Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জরায়ু ক্যান্সার ও প্রতিকার

পৃথিবীব্যাপী নারীরা যেসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তার এক-চতুর্থাংশই জরায়ু ক্যান্সার। ক্রমেই বাড়ছে এই ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক নারী এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। বাংলাদেশে যতনারী ক্যান্সারে মারা যায় তার ৩০ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীকে যদি প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা করানো যায় তবে সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৯৫ ভাগ।

জরায়ু ক্যান্সার ও প্রতিকার
জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার আগেও ৪টি ধাপ থাকে। আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী সচেতন নয় বলে তারা সহজে সমস্যাগুলো আলোচনা করতে চায় না। যখন কোনো নারীর জরায়ুর মুখে ক্যান্সারের পূর্বাবস্থায় চিকিৎসার জন্য যায়, তখন চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা সম্ভব। পরীক্ষায় নিশ্চিত করা গেলেই চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই চিকিৎসায় জরায়ু কেটে ফেলার দরকার পড়ে না। কিন্তু চিকিৎসার জন্য না গেলে ক্যান্সার পূর্বাবস্থায় ১০ থেকে ২০ বছর সাইলেন্ট অবস্থায় থাকার পর ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। জরায়ু ক্যান্সার লাসিকা ও রক্তের মাধ্যমে লিভার ফুসফুস ও মস্তিষ্কে দ্রুত ছড়ায়। জরায়ু ক্যান্সারকে সাইলেন্ট কিলার বলা হয়।  

জরায়ু ক্যান্সার ও প্রতিকার

জরায়ু ক্যান্সারের কারণ 
১. অল্প বয়সে বিয়ে বা যৌনমিলন হলে; 
২. অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণ ও মা হলে; 
৩. অধিক সন্তান; 
৪. বহুগামিতা; 
৬. জরায়ুতে ভাইরাস আক্রমণ থেকে (হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস বা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস)।  
লক্ষণ
১. অনিয়মিত মাসিক;
২. তলপেটে চাপ চাপ বোধ হওয়া; 
৩. মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও। 
রক্ত প্র ব; 
৪. বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য;
৫. খাওয়ার পর পেটে অস্বস্তি; 
৬. রক্ত ও বাদামি দুর্গন্ধযুক্ত ¯্রাব; 
৭. তলপেটে তীব্রব্যথা বমিভাব; 
৮. খিদে কমে যাওয়া ও ক্লান্তি লাগা; 
৯. অতিরিক্ত ওজন বাড়া বা কমা; 
১০. যৌনমিলনের সময় ব্যথা ও রক্ত¯্রাব।

প্রতিরোধ

টিকা দিয়ে জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। সাধারণত ১২-১৫ বছরের মেয়েদের এই টিকা দেওয়ার কথা বলা হলেও ৩০ বছর পর্যন্ত অবিবাহিত মেয়েদের এই টিকা হয়। তবে ক্যান্সার প্রতিরোধ বলতে মূলত সচেতনতা। প্রত্যেক নারীর বয়স ৩০-এর বেশি হলে ৩ বছর পর পর জরায়ু মুখের পরীক্ষা করানো উচিত। কোনো সন্দেহ বা লক্ষণ দেখা দিলে যে-কোনো বয়সের নারীর উচিত আগেভাগেই পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া। 

জরায়ু ক্যান্সার ও প্রতিকার

চিকিৎসা
প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে জরায়ু কেটে বাদ দেওয়ার দরকার পড়ে না। জরায়ু মুখের ক্যান্সার হওয়ার পূর্বাবস্থায় ৪টি ধাপ থাকে। প্রথম ৩টি ধাপে রোগী পরীক্ষা না করলে বুঝতেই পারে না, তার শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। যখন বুঝতে শুরু করে ততদিনে  দেরি হয়ে রোগ ছড়িয়ে যায়। তখন চিকিৎসার আর সময় থাকে না। শুধুমাত্র কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাটি দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। 

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ
জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালের গাইনি অনক্লোজিস্ট প্রফেসর ডা. শিরিন আক্তার বেগম জানান, আমাদের দেশের নারীরা সচেতনার অভাবে জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসেন না। যখন আসেন তখন কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি ছাড়া আর তেমন কিছু করার থাকে না। তাতে হয়ত ক্যান্সার সেরে যায়; কিন্তু রোগীরা চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগে। অথচ ৩ বছর পর পর বিনামূল্যের ভায়া পরীক্ষা করলে আগেই নিশ্চিত হওয়া যায় তার ক্যান্সারের পূর্বাবস্থা আছে কিনা। যাদের ক্যান্সারের পূর্বাবস্থা ধরা পড়ে তাদের চিকিৎসা দিয়ে সহজে সারিয়ে তোলা সম্ভব। তারজন্য অধিকাংশ সময় জরায়ু কেটে বাদ দেওয়ারও দরকার পড়ে না। 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ