হাওরে আজকাল
হাওরে আজকাল ভ্রমণ করতে গেলে অভিজ্ঞতা কেমন হয়ে পরো অনেকেরই অবসায় এসব বকে। হাট এলাকা বললে সিলেটের সুনামগঞ্জের কথা মাথায় আসে। পয় এক দশকের বেশি সময় বহে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী অহিরপুর উপজেলা একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পর্যটকদের কাছে অবকাশ হপনোর অন্যতম তাহণ হয়ে উঠেছে এ উপজেলা। দেশের সবচেয়ে বড় শিমুলবাগদ আইফেল টাওয়ার খায় বারেকের টিলা, স্রোতগিনী নদী যাদুকাটা, শহিদ সিরাজ (নিলজী) দেক, নাকমাছড়া কর্ণার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের বর্ণনা সামাজিক মেগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের অনন্তানে ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ও দেশের বাইতে।
টাঙ্গুয়ার হাওর
পত্রিকার শিরোনামে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে বিশ্ব ঐডিজ তমসার সাইট হিসেবে পরিচিত টাঙ্গুয়ার হাওড়েক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাজুয়ার হাওর। বিরল প্রজাতির মৎস্য ও অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত এই টাঙ্গুয়া। শীতকালে সুদূর লইবেরিয়া থেকে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাধি আসে এই হাওরে। আর বর্ষাকালে পানিতে উইটম্বুর। টাদুয়ার হাওড় যেন সাগরে রূপ নেয়। প্রধানত বর্ষাকালেই টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান হাওরের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। শত শত নৌকা নিয়ে হাওরে রাত্রি যাপন করেন ভারা।
ইকো-ট্যুরিজম স্পট হলেও শঙ্কা
অনেক সংশ্লিষ্টরা বলছেন হাওরে ইকো ট্রারিজম বিকাশের কথা থাকলেও, তা আর হয়ে ওঠেনি উপরন্ত হাওড়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে বিপন্ন প্রতিবেশ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার। পরে ২০০০ সালে ইউনেস্কো এটিকে রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। সাম্প্রতিক সময়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের সংখ্যায় জ্যামিয়িক হরে যেমন বাড়ছে ঠিক তেমন শঙ্কাও জেগেছে এর জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ বিয়ে। এর সঙ্গে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সংশ্লিইদের নিকট দেখা দিয়েছে অন্যতম গুরুত্ববহ হয়ে। এজনই হাওরে আজকাল স্মার্ট টুরিজম ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে।
হাওরে স্মার্ট ট্যুরিজমের নীতিমালা
হাওরে জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এখন স্মার্ট টুরিজমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যারা যাওতে ভ্রমণ করতে হবেন তাদের এ বিষয়গুলো জেনে রাখা ভালো। নীতিমালাগুলো একবার বুঝে
নেওয়া ভালো। পর্যটনের কারণে হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়া যাতে বিঘ্নিত না হয় তার নিশ্চয়তা বিধানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কোন
পর্যটকবাহী জলযানকে হাওড়ে প্রবেশ করতে না দেওয়া। হাওরে অবস্থানকালীন সময় জলযানে পর্যটকদের জন্য। পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানীয় মজুদ নিশ্চিত থাকতে হবে। হাওড়ের পরিবেশ প্রতিবেশ অক্ষুন্ন রেখে নিয়ন্ত্রিত আকারে ভ্রমণ অনুমোদন করা। টকেরঘাট এলাকা ব্যতীত অন্য এলাকায় নৌকা বা জলযানে রাত্রিযাপন করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন এবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পূর্বেই অবহিত করতে হবে।
পর্যটকবাহী জলযানে রান্নার জন্য ব্যবহার্য গ্যাস সিলিন্ডার বহন করা যাবে না। সংরক্ষিত এলাকা সমূহে বিভিন্ন প্রাণীর অবাধ বিচরণ, স্বাভাবিক আচরণ, প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ইত্যাদি প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
ভ্রমণকালে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো হাতিয়ার, ফাঁদ, বিষ ইত্যাদি কোন অবস্থাতেই বহন করা যাবে না এবং মাছ শিকার বা ধরার সহায়ক কোন সরঞ্জাম বহন করা যাবেনা। হাওড়ে ভ্রমণের জন্য পর্যটক, টৈার অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব নির্ধারণ ও জলযান ব্যবহার সংক্রান্ত বিধি নিষেধ প্রণয়ন করা।
সর্বোচ্চ ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের জলযান হাওড়ে ভ্রমণ করতে পারবে তবে জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রয়োজনীয়। সময় হাওড়ে অবস্থান করা যাবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২দিন ১ রাত পর্যটকরা হাওড়ে অবস্থান করতে পারবে।
হাওড়ে জীববৈচিত্র্য সংকটাপন্ন হতে পারে কিংবা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকির সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন কর্মকাণ্ড বা আচার-আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অপরাধ সংঘটিত হতে দেখা গেলে বা আলামত পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করাসহ অপরাধ বা দুর্ঘটনা উদ্ঘাটন বা প্রতিরোধে সহযোগিতা করতে হবে।
ভ্রমণকালে প্রচলিত আইন, বিধি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলা, যেখানে সেখানে অবতরণ, বিচরণ ও অবস্থান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো মাইক বা মাইক্রোফোন জাতীয় উচ্চ শব্দযন্ত্র বহণ করা যাবে না। হাওড়ে নির্জনতা বজায় রাখতে সহায়তা করতে হবে। ভ্রমণকালে মানববর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য কোনোভাবেই হাওড়ের পানিতে ফেলা যাবে না।
হাওরে গেলে যা লক্ষ্য রাখবেন
আপনি যখন হাওরে ঘুরতে যাবেন তখন কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন। হাওরের প্রবেশপথে বা অবস্থান বা ভ্রমণকালে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কর্তৃক নৌযান পরিদর্শনকালে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। হাওরে প্রবেশ করার পর জলে, স্থলে কোনভাবেই কোন আবর্জনা না ফেলা এবং জলযানের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কেবলমাত্র নির্ধারিত স্থানে আবর্জনা ফেলতে হবে।
টাকেরঘাট ব্যতীত নৌকা বা জলযানে অন্যকোথাও রাত্রিযাপন করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে পূর্বে অবহিত করতে হবে। শিক্ষা সফরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
নির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত যত্রতত্র হাওর, নদী বা খালের পানিতে অবতরণ না করা এবং গোসল করা ও সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংকটাপন্ন হতে পারে কিংবা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকির সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন কর্মকাণ্ড বা আচার-আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
সুনামগঞ্জ বজ্রপাত প্রবণ এলাকা হওয়ায় বজ্রপাতের ও বৃষ্টির সময় নৌকা বা জলযানের ভিতরে অবস্থান করতে হবে।
যেকোন প্রকার অসামাজিক কর্মকাণ্ড যেমন ইভটিজিং, মাদক গ্রহণসহ বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। স্থানীয় জনগণের সাথে কোনো ধরণের বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে না। স্থানীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
যেকোনো ধরণের প্রতারণা বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। নিজেদের মূল্যবান মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে। সীমান্তবর্তী পর্যটন স্পটসমূহে কোনোভাবেই সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করা যাবেনা। হাউসরেট ওনার্স এসোসিয়েশন অব সুনামগঞ্জ সমিতির প্রচার সম্পাদক হাসানুর রহমান উল্লাস বলেন, পর্যটকবাহী নৌযান ও হাউসবোট ব্যবস্থাপনায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন যে নীতিমালা করেছেন তা আমরা পেয়েছি। এসব বিধি-নিষেধ অবশ্যই মেনে চলা হবে। এবং আগামী দিনেও হাওড়ের পর্যটন ঘিরে যেকোনো নিয়মকানুন মেনে চলেই হাউসবোটগুলো পরিচালনা করা হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, হাওড়ের জীববৈচিত্র্য, প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষায় পর্যটকবাহী নৌযান- হাউসবোট ও আগত দর্শনার্থীদের এসব নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।