Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হার্ট অ্যাটাকের পূর্ণ লক্ষণ জেনে নিন

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বলিউড চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজ কৌশল গত বছরের ৩০ জুন নিজ বাসায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে ৪৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। ওই একই বছর ইউরো ফুটবল টুর্নামেন্টে ২৯ বছর বয়সী ডেনিশ তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন খেলার মাঠেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লা শারীরিকভাবে পুরোপুরি ফিট থাকার পরেও তার মৃত্যুর কারণ ছিল হৃদরোগ। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৪০।

শুধু সিদ্ধার্থই নন, মির্জাপুর সিনেমার অভিনেতা ব্রামহা মিশরাও মাত্র ৩৬ বছর বয়সেই মারা যান হৃদরোগজনিত কারণে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (WHO) তথ্য মতে, সারা পৃথিবীতে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে হৃদরোগ প্রথম স্থান দখল করে আছে।

সম্প্রতি হৃদরোগ সমস্যায় ওপাড়ে পাড়ি জমালেন ভারতের বিখ্যাত গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নথ। বুধবার (১ জুন) মঞ্চ থেকে সোজা চলে যান গ্র্যান্ড হোটেলে। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে কে কে-এর শেষ মুহূর্তগুলো। লবি দিয়ে হাঁটছেন তিনি। তার পরেই ঢুকে যান নিজের ঘরে। সোফায় বসতে যান। কিন্তু পারেননি। পড়ে যান নিচে। তারপর আর কোনো জ্ঞান ছিল না। তখনই হয়তো পাড়ি দেন অজানার দেশে।

কৃষ্ণকুমার কুন্নথ

এসএসকেএম হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয় কৃষ্ণকুমার কুন্নথের। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, মৃত্যুতে কোনো সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েনি। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টই মৃত্যুর কারণ। মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনেই মৃত্যু হয়েছে এই বিখ্যাত সংগীতশিল্পীর। দীর্ঘদিন ধরেই হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল তার। এমন ঘটনা বর্তমানে প্রায়ই ঘটছে। চলুন জেনে নেই কার্ডিয়াক সমস্যার লক্ষণ এবং এই সমস্যা থেকে বাঁচতে আমাদের কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহ

হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পূর্বে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। রোগীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। এ বিষয়ে ধারণা থাকলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।

হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পূর্বে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়
  • হার্ট অ্যাটাকের প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা। বুকের মাঝখানে ও বাম পাশে ব্যথা অনুভূত হয় এবং ধীরে ধীরে এর তীব্রতা বাড়তে থাকে। রোগীর মনে হতে পারে তার বুকের ওপর কোনো কিছু চাপ দিয়ে রাখা হয়েছে। আবার এমনও মনে হতে পারে যে, বুকের মাঝে কিছু একটা আটকে আছে। এই ব্যথা একটানা বা কিছুক্ষণ পরপর থেমে থেমে অনুভূত হয়।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। বুকে ব্যথার পাশাপাশি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। বুকের ব্যথা ছাড়াও এককভাবে এমনটি হতে পারে।
  • দেহের ওপরের অংশে (নাভীর ওপর থেকে) চোয়াল, হাত ও ঘাড়ে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
  • মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং বদহজম দেখা দিতে পারে।
  • শীতের মধ্যেও অনবরত ঘামতে থাকা, চোখে ঝাপসা দেখা, দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি নিয়মিত লক্ষণের মাঝে পড়ে।

রোগীর মাঝে এসব লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে এবং ভর্তি পূর্ববর্তী কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, কম বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যাপনভঙ্গি

হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে এর প্রতিকার সম্পর্কে জানা জরুরি, কী করে হৃদরোগের প্রতিকার করা সম্ভব বা তা থেকে বাঁচার উপায় তাও জানতে হবে।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, কম বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যাপনভঙ্গি। এই যাপনভঙ্গি পরিবর্তন না করলে কমবয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সংখ্যা তুঙ্গে উঠবে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। পুরো বিশ্বজুড়েই দেখা যাবে এই সমস্যা। তবে বিশ্বের প্রতি চারটি মৃত্যুর মধ্যে ভারতে হবে একটি। এই বিষয় নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে অনেকের মাঝে। এতে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছে বেঙ্গালুরুর ‘জয়দেব ইন্সটিটিউট অব কার্ডিওভাস্কুলার সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ’। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে দেশটির আরও কিছু হাসপাতাল।

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবার খান

পি.ডি হিন্দুজা হসপিটাল অ্যান্ড এমআরসি’র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. আমেয়া উদয়ভার দুটি সতর্কতামূলক লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলেছেন। একটি লক্ষণ হলো অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং আরেকটি হলো একটানা বুকে ব্যথা। তার মতে, যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়েন, তাহলে এটি হার্টবিট সম্পর্কিত সতর্কতামূলক লক্ষণ হতে পারে।

অ্যাডাল্ট কার্ডিওথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জারি, ফোর্টিস এসকর্টস হার্ট ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর ডা. ঋত্বিক রাজ ভুইয়ানের মতে, পারিবারিক ইতিহাস ও জেনেটিক বৈশিষ্ট্যই হৃদরোগের ক্ষেত্রে প্রধান ও নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিয়ন্ত্রণযোগ্য কারণেই মানুষ আজকাল হৃদরোগে আক্রান্ত হন বেশি। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত ওজন।

হার্টকে সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি শারীরিক ক্রিয়াকলাপ খুবই জরুরি

এছাড়াও নিয়মিত আপনার ওজন পরীক্ষা করতে থাকুন এবং অযথা বাড়তে দেবেন না, যারা স্থূলকায় তারা নিয়মিত ব্যায়ামের দিকে মনোযোগ দিন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবার খান, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে লবণ খাওয়া কমিয়ে দিন, বেশি কফিও রক্তচাপ বাড়ায় যা হার্টের জন্য ভালো নয়, ডায়াবেটিক রোগীদের হৃদরোগের প্রবণতা বেশি, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না, হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় হৃৎস্পন্দনে অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করান, যতদূর সম্ভব তৈলাক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।

আবার হার্টকে সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি শারীরিক ক্রিয়াকলাপ খুবই জরুরি, অন্যথায় আপনার শরীরের চর্বি সহজে কমে না এবং ফোলা বাড়তে শুরু করে। সিগারেট অ্যালকোহল থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন কিছু খারাপ অভ্যাস আছে যা আমাদের স্বাস্থ্য নষ্ট করে। বেশিরভাগ যুবক সিগারেট এবং মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছে, যার কারণে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের ওপর খুব খারাপ প্রভাব পড়ছে। এসব থেকে যত তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবেন ততই ভালো।

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ