Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবাই তো নারীদের অবমূল্যায়ন করে না, কিন্তু জরিপ বলছে ভিন্ন কথা।

অনেকেই বলে, নারীদের সাথে কে কেমন আচরণ করবে, সেটা নির্ভর করে ব্যক্তি-বিশেষে। অর্থ্যাৎ, সবাই তো নারীদের অবমূল্যায়ন করে না। সবাই নারীর ওপর বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি রাখে না। নারীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো কাজ সবাই কর না বলে দাবি করে সমাজ। কিন্তু জরিপ বলছে ভিন্ন কথা।

হয়রানি ও হানিকর মন্তব্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এক জরিপে দেখা গেছে:

৬৮ ভাগ মানুষ মনে করে শিক্ষিত, স্বাধীনচেতা ও সামাজিক প্রথাসিদ্ধ নিয়ম মেনে না চলা নারীদের হয়রানি ও হানিকর মন্তব্য শোনা প্রাপ্য। এর মানে হলো, নারীরা শিক্ষিত হলে তাদের কটূ কথা শুনতেই হবে। স্বাধীনচেতা হলে তো কথাই নেই। স্বাধীন মেয়েরা আমাদের দেশে জাতির শত্রু হিসেবে বিবেচিত। হয়রানি আর হানিকর মন্তব্য অনেকের কাছে সার্কাজমের মতো। নারীকে আঘাত করে করা মন্তব্যে নারী যদি অপমানিত বোধ করে, তাহলে সেই নারীর নাকি রসবোধ নাই। অনেকেই মনে করে, নারীরা কমেডি বোঝে না। নারীরা রম্য রচনা পারে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।

ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জরিপে দেখা গেছে:

৫৩ ভাগ মানুষ মনে করে, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার জন্য দায়ী নারী নিজেই। এটা নিয়ে আর ব্যখ্যা করা তেমন কী-ই-বা আছে, একটা ধর্ষণের পর সেই নারীর চরিত্র, পোশাক এবং আনুষঙ্গিক নানা বিষয় নিয়ে কথার ঝড় কি ওঠে না? কদিন আগে এক আত্মহত্যার কাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব ভাইরাল হয়েছিল। এক দশম শ্রেণিতে পড়া কিশোরী ছয়তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

এমন অল্প বয়সী মেয়ে আত্মহত্যা করার জন্য তার মা-বাবাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মা বলেন, ঘটনার দিন নাকি মা আর মেয়ের মধ্য মেয়ের পোশাক নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। মেয়েটা জিন্স আর টি-শার্ট পড়তে চেয়েছে, কিন্তু মা মানা করেছে। এলাকাবাসীদেরও জিজ্ঞেস করা হয়েছে। এই বিষয়টিতে এলাকাবাসী মন্তব্য করেছে, অনেকটা এই ভাবে, ‘এই মেয়েটা স্বাধীনতা চাইত উল্টাপাল্টা পোশাক পরার। মা-বাবা মেয়ের এমন উশৃংখলতা মেনে নিতে পারেনি, তাই বারবার মেয়েটাকে এ-ভাবে চলতে নিষেধ করত।

‘ কিন্তু মেয়েটি তার মৃত্যুর আগে যেটা লিখে গেছে, সেটা হলো, তিন বছর ধরে মেয়েটা ভাবছিল সে আত্মহত্যা করবে! এ-রকম কত কত খুন আর ধর্ষণের ঘটনা আছে, যেখানে ধর্ষিতা নারীকে খুন করার পরও তার চরিত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া করা হয়েছিল।

মাঝে-মধ্যে মানুষের বিবেকবোধ এতটাই সজাগ হয়ে ওঠে যে, তারা একজন অপরাধীর প্রতিও সহানুভূতিশীল হয়ে যায়! এর কারণ আরো একটা হতে পারে যে, অপরাধীটি পুরুষ এবং প্রভাবশালী। আর নারীদের একটু নাকানি-চুবানি খেতে দেখতে পারাটাও একতা নির্মল আনন্দ বলে মনে হয় সমাজের- তাই নয় কি?

যা-ই হোক, মানুষের কথাগুলোও যখন শুনি, সব পুরুষ এমন হয় না, সব মানুষ এমন হয় না। তখন প্রথম দিকে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়। আসলেই হয়তো পৃথিবীটা এমন। হয়তো নারীদের জন্য কথা বলার দরকার নেই, নারীদের নিয়ে ভাবার দরকার নেই। কোনো নারীকে তার কাজ করার জন্য কোনো সুবিধা দেওয়ার কোনো দরকার নেই। কিন্তু পদে পদে আমি যখন আমার চারপাশে এত এত বাধা দেখি, তখন আমার মনে হয় সেই মানুষেদের কথা, যারা একদা বলেছিল,

‘এত যে নারী-পুরুষ, নারী-পুরুষ করেন, নারীরা তো পুরুষের চাইতে বেশি সুখে আছে। বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পৃথিবীতে বসবাস করছে।’

অনন্যা/ এম টি

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ