Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিদ্ধান্ত যাই হোক, হোক নারীর নিজের

প্রচলিত  সামাজিক প্যারেন্টিং অনুযায়ী, ছেলে-মেয়েকে বড় করে তোলার দীর্ঘ পথে কিছু ভাগাভাগি পূর্বনির্ধারিত করা আছে। যেমন ছেলে মানে নীল, ছেলেদের রাগ হবে বেশি, ছেলেরা রান্না ঘরে যাবে না, ছেলেদের গলার আওয়াজ হবে জোরালো, ছেলেদের আউটগোয়িং হতে হবে ইত্যাদি। অন্যদিকে মেয়েদের হতে হবে ধৈর্যশীল, আত্মত্যাগী। মাতৃত্ব আর কারও সহধর্মিণী হওয়াই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, মুখে মুখে কথা বলা যাবে না, গলার আওয়াজ হবে ক্ষীণ ইত্যাদি ইত্যাদি।এই সব ছোট ছোট বিষয়বস্তুকে বিশেষ রঞ্জিত করার ফলেই, জোর যার বেশি, সে মুল্লুকটা পেয়ে যায়।

তবে জোরের ওপর প্যারামিটার তৈরি করাটা কতটুকু ফলপ্রসূ, সেটা নজর আন্দাজ করাটা দরকারি।

যেহেতু পুরুষ ও নারীর মধ্যে পুরুষ শারীরিকভাবে বলবান হয়,সেহেতু সবাই পুরুষকে সমাজ সীমান্ত রক্ষাকারী হাতির মতো সম্মান দিয়ে সাদরে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু বলবান শরীর আর ঝমঝম আওয়াজেই কি জোরালো শাসক নির্ধারণ করা যায়? শাসক নির্ধারিত হওয়া উচিত বুদ্ধিবৃত্তি ও রণকৌশলের ওপর ভিত্তি করে। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে রণকৌশলে পারদর্শী হতে হলে তো বলবান হতে হয়। এখানে একটা রূপক গল্পের উদাহরণ টেনে নিয়ে আসা যেতে পারে। বুদ্ধিমান শেয়াল  আর বোকা বাঘের গল্প নিশ্চয়ই মনে আছে। যদিও এ গল্পের উদাহরণ দেওয়ার উদ্দেশ্য দুপক্ষের প্রতি সাংঘর্ষিক মনোভাব প্রকাশ করা নয়। সব গল্প, প্রবন্ধ বা নারীবান্ধব যেকোনো পটভূমি টেনে আনার উদ্দেশ্যেই হচ্ছে নারীকে মানুষ বলে বিবেচনা করার কথাটা বারবার মনে করিয়ে দেওয়া।

প্যারেন্টিংয়ের কবলে পড়ে জোরের মুল্লুক ভাগাভাগির করার কথায় ফিরে আসা যাক। নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতাই হোক আর নারীকে যৌন নির্যাতন করাই হোক, সবখানেই এই জোরের আধিপত্য বিরাজ করে। যৌন হয়রানির অবাধ প্রচলন নারীর প্রতি যৌন আকর্ষণ বলে মনে হয় না। বরং ধর্ষণ, যৌননির্যাতন, অযাচিত যৌনাচার একতা ক্ষমতার মেলবন্ধনই বেশি। নারীকে রেখে ঢেকে চলতে হবে, নারীর পর্দা করা বাধ্যতামূলক, নারীরা হলেন একটা প্যাকেট উপড়ানো ললিপপের মতো। এই ধরনের মন্তব্যগুলো নারীদের ওপর ক্ষমতা প্রভাবের আগ্রাসন আরও বেশি করে জোরালো করে। একজন বলবান পুরুষ চাইলেই নারীকে শুধু তার কথামতো না চলার কারণে উত্তম মধ্যম দিয়ে কাবু করে ফেলতে পারে। কয়েকজন বলবান পুরুষ চাইলেই রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে থাকা নারীকে ধর্ষণ করে ফেলতে পারে। এর কারণগুলো তো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ক্ষমতার তাগিদেই। কাজেই ক্ষমতার জোরে মুল্লুক দখল করে নেওয়াটা একটা স্বাভাবিক ঘটনাই এ সমাজে ।

এই আধুনিক যুগেও নারীরা ক্ষমতার পরোয়ানায় নিপীড়িত। এই নিপীড়নেরর পৃষ্ঠপোষকেরা এ সমাজেরই মানুষ। ঘরে, বাইরে, মন্দির ,মসজিদ, কর্মস্থল কোথায় নেই এই পৃষ্ঠপোষকেরা? তাই ধর্ষণকে কেবল জৈবিক নয়, বরং সামাজিক কারণ হিসেবেও বিবেচনা করা যায়। এছাড়া আনাচে-কানাচে নারীর প্রতি সব সহিংসতাকে বিচারহীনতার সংস্কৃতিই আরও বেশি করে বাহবা দিচ্ছে। ২০২০ সালে ৩৬৫ দিনেই ১৩৪৬ টি ধর্ষণের কেস সম্পর্কে জানিয়েছে মহিলা পরিষদ। লিখিত রিপোর্টের বাইরে আরও ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। না জানি কতগুলো অলিখিত  রিপোর্ট জোরের থাবায়ই পিষে গেছে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ