ভাইরাস আগে না ব্যাক্টেরিয়া আগে?
ভাইরাস আর ব্যাক্টেরিয়া – দুই অতি ক্ষুদ্র জীব। কিন্তু এই দুজনের কাহিনি কিন্তু বিশাল! হাজার বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, কে আগে এসেছে পৃথিবীতে? ভাইরাস নাকি ব্যাক্টেরিয়া? চলুন, এই মহাজাগতিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার এক মজার যাত্রায় বেরিয়ে পড়ি।
ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়া: ছোট্ট পরিচিতি
সবার আগে, একটু পরিচিত হই আমাদের এই প্রাচীন বন্ধুদের সাথে। ভাইরাস হলো একধরনের “পরজীবী”। নিজের শক্তি-সামর্থ্য নেই, অন্যের কোষে ঢুকে তবেই তারা সক্রিয় হয়। একেবারে ফাঁকিবাজ বললেই চলে। প্রোটিনের মজবুত আবরণে মোড়ানো ভাইরাসের ভেতর থাকে ডিএনএ বা আরএনএ। এই নিয়ে তাদের জীবন। যেমন করোনাভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস – এরা বিভিন্নভাবে মানুষকে অসুস্থ করে ফেলে।
আর ব্যাক্টেরিয়া? তারা কিন্তু আলাদা। এরা এককোষী জীব, মানে একটা কোষেই তাদের জীবন। এরা নিজেরা বংশবৃদ্ধি করতে পারে। আমাদের অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়া খাবার হজমে সাহায্য করে, আবার কিছু ব্যাক্টেরিয়া পেনিসিলিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের অংশ হিসেবে কাজ করে। তবে, কিছু ব্যাক্টেরিয়া বিপজ্জনকও হতে পারে, যেমন স্যালমোনেলা বা ই.কোলাই।
চলুন এবার বিবর্তনের গল্পে ঢুকে পড়ি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ব্যাক্টেরিয়ার উদ্ভব হয়েছে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে। তখন পৃথিবী ছিল গরম, অক্সিজেনবিহীন, একদম অন্যরকম। সেই পরিবেশেও ব্যাক্টেরিয়া নিজের মতো করে টিকে ছিল এবং প্রজনন করতে জানত। এদের স্ব-প্রজনন ক্ষমতার জন্য ব্যাক্টেরিয়াকে আদিমতম জীবের মধ্যে গণ্য করা হয়।
অন্যদিকে, ভাইরাসের ইতিহাস একটু ধোঁয়াশায় ঢাকা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ব্যাক্টেরিয়া বা অন্য কোনো এককোষী জীবের জেনেটিক উপাদান থেকে ভাইরাসের উদ্ভব। তারা নিজস্ব কোষ ছাড়াই অন্য কোষে ঢুকে বেঁচে থাকতে পারে, ঠিক যেন ভ্রাম্যমাণ জিনগত উপাদান। কেউ কেউ বলেন, ভাইরাস সম্ভবত একসময় কোষের ভেতরের জেনেটিক অংশ থেকে বেরিয়ে এসেছে।
ব্যাক্টেরিয়া আর ভাইরাস উভয়ই পৃথিবী আর আমাদের জীবনকে চমৎকারভাবে প্রভাবিত করে। যেমন উপকারী ব্যাক্টেরিয়া আমাদের হজমে সহায়তা করে, প্রোটিন ও ভিটামিন উৎপাদন করে, আবার আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া আবার বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। এদের কারণে খাদ্য বিষক্রিয়া থেকে শুরু করে সংক্রমণ ঘটে।
ভাইরাসের কথাও বলি। করোনাভাইরাসের মতো কিছু ভাইরাস প্রাণঘাতী, আবার কিছু ভাইরাস আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন, ভাইরাসের জিন থেরাপি প্রযুক্তি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে তারা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
বিজ্ঞানীরা ব্যাক্টেরিয়ায় নতুন জিন প্রবেশ করিয়ে রিকম্বিনেন্ট ব্যাক্টেরিয়া তৈরি করেন, যেগুলো থেকে আমরা ওষুধ, যেমন ইনসুলিন, পেতে পারি। এদের দিয়ে এখন শুধু চিকিৎসা নয়, পরিবেশ পরিষ্কারকরণও সম্ভব হচ্ছে।
আর ভাইরাস? আমরা জানি, এখন mRNA ভিত্তিক ভ্যাকসিন ভাইরাসের অংশবিশেষ থেকে তৈরি হয়। এটি আমাদের দেহে প্রবেশ করে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে।
ভাইরাস আর ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে কে আগে এসেছে, সেই রহস্য বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি উদঘাটন করতে পারেননি। তবে এই দুই ক্ষুদ্র জীব একে অপরকে ছাড়িয়ে যেতে চায় কি চায় না, তা নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। তারা শুধু নিজেদের মতো করে বেঁচে থাকে এবং আমাদের জীবনকে নানা দিকে প্রভাবিত করে।
ভাইরাস আর ব্যাক্টেরিয়ার রহস্য ভেদ করতে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে আরও চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসবে। ততদিন পর্যন্ত, আমাদের এই প্রাচীন জীবদের নিয়ে কল্পনা আর গবেষণা চলতেই থাকবে!