সবাই ভালো থাকুক, নারীকে ভালো রেখে
দিনাজপুরের মেয়ে ইয়াসমিনের কথা মনে আছে, প্রিয় পাঠক? ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট ইয়াসমিন পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। টানা তিনবছর ঢাকায় পরিচারিকার কাজ করতে করতে কিশোরী ইয়াসমিনের মন উতলা হয়ে উঠেছিল মায়ের জন্য। এজন্য ১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট কাউকে কিছু না জানিয়ে একাই দিনাজপুরের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল সে। কিন্তু ভুল করে সে উঠে পড়েছিল ঠাকুরগাঁওগামী নৈশকোচে। বাসটি রাত তিনটার পর দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-রংপুরের সংযোগ মোড়ে নামিয়ে দেয় তাকে। আর সে-সময় স্থানীয় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ইয়াসমিনকে তুলে নেয় দিনাজপুরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। তারপর সেই বিপথগামী পুলিশ সদস্যরা ইয়াসমিনকে ধর্ষণ করে এবং পরে হত্যা করে।
বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি দিনাজপুরবাসী। ২৭ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা শহরে একটি বিশাল মিছিল বের করলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সাতজন, আহত হয় শতাধিক মানুষ। জারি হয় ১৪৪ ধারা, কার্ফিউ। এরপরই ইয়াসমিন হত্যার আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় তৎকালীন সরকার।
দুই যুগ পর ইয়াসমিনের ঘটনাটি এভাবে অনুপুঙ্খ স্মরণ করছি এজন্য যে, এক ইয়াসমিনের জন্য দিনাজপুরসহ সারাদেশ তখন বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল; কিন্তু এখন শত ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হলেও সংশপ্তকের মতো নিরন্তর প্রতিবাদের পথে হাঁটছে না কেউ। সাধারণ পুরুষ-সমাজ তো বটেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু নীতিহীন সদস্যের হাতে আজো নিরাপদ নয় আমাদের নারী-সমাজ। চট্টগ্রামে এক নারীকে ধর্ষণের পর তাকে ইয়াবার মামলায় ফাঁসিয়েছে পুলিশ। পরবর্তীসময়ে আদালতের নির্দেশে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। স€úত্তির ভাগ না দিতে ওই নারীকে ধর্ষণের পর ইয়াবাসহ পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় এক নারীকে দুইদিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। পত্রিকার পাতা খুললেই প্রায়শই এ-ধরনের সংবাদ দেখতে পাওয়া যায়। বহুল আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশের অত্যন্ত নিন্দিত ভূমিকার কথা তো সবারই জানা। বরগুনার মিন্নির ব্যাপারেও পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়তন ও উন্নয়নে যথেষ্ট সচেতন। তারপরও গত পাঁচবছরে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা এবং ধর্ষণজনিত হত্যার শিকার হয়েছে অন্তত ৪ হাজার নারী ও শিশু। সুতরাং সরকারের সামনে বড় ও বহুমাত্রিক এক চ্যালেঞ্জের নাম নারী ও শিশু নির্যাতন। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে চায়। মনে রাখতে হবে, এসডিজির পঞ্চম লক্ষ্য, নারী ও কন্যাশিশুর সমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়ন।
২০৩০ কিন্তু খুব বেশি দূরে নয়। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হলো, এবার শক্তহাতে দমন করা হোক এসব অপরাধীদের। মনে রাখতে হবে, নারী ভালো না থাকলে সমাজ ভালো থাকবে না, রাষ্ট্র হবে না উন্নত।
সুতরাং সবাই ভালো থাকুক নারীকে ভালো রেখে।