Skip to content

১লা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালো থাকতে হবে করোনাসহ

ইমা (ছদ্দনাম) মাত্রই ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাসি অনুষদ থেকে বেশ ভালো ফলাফল নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছে। এই সময়টা ভালো কোনো একটা চাকরি নিয়ে তার ভীষণ ব্যস্ত থাকার কথা। অথচ সময়টা কি দারুণ অলসতায় কাটছে ভাবতেই তার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। নামটা ভিন্ন হলেও মোটামুটি এই একই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা অনেকেই। অপেক্ষা করে যাচ্ছি কবে আবার আমরা একটা সুন্দর স্বাভাবিক সকাল দেখবো তার জন্য। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিচ্ছে কোনো কার্যকরী ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়ে গেলেও করোনা ভাইরাস আপাতত কোথাও যাচ্ছেনা। জীবনযাপন করতে হবে এই বিপত্তিকে আপন করে নিয়েই। তবে করণীয় কি? তাই নিয়েই আজ লিখতে বসা।

 

শুরুতেই এইটুকু বুঝে নেয়া যাক, আর যা-ই করি বা না করি, নিজের মনকে শক্ত করার কোনো বিকল্প আমাদের হাতে থাকছে না। করোনামুক্ত একটা সকাল কতোটা উপভোগ্য ছিলো তা নিয়ে খুব বেশি না ভেবে কিভাবে করোনা নিয়েই আসন্ন সকালগুলোকে উপভোগ্য করে তোলা যায় তাই নিয়ে ভাবাই সমীচীন বোধহয়।

 

তো এই করোনাকালীন সময়ে করণীয় কাজগুলোকে দুটো ভাগে ভাগ করে আলোচনা এগুনো যাক। ধরে নেই একটি ভাগ হলো অবশ্য করণীয় কাজ। খেয়ে পরে বেচে থাকার জন্য যেই কাজগুলো একেবারে না করলেই নয়। অন্যটি হচ্ছে ব্যক্তিগত মানসিক বিকাশের জন্য করণীয় কাজ। এক্ষেত্রে বলে রাখি, এই লিখনিতে আমি করোনাকে কেবল ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করবো। নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে অন্য কোনোদিন বিচার করা যাবে।

 

অবশ্য করনীয় কাজগুলোর ব্যাপারে বলতে গেলে সবার প্রথমে যেই বিষয়টি আসবে তা হলো করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন-যাপন করা। এক্ষেত্রে যতো দ্রুত সম্ভব করোনার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উল্লেখিত বিধি নিষেধগুলোর সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করে নেয়ার কোনো বিকল্প আক্ষরিক অর্থেই নেই। জীবন ও জীবিকার তাগিদে যেহেতু আমাদের ঘর থেকে বের হতেই হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধিগুলোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সচেতনতা অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনি নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। পাশাপাশি নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারেও সচেতন হওয়া আবশ্যক।  

 

ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পর অবশ্য করণীয় কাজগুলোর মধ্যে আসে  করোনাকালীন সময়ে জীবন-জীবিকা কেমন হবে বা কিভাবে হবে তা নিয়ে একটা নীলনকশা ঠিক করা। নিঃসন্দেহে এই সময়টাতে আমাদের প্রচলিত চাকরির সুযোগ আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহের কি কি সুযোগ আপনার জন্য অবশিষ্ট থাকছে আর তার মধ্যে কোনটি আপনার কাছে অগ্রাধিকার পাবে তার একটা তালিকা করে ফেলুন। তারপর সেই তালিকা অনুযায়ী কাজে লেগে পড়ার সুযোগ খুঁজুন। একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা করে পরিকল্পিতভাবে এগুলে নিঃসন্দেহে কাজটি অনেকখানি  সহজ হয়ে যাবে এবং সফলতার সম্ভাবনাও অনেকখানি বেশি থাকবে।

 

চলুন এবার কথা বলা যাক ব্যক্তিগত মানসিক বিকাশের জন্য করণীয় কাজগুলোর ব্যাপারে। নিঃসন্দেহে করোনা আমাদের অনেককেই প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা নিজের জন্য কিছুটা সময় করে নেয়ার সুযোগ দিচ্ছে। যারা ঘরে বসেই অনলাইনে অফিস করছেন বা ঘরে বসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করছেন তারা।

 

ঢাকার চিরচেনা ট্রাফিকে বসে নষ্ট হওয়া যাতায়াতের সময়টুকু বাঁচাতে পারছেন। এই অতিরিক্ত সময়টুকু বিনিয়োগ করতে পারেন নিজের পছন্দের কোনো কাজের পেছনে। যেই কাজটি করে মনে কিছুটা প্রশান্তি পান। হতে পারে একটি পেইন্টিং কিংবা প্রিয় লেখকের লিখা কোনো লিখনি। বা এই সময়টা দিতে পারেন নিজের পরিবারের পেছনে। নেতিবাচক কারণে পেয়ে যাওয়া এই অতিরিক্ত সময়টুকু কাজে লাগিয়ে যদি পারিবারিক বন্ধনগুলোকে আরেকটু দৃঢ় করা যায় তাহলে ক্ষতি কি! এছাড়াও সময়টুকু কাজে লাগিয়ে নতুন কোনো কিছুতে দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করতে পারেন কিংবা পুরনো কোনো কোনো ভালো অভ্যাস ঝালিয়ে নিতে পারেন।

 

সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, মনোবল হারানো চলবেনা একদমই। মনকে শক্ত করে নিজেকে বোঝাতে হবে আমরা আগেও যুদ্ধ করেই টিকে ছিলাম। সামনের সময়টুকুতেও তাই করবো। মনে মনে বলবো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের লিখা গানের সেই বিখ্যাত শব্দগুচ্ছ,”বিপদে মোরে রক্ষা করো এই নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি যেন না করি ভয়।”

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ