ফার্মেসিতে স্যানিটারি ন্যাপকিন আর কিছু ফিসফাস
পিরিয়ড, একটা বয়সের পর থেকে প্রতিটি নারীর শরীরে শুরু হওয়া একটি অতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিশ্বের সূচনা লগ্ন থেকে প্রতিটি নারীর শরীরেই আর দশটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মতোই একটি। এরপরও সমাজে এই পিরিয়ড নিয়ে রয়েছে নানা রকমের গোপনীয়তা। সমাজের সামনে প্রতিটি নারীরই এ নিয়ে রয়েছে এক ধরণের ভয়, লজ্জা ও সম্মানহানির আতঙ্ক। কিন্তু কেন? এই কেন এর সঠিক উত্তর কার কাছে আছে সেটারো সঠিক কোনো উত্তর নেই। তবে পিরিয়ড ব্যাপারটাকে হয়তো এখনো সমাজ মানব শরীরের আর দশটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মতো করে নিতে পারে নি। এজন্যই এটা ট্যাবু।
মেয়ে ও নারীরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই ‘পিরিয়ড’/ঋতুস্রাব বা মাসিক নামক একটি চক্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন পার করেন। অথচ সেই প্রক্রিয়াকে আমরা নিষিদ্ধ বিষয় বা ‘ট্যাবু’ আখ্যা দিয়ে কুসংস্কার, লজ্জা, ও পুরুষতন্ত্রের চাদরে ঢেকে আড়াল করে রাখি আমরাই। ফার্মেসিগুলোতে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে যাওয়া এখন আরেকটি যুদ্ধ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এ ধরনের পণ্য নিয়ে ফিসফাস করে কথা বলতে। যেন কেনার ইচ্ছাটাই নিষিদ্ধ বিষয় বা ‘ট্যাবু’। এরপর বিক্রেতার কাছে তা চাইলেও তাদের অনেকেরই ভাবখানা এমন যেন ভয়াবহ নিষিদ্ধ কোনো কিছু আমি প্রকাশ্য দিবালোকে চেয়ে ফেলেছি! তিনি এই সেনেটারি ন্যাপকিনকে একটি প্লাস্টিকের মোড়কে ভরে আরেকটি খয়েরি খামের ভেতরে ঢুকিয়ে স্ট্যাপলারের পিন মেরে আপনাকে দেবেন, যেন কোনোভাবেই কেউ না দেখে ফেলে।
এতো গোপনীয়তার আসলে কারণ কি খুবই জটিল বা ক্ষতিকর কিছু! উত্তর হলো, না। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন পুরুষের দাড়ি ওঠার মতোই নারীর একটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে কেন এতো ফিসফাস? কেনই বা বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনার ব্যাপারে নিরুৎসাহ করার তো প্রবণতা! পিরিয়ডকে পুরুষের দাড়ি ওঠার মতো স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে মেনে নিলে হয়তো সেটাও স্বাভাবিক থাকতো। এতো গোপনীয়তার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু সেই অতি সাধারণ কাজটাই আমরা পারি নি কখনোই।
‘যে পরিবর্তন তুমি কামনা করো, আগে নিজেকে সেভাবে রূপান্তরিত করো/ বদলে যাও বদলে দাও’, আমি এই দর্শনের সঙ্গে একমত। ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্যাডম্যান চলচ্চিত্রটি তুমুল আলোচনায় আসে। সিনেমার আলোচনার পাশাপাশি অভিনেতা অক্ষয় কুমারের দেওয়া ‘প্যাডম্যান চ্যালেঞ্জ’ গ্রহণ করে সে সময় সবাই সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি নিজেদের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরছেন। কথা বলেছেন পিরিয়ড নিয়ে। কেঊ কেউ বিরোধীতা করেছেন এই গোপনীয়তা ও ফিসফাসের। তবে তাদের সকলের কথা একটাই, পিরিয়ড মানব শরীরের আর দশটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মতোই একটি। এটা কোনোভাবেই নিষিদ্ধ বিষয় বা ‘ট্যাবু’ আখ্যা দিয়ে কুসংস্কার, লজ্জা, ও পুরুষতন্ত্রের চাদরে ঢেকে আড়াল করে রাখার বিষয় নয়।
বলতে গেলে সারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটেই মাসিক ও প্রজনন-স্বাস্থ্যের মতো স্বাভাবিক একটা ব্যাপারকে এতটা স্পর্শকাতর করে তোলার জন্য একমাত্র দায়ী, বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনার ব্যাপারে নিরুৎসাহ করার প্রবণতা। তবে পিরিয়ড নিয়ে এখন আমাদের দেশে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ভয়, লজ্জা-শরম, সংকোচ একেবারে চলে গেছে, তা বলার উপায় বা সময় এখনো আসেনি।