Skip to content

২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্তন ক্যান্সার: লাজ, ভয় আর নয়

গত বছরের সমীক্ষা হিসেব করনে বিশ্বে প্রতি আটজনের
মধ্যে একজন নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যায় হলেও পুরুষরাও এই ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে জ্বন করন্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি নারীর। ক্যানসার গবেষণা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসির হিসাব বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। মারা যান ছয় হাজারের বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসার অভাব এবং সচেতনভার অভাবে নারীরা এই ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নারী করনসার রোগীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ স্তন ক্যানসারে ভোগেন। নারী-পুরুষ মিলিয়ে এর হার ৮.৩ শতাংশ। বাংলাদেশে নারীরা যেসব ক্যানসারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে স্তন ক্যানসার শীর্ষে রয়েছে।

স্তন ক্যান্সার কেন হয়?

স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিয়ে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালীর লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যানসার। চিকিৎসকদের মতে, যেকোন নারীই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। বাংলাদেশে জন ক্যানসারে আক্রান্ত পুরুষ রোগীও পাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তবে পুরুষরা অনেকেই স্তন ক্যানসার নিয়ে কথা বলতে চান না। তাদের কাছে বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে টাবু। স্তন ক্যান্সার অবশ্য সুচিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব। চিকিৎসকদের মতে ২০ বছর বয়স থেকেই নিজে নিজে জন পরীক্ষা করা উচিত।

জন ক্যানসারের ঝুঁকি, লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি অনন্যাকে জানিয়েছে আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা. রওশন আরা বেগম। তার মতামত অনুসারে:

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন কারা

পরিবারে মায়ের দিকের নিকটাত্মীয় কারও স্তন ক্যানসার যদি হয় তাহলে পরিবারের অন্য কোনো নারীর স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। অর্থাৎ জিনগতভাবেও এই রোগ ছড়াতে পারে।

১২ বছর বয়সের পরে মাসিক হলে এবং ৫৫ বছর বয়সের পরেও মেনোপজ না হলে মানে মেনোপজ দেরিতে হলে স্তন করন্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়ে।

পোস্ট মেনোপোজান সিন্ড্রোমের চিকিৎসা হিসেবে পাঁচ বছরের বেশি হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি নিলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

৩০ বছরের বেশি বয়সে গর্ভধারণ, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, জিনগত মিউটেশনের কারণেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে

নিয়মিত শরীরচর্চা না করা, স্থলতা এবং নির্দিষ্ট বদল্লাস মানে ধুমপান ও মদ্যপান জন ক্যানসারের কারণ হতে পারে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।
খুবই টাইট ফিটিং পোশাক পড়লেও অনেক সময় শরীরে ব্যাপক চাপ পড়ে এবং সমস্যা দেখা দেয়।

আসনে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করার পর চিকিৎসকের সহায়তা নিলে দ্রুত নিরাময় পাওয়া যায়। নারীরা প্রতি মাসে একবার মাসিক শেষ হবার সাথে সাথে পঞ্চম অথবা সপ্তম দিনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অথবা গোসলের সময় স্তন এবং বগলের নিচের অংশ পরীক্ষা করতে পারেন।স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করার উপায় জনের চারদিকে বগলের ভিতর বা আশেপাশে কোন স্থান ফুলে ওঠা কিংবা আলতো করে ছুঁয়ে দেখলে কোন শক্ত চাকার মতো অনুভব হবে

স্তনের কোন অংশ ফোলা বা ব্যথা হওয়া, স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা স্তনের চামড়ার রঙ বা আকৃতিতে পরিবর্তন হওয়া দুই স্তনের আকারে পরিবর্তন দেখা গেলে স্তনের আশপাশে লালচে হয়ে যাওয়া স্তনের কোন অংশ ভেতরের দিকে ঢুকে গেলে স্তনের বোঁটা দিয়ে রস বের হলে উপরোক্ত এক বা একাধিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

যেভাবে স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের তিন পদ্ধতি

ম্যামোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্সরে, যার সাহায্য জনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে। ৪০ বছর বয়স থেকে বছরে একবার মেমোগ্রাম করা উচিত। মেমোগ্রামের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে জন ক্যানসার নির্ণয় করা সম্ভব। জনে পিও আছে কিনা চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো।

নিজে নিজে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী জন পরীক্ষা করা। তবে স্তনে সমস্যা হওয়া মানেই কিন্তু ক্যানসার না। পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে সেটা ক্যানসার কি না। স্তন ছাড়াও শরীরের

অন্যান্য অংশে করনসার ছড়িয়ে পড়েছে কি না তা জানার জন্য সিটি স্কান, এমআরআই কিংবা বোন স্ক্যানিং ও করা হয়।

চিকিৎসা জন ক্যানসারের চিকিৎসা বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন: ক্যানসারের ধরন ও আকার, ক্যানসার স্তনে সীমাবদ্ধ

আছে নাকি অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে ইত্যাদির ওপর। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চার ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলে থাকেন চিকিৎসকরা। স্তন ক্যানসারে দুই ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়। স্তন থেকে টিউমার কেটে বাদ দেওয়া বা লাম্পেকট্রোমি। সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ বা মাস্টেকটোমি। এ ছাড়া রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপির মাধ্যমেও জন ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরেকটি বড় বিষয় হলো মানসিক স্বাস্থ্য। অনেক সময় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলা হয়।

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার। নিজেকে যথাসম্ভব নিরাপদ রাখার স্বার্থেই এমন করা জরুরি। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন। অতিরিক্ত ওজন কমাতে চেষ্টা করুন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান, এতে জন ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস পার। পোস্ট মেনোপোজাল হরমোন থেরাপি সীমিত রাখতে চেষ্টা করুন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ