Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলোকজ্জ্বল নগরী কিওটো

কিওটোয় বাস,
আর কোকিলের ডাকে সুমিষ্ট বাতাস,
তবু কিওটোর বিচ্ছেদ ভয়ে নেই আমার লাজ।”

কিওটোকে নিয়ে জাপানের কবিরা বেশ প্রাণোচ্ছল। এই কবিতাটিই যেন সবকিছু বলে দেয়। কিওটোতে থেকেও অনেকে কিওটো শহর থেকে দূরে যাওয়ার ভয়ে পীড়িত থাকে। এমনকি আপনিও যদি কখনো জাপানের কথা ভাবেন, তাহলে কিওটোর কথাই ভাবতে হবে। কিওটোর আলোকজ্জ্বল নগরী আপনাকে কখনো একা হতে দিবেনা। তবে কিওটোর ইতিহাস শুধুমাত্র আলোকজ্জ্বল শহরের রাস্তা, সিন্টো মন্দির, আর হাস্যোজ্জ্বল গিশ্যা দিয়েই বিচার করা যাবে না।

কিওটোয় গেলে নজরে পড়বে সব। যখন জানবেন সবকিছু গিশ্যাদের ইতিহাস, মন্দিরের ভক্তদের গল্প – সবকিছুই আপনার চোখ সিক্ত করে দিতে বাধ্য। মোদ্দা কথা, যেকোনো ভ্রমণপ্রেমীর জন্যে কিওটো শহরটি যেন উপহারের মতো।

কিওটোই বা কেন? কিওটো জাপানের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক সমৃদ্ধির প্রাণকেন্দ্রই বলা চলে। যা নেই কিওটোতে তা নেই জাপানে। এখানেই জাপানের ঐতিহ্যবাহী মন্দির, শ্রাইন, মনোরম বাগান, গিশ্যা, রেস্টুরেন্ট আর দোকান খুজে পাওয়া যাবে। তবে কিওটো আরো জনপ্রিয় অন্য একটি কারণে। একের পর এক উৎসবের উৎসাহে শহরটি যেন মেতে থাকে সারা বছর। করোনাকালীন মহামারিতে কিওটো কিছুটা থমকে গিয়েছিলো। সবকিছু স্বাভাবিক হতেই কিওটো যেন মেতে উঠেছে নতুন উদ্যমে।

কিওটোর এত জনপ্রিয়তাই বা কেন? কোনো এক সময় জাপানের শাসনভার ছিলো সম্রাটের হাতে। কিওটোতেই এক প্রাসাদে বাস করতেন। ৭৯৪ থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত বিশাল একটি সময় জাপানের রাজধানীর গর্বে গর্বিতা কিওটো। এই দীর্ঘ সময়ে কিওটো বহু যুদ্ধ এবং অশান্তির মুখোমুখি হয়েছে। ভাগ্যিস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহরে বোমাবর্ষণ করা হয়নি। তা নাহলে এত সুন্দর স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে যেতো।

আজ কিওটোতে গেলে একদিনে পুরো শহর ঘুরে দেখা তো যাবে না। অনেকেই কিওটোতে গেলে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন তা নিয়েই চিন্তিত থাকেন। কিন্তু একটু পরিকল্পনা করে নিলে কাজটি সহজ হয়। কিওটো বেশ বড় শহর। জাপানের বৃহত্তম দশটি শহরের একটি কিওটো। সেজন্যেই দক্ষিনাংশ, পশ্চিমাংশ এভাবে ভাগ করে নিতে হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক কিওটোয় গেলে কিভাবে কিভাবে ভাগ করে নিবেন।

কেন্দ্রীয় কিওটো
কিওটোর মধ্যভাগেই সবার প্রথমে নজর কাড়বে চোখ ধাঁধানো নিজো প্রাসাদ। এই প্রাসাদেই একসময় জাপানের সম্রাট কিংবা শোগান বসবাস করতেন। নিজো প্রাসাদে এলেই শোগানের ইতিহাস এবং জাপানের ইতিহাসের অনেক গল্পই স্থানীয়দের মুখ থেকে শুনতে পাবেন।

নিজো ক্যাসল থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ জাপানের রেলপ্রেমের নিদর্শন দেখতে পারেন কিওটো রেলওয়ে মিউজিয়ামে। জাপানিদের সময়জ্ঞান প্রখর। সচরাচর তারা ট্রেন ছাড়া চলাচল করতে পারেনা। এই যাদুঘরে গেলেই জানতে পারবেন জাপানিরা নিজেদের প্রয়োজনে কি কি ট্রেন তৈরি করেছিলো।

রেলওয়ে যাদুঘর থেকে বের হয়ে ঘুরে আসতে পারবেন আরেক অপূর্ব স্থানে। সেন্টো প্যালেস এককালে সম্রাটদের মনোরঞ্জনের প্রধান স্থান ছিলো। এখানেই আছে জাপানের অপূর্ব ফুল আর বাগান। এখানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারবেন।

জাপানে গেলেন আর তাদের বাজার দেখবেন না? নিশিকি বাজারে গেলেই জাপানের অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটবে। বিশেষত এখানকার স্ট্রিট ফুডগুলোর সাথেও পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটবে।

রাতে অন্তত ভ্রমনের ছেদ ঘটানোর আগে খাবারটা জম্পেশ হওয়া চাই। কোনো সমস্যা নেই। পতঞ্চোতে চলে যান। এখানেই আলো আঁধারীতে বসে জাপানিজ উডন, নুডলস, বা স্থানীয় খাবার খেয়ে বিশ্রামের জন্যে চলে যান হোটেলে।

পূর্ব কিওটো
পূর্ব কিওটোতে গেলেই কিওমিজুদেরায় যেতে হবে। এই স্থানটি কাঠনির্মিত বারান্দার জন্যে বিখ্যাত। এখানে গেলেই মানুষের ভিড় প্রথমে নজরে পড়তে। তাতে কিছুটা বিরক্তি আসতেই পারে। তবে মানিয়ে নিলে ছবি তোলার একটি আদর্শ স্থান এটি।

কিওমিজুদেরায় গেলেন আর ইতিহাসের একটু আভাস নেবেন না? বের হতেই হিগাশিয়ামায় ঢু মেরে আসুন। এখানকার ইতিহাস আপনাকে রোমাঞ্চিত করবেই।

পূর্ব কিওটোয় গেলেই রুপা দিয়ে নির্মিত মন্দিরের কথা শুনবেনই। এই মন্দিরটির নাম গিঙ্কাকুজি। সত্যি বলতে কি, মন্দিরটি মোটেও রুপা দিয়ে মোড়ানো না। তবে এই মন্দিরের সৌন্দর্য্য আপনায় মুগ্ধ করবে।

কিওটোকে জানার জন্যে একবার কিওটোর জাতীয় যাদুঘরে ঘুরতে হবে। এখানেই জাপানের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের নানা নিদর্শনের দেখা মিলবে।

পূর্ব কিওটো ভ্রমণ পুরোপুরি শেষ হবেনা নেনজেঞ্জি মন্দিরে না গেলে। এখানেই পাথর বাগানটি সকল পর্যটকের মূল আকর্ষণ। পাথর দিয়েও যে মনোরম বাগান গড়ে তোলা যায়, এখানে না এলে জানা যাবেনা।

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ