Skip to content

২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুকে জ্বর-সর্দি-কাশি থেকে সুরক্ষিত রাখতে উপায়

শীতকালে তাপমাত্রার হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে সর্দি, কাশি, ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। বিশেষ করে শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় কিছুটা দুর্বল হওয়ায় তাদের এই সময়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এই ঋতুতে শিশুদের সুস্থ রাখতে কিছু বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি। 

পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা
শীতকালে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি। শিশুর দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় মৌসুমি ফল ও শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করুন, যেমন কমলা, মাল্টা, মিষ্টিকুমড়া, এবং গাজর। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন আমলকী ও লেবু শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এছাড়া মাছ, মুরগির মাংস ও ডিমে থাকা প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শিশুর দেহকে শীতের ঠাণ্ডা থেকে সুরক্ষিত রাখে। 

পর্যাপ্ত পানি পান
শীতকালে শিশুদের পর্যাপ্ত পানি পানে উৎসাহিত করতে হবে, কারণ ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় অনেক সময় শিশুদের তৃষ্ণা কমে যায়। পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিয়ে শরীরকে পরিষ্কার রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া, গরম পানীয় যেমন আদা-লেবু চা বা গরম দুধ দেওয়া যেতে পারে, যা গলা ও শ্বাসতন্ত্রকে আরামদায়ক রাখে। 

পর্যাপ্ত ঘুম
শীতকালে শিশুদের পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম শিশুদের শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শিশুদের দিনে কমপক্ষে ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করুন। ঘুমের সময় তাদের আরামদায়ক উষ্ণ পোশাক পরতে দিন এবং ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাতে মোটা কম্বলের ব্যবস্থা করুন।

নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস
শিশুকে সর্দি-কাশি ও জ্বর থেকে দূরে রাখতে নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাইরে থেকে এসে এবং খাবারের আগে হাত ধোয়ার জন্য শিশুদের অভ্যস্ত করে তুলুন। শিশুদের সহজ ভাষায় বোঝান কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ। এই অভ্যাস তাদের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেবে। 

গরম পোশাক পরানো
শীতকাল এলে শিশুকে যথাযথভাবে উষ্ণ পোশাক পরানো অত্যন্ত জরুরি। হাত-মোজা, মাথা-টুপি এবং উষ্ণ স্যুইটার বা জ্যাকেট তাদের ঠাণ্ডা থেকে সুরক্ষা দেবে। তবে খেয়াল রাখুন, পোশাক যেন খুব বেশি আঁটসাঁট না হয়, এতে শিশুর আরামহানি হতে পারে। এছাড়া, বাইরে বেরোনোর সময় হাত ও পায়ের অংশ ঢেকে রাখুন, কারণ এগুলো ঠাণ্ডায় সংবেদনশীল হয়ে থাকে। 

সঠিক ঘরের তাপমাত্রা বজায় রাখা
শীতকালে ঘরের তাপমাত্রা খুব কমে গেলে শিশুদের সহজেই ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। তাই ঘরের তাপমাত্রা সঠিকভাবে বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে গরম পানির বালতি বা হিটারের ব্যবহার করে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখুন। তবে সরাসরি হিটার বা বালতির পাশে শিশুকে বসতে দেবেন না, এতে তারা শুষ্ক তাপমাত্রায় অসুস্থ হতে পারে। 

প্রাকৃতিক প্রতিরোধক ব্যবহার
শিশুকে ঠাণ্ডা, কাশি থেকে সুরক্ষিত রাখতে ঘরোয়া কিছু প্রতিরোধক ব্যবহার করতে পারেন। মধু, আদা ও তুলসী পাতা সর্দি-কাশি প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। তবে বয়স এক বছরের কম হলে শিশুকে মধু খাওয়াবেন না। এছাড়া, তুলসী-আদা-মধুর মিশ্রণ বা অল্প কুসুম গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গল করালে শিশুর গলা পরিষ্কার থাকে। 

শীতকালে শিশুর সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য বজায় রাখতে একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া আবশ্যক। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, উষ্ণ পোশাক, পর্যাপ্ত পানি ও ঘুম, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং গরমের ব্যবস্থা শিশুকে সর্দি-কাশি ও জ্বর থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। তাই ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে অভিভাবকদের জন্য শিশুদের বাড়তি যত্নই হতে পারে তাদের সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ