গ্রিন টি নাকি রং চা? কোনটি বেছে নেবেন আপনার স্বাস্থ্যের জন্য
সকালের এক কাপ চা যেন দিনের শুরুতে এনার্জি এনে দেয়। তবে চায়ের ধরন নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা বিভক্তি। কেউ পছন্দ করেন রং চা, আবার কেউ ঝুঁকে থাকেন গ্রিন টির দিকে। তবে প্রশ্ন হলো, স্বাস্থ্যগত দিক থেকে কোনটি বেশি উপকারী—গ্রিন টি নাকি রং চা?
এই দুটি চা-ই জনপ্রিয়, এবং প্রত্যেকটির রয়েছে ভিন্ন গুণাগুণ। চলুন জেনে নেই এই দুই ধরনের চায়ের পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্যগত প্রভাব, এবং উপকারিতা নিয়ে।
গ্রিন টির স্বাস্থ্য উপকারিতা
গ্রিন টি চা গাছের পাতা থেকে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তবে এতে খুব কম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর ফলে চা পাতায় থাকা প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানগুলো অক্ষুণ্ণ থাকে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভরপুর উৎস
গ্রিন টি-তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের ফ্রি র্যাডিকেল দূর করতে সাহায্য করে। এটি বয়সের ছাপ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
গ্রিন টি মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা ক্যালোরি কম এবং এটি ফ্যাট বার্ন করতে সহায়ক, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
গ্রিন টি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
গ্রিন টি-তে থাকা অমাইনো অ্যাসিড থিয়ানিন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে কার্যকর।
রং চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা
রং চা চা পাতাকে জলে ফুটিয়ে তৈরি করা হয় এবং এটি তুলনামূলকভাবে বেশি প্রক্রিয়াজাত। তবে রং চাও স্বাস্থ্য উপকারিতায় পিছিয়ে নেই।
শক্তি বৃদ্ধি করে
রং চায় থাকা ক্যাফেইন আমাদের শরীরে তাৎক্ষণিক এনার্জি জোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে
রং চা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি অন্ত্রে প্রোবায়োটিক বৃদ্ধিতে সহায়ক, যা হজম ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা
রং চায় থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সহায়ক, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
নিয়মিত রং চা পান স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, কারণ এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কোনটি স্বাস্থ্যকর: গ্রিন টি নাকি রং চা?
উভয় চায়েরই রয়েছে নিজস্ব গুণাগুণ। তবে নির্দিষ্ট কিছু দিক থেকে গ্রিন টি তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাস্থ্যকর:
১. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: গ্রিন টি-তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি, যা বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
২. ক্যালোরি কম: গ্রিন টি-তে ক্যালোরি কম, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৩. ক্যাফেইন কম: গ্রিন টি-তে ক্যাফেইনের মাত্রা কম, যা দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ুর ওপর চাপ কমায়।
৪. প্রাকৃতিক প্রভাব: গ্রিন টি কম প্রক্রিয়াজাত হওয়ায় এতে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে।
অন্যদিকে, রং চাও উপকারী, বিশেষত যদি তা চিনি এবং দুধ ছাড়া পান করা হয়। রং চা তাৎক্ষণিক শক্তি দেয় এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও প্রক্রিয়াজাত পদ্ধতির কারণে এটি বেশি পান করলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যা আপনাকে মানতে হবে
চা বাছাই করার সময় আপনার শারীরিক অবস্থা, প্রয়োজন এবং জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
– গ্রিন টি উপযুক্ত যদি: আপনি ওজন কমাতে চান, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চান, এবং কম ক্যাফেইন গ্রহণ করতে চান।
– রং চা উপযুক্ত যদি: আপনি এনার্জি চান, হজমে সমস্যা রয়েছে, এবং তাৎক্ষণিক ক্লান্তি দূর করতে চান।
গ্রিন টি এবং রং চা—দুটোই স্বাস্থ্যকর যদি তা সঠিকভাবে পান করা হয়। তবে চা বাছাই করার আগে চিন্তা করুন, আপনার শরীরের প্রয়োজন কী। দৈনিক এক থেকে দুই কাপ গ্রিন টি বা রং চা পান করলে শরীর থাকবে সুস্থ, আর মন থাকবে সতেজ। অতএব, সঠিক চায়ের বেছে নিন এবং উপভোগ করুন তার প্রতিটি চুমুক।