শিশু ও কিশোরদের ক্যান্সার একটি আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি
বিশ্বজুড়ে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে ক্যান্সার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ১৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানবজাতি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা মানুষের শরীরের ক্ষতিকর কোষগুলোকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি করে দেয় এবং প্রয়োজনীয় কোষগুলোর ক্ষতিসাধন করে। শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার দেখা যায়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, এবং নিউরোব্লাস্টোমা প্রভৃতি।
লিউকেমিয়া
বিশেষ করে অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (ALL) শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার। এটি সাধারণত ০ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে এবং এর মধ্যে একাধিক প্রকার আছে,যেমন অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (ALL) ও অ্যাকিউট মাইলোইড লিউকেমিয়া (AML)। এটি হিমোগ্লোবিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে শুরু হয়ে রক্তের কোষগুলোকে আক্রান্ত করে। এই ক্যান্সারের লক্ষণগুলির মধ্যে ক্লান্তি, অসুস্থতা, রক্তপাত এবং ব্যথা অন্তর্ভুক্ত। চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি এবং কখনও কখনও রক্তের ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন হয়।
লিম্ফোমা
আরেকটি সাধারণ ধরনের ক্যান্সার হলো লিম্ফোমা, যা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। দুই ধরনের লিম্ফোমা আছে: হজকিনস এবং নন-হজকিনস লিম্ফোমা। এই ক্যান্সারগুলোর লক্ষণ মাঝে মাঝে বোঝা কঠিন হয়, তবে সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, ওজন হ্রাস, এবং লিম্ফ নোডে স্ফীতি।
নিউরোব্লাস্টোমা
নিউরোব্লাস্টোমা সাধারণত শিশুদের মধ্যে জন্মের পরে প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে ঘটে এবং এটি স্নায়ুতন্ত্রের কোষগুলিতে ক্ষতিসাধন করে। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার সুযোগ বেশি থাকে। এটি সাধারণত বুকে, পেটে বা তলপেটে দেখা যায়।
ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, সার্জারি এবং স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন। শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার পরিকল্পনা শিশু বিশেষজ্ঞ ক্যান্সার চিকিৎসকদের দ্বারা তৈরি করা হয়, যারা শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল।
ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রাথমিক শনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদের উচিৎ তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য লক্ষণগুলোতে মনোযোগ দিতে এবং লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। শিক্ষাগত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্যান্সার সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার, যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয় এবং বন্ধুদেরও সহযোগিতা করতে পারে।
শিশুদের ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে গবেষণা চলছে। পরিবেশ দূষণ, জিনগত প্রবণতা এবং কিছু ভাইরাসের উপস্থিতি (যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) এই রোগের জন্য দায়ী হতে পারে। এই সচেতনতা বাড়ানো এবং সঠিক তথ্য প্রচার করা অত্যন্ত জরুরি, যেন অভিভাবকরা সময়মতো চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসতে পারেন।
শিশু ও কিশোরদের ক্যান্সার মোকাবেলার জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব অনেক। স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, গবেষণায় সমর্থন দেওয়া এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালানো জরুরি। শুধুমাত্র একসাথে কাজ করলে আমরা এই ভয়াবহ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব এবং আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্য নিরাপদ রাখতে পারব।
ক্যান্সার শিশু ও কিশোরদের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে আসছে। তবে প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সঠিক তথ্য ও শিক্ষা শিশুদের এবং তাদের পরিবারকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য কররে। ফলে একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব।