মাকে বলছি, মেয়েকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলুন
নারীর তো অনেক বাধা বিপত্তি। সমাজে তার আত্মসম্মানও বিপত্তির মুখে। সে যদি একা থাকতে চায় তাহলে তার নামে অনেক কথা ছড়ায়। যার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তাকে নিয়ে অনেক রসালো গুজবও চলতে থাকে। রুচিশীলতার বাইরে গিয়ে অরুচিকর আলোচনাও তো কম হয়না। নারীর মধ্যে আত্মসম্মানবোধের ধারণা এখনও পোক্ত হয়নি। সমাজে পুরুষদের যাচ্ছেতাই স্বভাবের বিপরীতে নারীর প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রও কম। তার মনে হয়, স্বামী ছাড়া তার আর অবলম্বন নেই। যেহেতু আর অবলম্বন নেই তাই স্বামীর স্বেচ্ছাচারিতাকে তিনি প্রশ্রয় দেন।
‘সংসার’ নিজের এখনো হয় নাই। বিয়ে করবো একদিন। সব মেয়ের মতো আমিও ভাবি আমার ছোট একটা সংসার, গোটা তিনেক তুলতুলে ছান্য থাকবে অফিস থেকে আমার ‘সে’ আর আমি একসাথে বাড়ি ফিরব সুখে দুখে একসাথে দুজনের পাশে থাকব এবং এভাবেই একসাথে জীবন নামক কন্টকময় সময় পাড়ি দিয়ে পরকালেও যেন সেই তাকেই পাই এমনই চাইবো সৃষ্টিকর্তার কাছে। অধিকাংশ নারীর মধ্যে আসলে এমন ভাবনা থাকে। আর পুরুষরাও বিয়ে করার সময় ডমিনেট করতে পারবে এমন নারীদেরই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু নারীরা আসলে বিয়ের পর একটা সংসারের বাস্তবতাকে আসলে যাচাই করে দেখেন না কিংবা দেখতে চান না।
অনেক নারীকে নিজ বাড়িতেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়। সংগত কারণেই প্রশ্ন আসে, এতো অপমান, অসম্মান, অবহেলা, শারীরিক আঘাতের পরেও কেন সেই সংসারেই তাকে থাকতে হবে? কেন মানসিক জোর হয়ে ওঠে না বের হয়ে আসার? নিজের প্রতি এই চরম অপমান মেনে নেবার যে মানসিকতা তা একজন নারীর মধ্যে কিভাবে শেকড় গাড়ে? আধাসম্মান নিয়ে, মাথা উঁচু করে বাঁচার প্রতি এত অনীহা কেন নারীর? যুগ যুগ ধরে সমাজে বহমান নারীর এ মানসিক বৈকল্যর জন্য দায়ী। কে? আসনে সংসার সম্পর্কে নারীকে প্রাথমিক ধারণা দেন মা। নারীর ভাবনার জগতে মায়ের প্রভাব অনেক। ডিভোর্সি হলেই তার চরিত্র ব্যবচ্ছেদ করার মতো সাহস আসলে কেউ পায় কিভাবে?
আসলে মেয়েদের ভাবনা গাড় ওঠে মায়ের সান্নিধ্যে। মেয়েদের আত্মসম্মান গড়ে তোলা এবং নষ্ট করা এই উভয়ের কারণই। এই ‘মা’ দামি শাড়ি, গয়না আর গাড়ি-বাড়ি যে পরের ছেলের ঘাড়েতে বসেই আদায় করতে হবে, এই ধারনা একটা মেয়ে কার থেকে পায়? ম্যাকের লিপস্টিক স্বামী কিনে দিবে, কিভাবে এই ধারণা মেয়ের মধ্যে আসে? স্বামী নিজের থেকে যদি গিফট করে সে প্রসঙ্গ ভিন্ন। স্বামী উপহার দিতেই পারেন। কিন্তু সেই দিবে, আর ওয়াইফ হিসেবে সে শুধু নিবে, কে বলেছে? বিয়ে টিকিয়ে না রাখলে যে সমাজ, আত্মীয়দের কাছে মুখ দেখানো যাবে না -এই কথাটা একটা মেয়ে সর্বপ্রথম কার থেকে শেখে? এখানে ভাবতে হবে, নারীর চরিত্র প্রসঙ্গে নোংরা আলাগও শেষ পর্যন্ত মায়েদের বয়সীরাই টেনে আনে। অর্থাৎ যারা শিক্ষক বা শিক্ষাবাহক তাদের অধিকাংশই সামাজিকভাবে নারীর এই পথচলায় বাঁধা। মায়ের এভাবেই আমাদের আত্মসম্মানবোধটাই নষ্ট করে দেয়। মেয়েকে শেখায় না নিজের পায়ে দাঁড়াও। মাথা উঁচু করে বাঁচো। অন্যায়ের প্রতিবাদ করো। বলে না স্বামীর অন্যায় আচরণ মেনে নিও না। বলে না নিজের খরচ নিজে চালাও, অর্থনৈতিকভাবে নিজের উপর ভরসা করো, স্বামীর উপর না… এমন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্যারেন্টিং এর ক্ষেত্রে আপনার মেয়ের মধ্যে অন্যায় মেনে না নেবার প্রবণতা ভেতরে গেঁথে দেন। তাকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলেন ভার নিজের স্বার্থেই। তাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী যে হতেই হবে, এর কোন ছাড় নাই তা শিশুকালেই বুঝিয়ে দেন। মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে নিজেকে নিজেই দেখে রাখতে পারবে, সবশেষে দেখে রাখতে পারবে আপনাকে। মেয়েকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুললেই বোধ হয় একো ঈর্ষণীয় একটা প্রতিশোধ নেয়া যায়। অন্তত পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে এমন ঘটনার অভাব নেই। অনেক ক্ষেত্রেই খুঁজে পাওয়া যাবে এ নজির।