সম্মিলিত ভাবনা আর ভাবনার জায়গা থেকে প্রতিবাদ ও সচেতনতায় অনেক বড় পরিবর্তন সম্ভব। এই স্বচ্ছ স্বপ্ন আমরা দেখতেই পারি।

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ