Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর সামাজিক নেতৃত্বের পথে যত বাধা

পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে পরিবারের প্রধান কর্তা হয় পুরুষরা। পরিবারের ভালো-মন্দ তাই পুরুষের ওপরই নির্ভর করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেখানে নারীর মতের তোয়াক্কা করা হয় না। পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক ক্ষেত্র; যেকোনো পর্যায়ে নারীকে নেতৃত্বের পথে নানারকম বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। নারীর মতকে গ্রহণ করা হয় না। তাই তাদের নেতৃত্বের পথেও বাধা দেখা যায়

নারী-পুরুষ মেধা-মননে সমান। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীকে সবসময় দুর্বল ভাবা হয়। নারীর মত-পথের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সামাজিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কখনোই নারীর সিদ্ধান্তের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় না। একটি গ্রামে বা মহল্লায় কোনো ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে মোল্লা-মাতবর বা সমাজের উচ্চ পর্যায়ের কোনো পুরুষ থাকে কিন্তু নারীকে এ ধরনের সামাজিক কার্যক্রমে দেখা যায় না।

এলাকার উন্নয়ন থেকে শুরু করে সর্বত্রই পুরুষদের কর্তৃত্ব লক্ষণীয়। এমনকি যেখানে প্রাথমিক স্কুল, কলেজগুলোতে স্থানীয় প্রতিনিধি ও ম্যানিজিং কমিটি গঠন করা হয়, সেখানেও নারীদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। নারীরা পরিবারের বাইরে গিয়ে এ ধরনের সামাজিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হলেও পুরুষতন্ত্রের জটাজালে নারীরা ঘরমুখো।

শহরাঞ্চলে নারীরা অনেকটা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও গ্রামাঞ্চলে নারীরা এখনো ঘরবন্দি। বেশিরভাগ মানুষের চিন্তাধারারই এখনো কুসংস্কারাচ্ছন্ন, রক্ষণশীলতায় আচ্ছন্ন। ফলে নারীর নেতৃত্ব অনেকেই মেনে নিতে নারাজ। ফলস্বরূপ নারীরা সামাজিক কার্যক্রমে পিছিয়ে আছে।

পরিবারের বাবা-ভাই-স্বামীর ওপর নির্ভরশীল জীবনযাপন করে নারীর শক্ত মেরুদণ্ড গঠন করা কষ্টসাধ্য। কারণ একজন ব্যক্তি তখনই সমস্যার মোকাবিলা করতে সক্ষম, যখন তিনি সমস্যার ভেতর জীবন যাপন করবেন। বাইরের থেকে বলে বোঝানোর চেয়ে নিজে ঠেকে-ঠকে শিখলে নারীর অভিজ্ঞতা বাড়বে। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।

কিন্তু সর্বত্রই দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা নারীকে ছাপোষা জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তোলে। ফলে নারীও পরনির্ভরশীল হয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়। কখনো বাবা-ভাইয়ের হাত ধরে, কখনো বা স্বামী-ছেলের হাত ধরে। এই চলাই তাকে পঙ্গু করে তোলে। নিজের সত্তাকে চিনতে বাধাগ্রস্ত করে। আর নারীর এমন জীবনযাপনের জন্য পরিবার-সমাজ যতটা দায়ী, নারী নিজেও ঠিক ততটাই দায়ী। কারণ ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। তাই শোচনীয় জীবনযাপন করে, আজীবন পুরুষের দাসত্ব করে নিজের মেধা-মননকে গলাটিপে হত্যা করার কোনোই মানে হয় না।

কেউ কাউকে জায়গা ছেড়ে দেয় না। আর নারীদের জন্য এ পথ আরও কঠিন। তাই নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করতে হলে নারীকে অপারাজেয় হতে হবে। পুরুষতন্ত্রের তালে তাল মিলিয়ে যদি নারীকে সামজিকভাবে হেনস্তা করা হয়, নারীর যোগ্য অধিকার তাকে না দেওয়া হয় এবং সর্বোপরি নারীকে নেতৃত্ব দানে সক্ষম করে তোলা না যায়, সেটা সমাজ ও রাষ্ট্রেরও দায়।

বর্তমানে রাজনীতির ময়দানে পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণ বেশি নয়। বরং নারীদের জন্য রাখা হয় সংরক্ষিত আসন। নারী তার যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম হলেও তাকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিপর্যস্ত হতে হয়। অশিক্ষা, সংস্কৃতির অভাব সেইসঙ্গে সঠিক বোধের অভাব নারীকে যোগ্য আসনে অধিষ্ঠিত হতে দেয় না। সামাজিকভাবে নারীর নেতৃত্ব গ্রহণ করা হয় না। না পরিবারে, না সামজিক কোনো রীতিনীতি বা কোনো শালিসি আসরে।

নারীর প্রতি সম্মান বোধের অভাবের ফলেই বর্তমান যুগে এসেও সামাজিকভাবে নেতৃত্বের জায়গায় তারা নেই। নারীকে বেড়ে উঠতে দেওয়া হয় না। নারীর মতকে গ্রহণ করা হয় না। তাই পুরুষতন্ত্রের জয়ডঙ্কার তলে চাপা পড়ে নারীর যোগ্যতা-দক্ষতা। সর্বোপরি নারীর সামাজিক নেতৃত্বও। পুঁজিবাদী সমাজব্যস্থায় নারী হয়ে উঠেছে পণ্য! কিন্তু নারীর অনবদমিত শক্তিকে জাগ্রত করে নারীর নেতৃত্ব খুব একটা চোখে পড়ে না।

ডিজিটালাইজেশনের যুগে সবকিছুর যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটেছে। নারীরা আগের চেয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে বেশি অগ্রসর। স্বনির্ভরতা বাড়ছে। কিন্তু সামাজিকভাবে নেতৃত্বের অভাব আজও। নারীর মতকে গ্রহণ করা হয় না। এমনকি সামাজিক উন্নয়নেও নারী পিছিয়ে আছে। এখনই সময় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীকে সামাজিকভাবে নেতৃত্ব দানে সহোযোগিতা করা। স্কুল কমিটি, কলেজ কমিটি, সামাজিক শালিস, সামাজিকভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণকাজে নারীর পরামর্শ, সহোযোগিতা গ্রহণ করা।

এককথায় নারীকেও সুশীল সমাজের সচেতন একজন নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করা। নারীর নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা আছে; এটা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে তাকে সামাজিক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে। তবেই চেতনার পরিবর্তন ঘটবে। একইসঙ্গে দেশ-দশেরও কল্যাণ হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ