লিঙ্গবৈষম্য: নারীর প্রতি অবিচার
আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ যেন প্রথায় পরিণত হয়েছে। নারীকে তার সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। শৈশব থেকেই নারীকে নারী হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। তাকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে আজও দেখা হয় না বললেই চলে। কিন্তু নারীর প্রতি এ ধরনের অবিচারের কী কোনোদিন কোনোই সুরাহা হবে না?
নারী-পুরুষ লিঙ্গভেদে দুজন মানুষ কিন্তু এই শ্রেণির জীবনযাপন এবং চালচলনের ওপর রয়েছে অনেক ফারাক। পুরুষকে যতটা উন্মুক্তভাবে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করা হয়, নারীকে করা হয় ঠিক ততটাই অবরুদ্ধ। নারীর ক্ষেত্রে যেগুলো বাধা পুরুষের ক্ষেত্রে সেগুলোই বাহাদুরি,বাদশাহী কর্মকাণ্ড। কিন্তু সমাজে নারী-পুরুষের এই চলার নিয়ম-নীতি কারা তৈরি করেছে? কারা নারীকে অবরুদ্ধ করে, শোষণ করে পৈশাচিক আনন্দ ভোগ করে। নারীকে কেন তার মতো করে মেনে নেওয়ার মানসিকতার এত ঘাটতি আমাদের? মানুষ হিসেবে কেন নারীর পরিপূর্ণ সত্তায় আমরা বিশ্বাস করি না?
কন্যাশিশু জন্মগ্রহণ করলে বেশিরভাগ পরিবারের চিত্র এবং চিন্তাধারার সত্যিকার চিত্রটা আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। একটি পরিবারে কন্যাশিশু জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মা এবং আত্মীয়স্বজনদের নানারকম মন্তব্যের শিকার হতে হয় অবুঝ শিশুটিকে। যে বোঝেও পৃথিবীতে তার আগমণ একশ্রেণির মানুষ খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যে, ভালোবেসে গ্রহণ করে না। এমনকি নিজে নারী হয়েও কন্যা শিশুর জন্মে মুখভার হয়। এক্ষেত্রে কন্যাশিশুটিকে অনেকটা বেশি বৈষম্যের শিকার হতে হয় যদি ওই পরিবারের আগের সন্তানটিও কন্যা শিশু হয়ে থাকে। সমাজের বদ্ধমূল ধারণা আটকে আছে, সভ্য আলোর বাইরের জগতে। যেখানে নারীর মূল্যায়ন কাজে-কর্মে-যোগ্যতা-দক্ষতায় নয় লিঙ্গে।
পরিবার থেকেই যে কন্যা শিশু বৈষম্যের শিকার তার মানসিকতায় এই ছাপ ধীরে ধীরে গেঁথে যায়। নিজেকে সবক্ষেত্রে ছোট ভাবতে শুরু করে। আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে। কারণ তাকে শেখানোই হয় পুরুষ যা পারে নারী তা কখনোই পারে না।
পরিবার থেকেই যে কন্যা শিশু বৈষম্যের শিকার তার মানসিকতায় এই ছাপ ধীরে ধীরে গেঁথে যায়। নিজেকে সবক্ষেত্রে ছোট ভাবতে শুরু করে। আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে। কারণ তাকে শেখানোই হয় পুরুষ যা পারে নারী তা কখনোই পারে না। এমনকি নারীর ক্ষেত্রে ভালো টিউশন থেকে শুরু করে শিক্ষার ব্যাপারেও উদাসীন অনেক বাবা-মা। কারণ তাদের যুক্তি গিয়ে ঠেকে কন্যা সন্তান তো পরের আমানত ফলে তার পেছনে টাকা ঢেলে কী লাভ?
নারীর প্রতি এ ধরনের অবিচারের কি কোনো অর্থ আছে আদৌ? বর্তমান সমাজের দিকে লক্ষ করলে আজকেও যে পরিবারের সদস্যরা এ ধরনের মানসিকতা পোষণ করছেন তারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন। আজকের নারীরা আগামী দিনের জাতির ভবিষ্যৎ। কারণ বহু আগে নেপোলিয়ন বোনাপোর্ট বলে গেছেন, ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেবো।’ নারী সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলেই তো জাতির উন্নতি হবে। কন্যাশিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাই পরিবারগুলোর সহযোগিতা বিশেষ প্রয়োজন। কন্যা শিশু জন্মালেই ভবিষ্যতে পরিবারের ভার, বাবা- মায়ের ভার কে নেবে এসব না ভেবে তাই সন্তানের সঠিক পরিচর্যা জরুরি।
মাতৃক্রোড় থেকেই নারীর প্রতি বিদ্বেষ কমাতে হবে। নারীরাও বর্তমানে বিশ্বে সাড়া জাগাচ্ছে বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের ঐকান্তিক সহযোগিতায় একটি সুস্থ সমাজ গড়ে উঠবে। তাই নিজ যোগ্যতা ও মেধার পরিচয়ই হয়ে উঠুক মানুষের প্রকৃত পরিচয়। গড়ে উঠুক শোষণহীন, লিঙ্গ বৈষম্যহীন সুন্দর সমাজ। তাহলেই আগামীর মুক্তি মিলবে।
অনন্যা/এআই