বয়স ৩০ ছুঁলেই ডায়াবেটিসের দিকে নজর দিন
ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক, যা ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস এখন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ৩০ বছর বয়স পেরোনোর পর আমাদের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব এ রোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই এ বয়স থেকেই ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
ডায়াবেটিস: কারণ ও প্রভাব
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যেখানে শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন কমে যায় বা এটি ঠিকমতো কাজ করে না। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
কারণগুলো:
১. অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, যেমন চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া।
২. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের অভাব।
৩. ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন।
৪. পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস।
৫. অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
প্রভাব:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এটি হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, চোখের দৃষ্টি হ্রাস, স্নায়ুর ক্ষতি, এমনকি পায়ের ক্ষত হওয়ার মতো জটিলতার জন্ম দিতে পারে।
বয়স ৩০ পেরোলে ঝুঁকি কেন বাড়ে?
বয়স ৩০ পেরোলে আমাদের শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া ধীরগতিতে কাজ করে। এই সময় কাজের চাপ, বিয়ের পর জীবনযাত্রার পরিবর্তন, এবং মানসিক চাপ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাছাড়া, এ বয়সে শারীরিকভাবে কম সক্রিয় থাকার প্রবণতা তৈরি হয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে সচেতনতা
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বয়স ৩০ পেরোলেই নিচের কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ:
১. সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
– চিনি, ময়দা, এবং প্রসেসড ফুড খাওয়া কমিয়ে আনুন।
– শাকসবজি, ফলমূল, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার ও কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন বেশি খান।
– সঠিক সময়মতো খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
– প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন।
– যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করলে মানসিক চাপও কমে।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের প্রধান কারণগুলোর একটি। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা নজরে রাখুন।
৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
– ৩০ বছর বয়সের পর প্রতি ছয় মাসে রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা উচিত।
– পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে আরও সতর্ক থাকুন।
৫. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান শরীরকে সুস্থ রাখে এবং বিপাক ক্রিয়া উন্নত করে।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানো
মানসিক চাপ ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী হতে পারে। তাই প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য পছন্দের কাজ বা শখে মনোযোগ দিন।
ডায়াবেটিস হলে কী করবেন?
যদি রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তবে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। খাবারে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কমিয়ে দিন এবং ওষুধ বা ইনসুলিন ব্যবহারের নিয়ম মেনে চলুন।
বয়স ৩০ পেরোনোর পর থেকেই ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতন হওয়া জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সময়মতো সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আমাদের দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস ও এর জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই আজ থেকেই সচেতন হন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করুন এবং সুস্থ ও সুখী জীবন উপভোগ করুন।