কনে যাত্রী বিয়ে করতে গেল বরের বাড়ি!
বিয়ের অনুষ্ঠানে কনের বাড়িতে আগে যান বরযাত্রী। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রচলিত এই নিয়ম ভেঙে হলো ব্যতিক্রম বিয়ে। বরের বাড়িতে কনে যাত্রী হাজির হলেন বরকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে। বিষয়টি অবাক হওয়ার মতো হলেও শনিবার এমন ঘটনা ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার চৌগাছা গ্রামে। অবশ্য এ বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মুখরোচক গল্প শোনা গেলেও বিষয়টিকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন।
কনে চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী এবং বর গাংনী উপজেলার চৌগাছার কমরেড আব্দুল মাবুদের ছেলে তরিকুল ইসলাম জয় একজন ব্যবসায়ী।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার দুপুরে ৭টি মাইক্রোবাস ও ৩০টি মোটরসাইকেল বহর নিয়ে কনে এসে নামেন বরের বাড়ির গেটের সামনে। বিয়ের বহর গেটের কাছে আসতেই অন্যরকম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বাড়ির গেটের সামনে মাইক্রোবাস থেকে নামলেন লাল বেনারসি শাড়িপরা কনে। এ সময় কনেকে ফুল ও মিষ্টি মুখ করিয়ে বরণ করে নেন বরপক্ষ।
এরপর শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। ইসলামি শরীয়াহ অনুযায়ী একজন মওলানা তাদের দু’জনকে কবুল পড়ান। প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করান স্থানীয় কাজি। এরপরে বরপক্ষের দাওয়াতী আত্মীয়স্বজন ও কনে যাত্রীদের ভূড়িভোজ করানো হয়।
বিকেলে বর তরিকুল ইসলাম জয়কে নিয়ে কনে খাদিজা আক্তার খুশি চলে যান তার বাবার বাড়িতে। সেখানে কয়েকদিন কাটানোর পর কনেকে সাথে নিয়ে বর ফিরে আসবেন নিজের বাড়িতে।
নিজের বিয়ের এমন আয়োজন সম্পর্কে কনে খাদিজা আক্তার খুশি বলেন, নারী-পুরুষের সমানাধিকার হিসেবে একজন মেয়ে একজন ছেলেকে বিয়ে করতে তার বাড়িতে যেতে পারেন, তা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সেই বাধার বৃত্ত ভেঙে আমরা শুরু করেছি। আশা করছি, আরো অনেকেই এখন এটি করবেন।
বিয়ের আয়োজন প্রসঙ্গে বরের বাবা কমরেড আব্দুল মাবুদ বলেন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার আছে। মুখে আমরা বললেও তা বাস্তবায়ন করছি কতটুকু? তাই আমি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি সামনে আনতে চেয়েছি।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য আব্দুল মাবুদ ওই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, নারী-পুরুষের যে বৈষম্য আমাদের সমাজে রয়েছে সেটা দূর হবে যদি এমনভাবে বিয়ে হয়। তাছাড়া বিয়ে বাড়িতে এতদিন যে কনেপক্ষের একটা বিশাল খরচ হয়ে আসত সেটা দূর হবে। আগেকার বিয়ের রীতি ভেঙে এখানে যে ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে তাকে আমি সাধুবাদ জানাই।