মাটির ঘরে ভাতমাছ
থাকার জন্য নয়, বাহারি দেশি খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে চলে যেতে পারেন এই ‘মাটির ঘর’ রেস্তোরাঁয়। শহরের খুব কাছেই একবেলার অবকাশে ঘুরে আসা আর খাওয়া সেরে নেওয়ার জন্য ‘মাটির ঘর’ হতে পারে আদর্শ স্থান। রেস্তোরাঁটি সাজাতে প্রকৃতি থেকে প্রদত্ত সম্পদের অকৃত্রিম ব্যবহার চোখ জুড়িয়ে দেয়। মাটির দেয়ালে বানানো ‘মাটির ঘর’র খাবারের টেবিল বানানো হয়েছে লম্বালম্বি মোটাগাছ চিড়ে, যার চেয়ারগুলো আস্ত ‘লগ’ বা গাছের গুঁড়ির।
বেড়ার ফটক দিয়ে ঢুকেই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়বে কাঁচামাটির উঠানে গাছের ডালে ঝোলানো রয়েছে দড়ির তৈরি দোলনা-বিছানা। পাশেই কাঠ আর গুঁড়ি দিয়ে বসার ব্যবস্থা। বেশ একটা আয়েশি আড্ডার পরিবেশ। মন নেচে উঠলেও সংকোচ জাগে, ‘মাটির ঘর’য়ে এসে কি তবে অন্য কারও উঠানে ঢুকে পড়লাম নাতো!
কাঠের চেয়ার টেবিল বসার ব্যবস্থা। মাথার উপরে ঘুরছে ছোট ছোট ফ্যান। মাটির ছোট কলসির মতো পাত্রে খাবার পানি। পানও করতে হবে মাটির গ্লাসে। খাবার আসবে মাটির পাত্রে। খাবেনও মাটির পাত্রে।
পেটে যদি ‘ছুঁচোর নাচন’ নিয়ে খেতে বসেন, তবে নিশ্চিত থাকেন ‘হাতি পেট’ নিয়ে বের হয়ে আসবেন। খুদের ভাতের চচ্চড়ি কিংবা অন্য কোনো দেশি চালের ভাত। সঙ্গে চার-পাঁচ রকমের ভর্তা-ভাজি। আর মুরগির মাংস ও মাছের রসা। বেশিরভাগ খাবারের দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
পৈতৃক-ভিটেমাটিতেই এই রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছেন বিপ্লব। প্রথমে এই ধরনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না তার। নিজে থাকার পাশাপাশি, এলাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে এই মাটির ঘর তৈরি শুরু করেন। আর চারুকলার বন্ধু মাফি’র ইচ্ছা ছিল এখানে করবেন আর্ট স্কুল।
তবে এসব করতে দরকার অর্থকড়ি। আর এই এলাকায় রেস্তোরাঁ-ব্যবসা অর্থ জোগাড়ের সুবিধাজনক কাজ হিসেবে মনে হয়েছে বিপ্লবের কাছে। শুধু রেস্তোরাঁ নয়, এখানে ধীরে ধীরে অনেক কিছুই গড়ে তোলা হবে। আর্ট স্কুল হবে। এলাকার সংস্কৃতি, কৃষ্টি আর ঐতিহ্য সংরক্ষণ করার ইচ্ছে আছে আমার। রেস্তোরাঁ থেকে যা আয় হবে সেটা জমিয়েই এসব করবো। তাই তো ফিরে এসেছি। নিজের ঘরে। ইচ্ছে করলেই শহরে থাকতে পারতাম। এমনটাই জানালেন বিপ্লব।
ঢাকার তিনশ ফিটের শেষ মাথায় গিয়ে হাতের বামে ‘ঢাকা সিটি বাইপাস’ রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হবে কালীগঞ্জের দিকে। পাঞ্জোরা পৌঁছালেই পেয়ে যাবেন ‘মাটির ঘর’। আর গুগল ম্যাপ ধরে এগোলে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে।