Skip to content

২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গর্ভের দুর্গাকে হত্যা নয়, পথের দুর্গাকে ধর্ষণ নয়

দুর্গা নামটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা দশভূজার দেবীপ্রতিমা। তাঁর দশ হাতে দশ রকম অস্ত্র, এক পা সিংহের পিঠে, এক পা অসুরের কাঁধে। দশ হাতের ১০ রকমের অস্ত্র দিয়ে তিনি এই পৃথিবীকে রক্ষা করেন ও অসুরদের বিনাশ করেন।

মা দুর্গা কিংবা অসুর আমাদের সমাজে রয়েছে। প্রত্যেকটা নারীর মধ্যেই মা দুর্গার শক্তি রয়েছে। প্রত্যেকটা নারীর মধ্যেই মা দুর্গার রূপ রয়েছে। মা দুর্গার গুণ রয়েছে। রয়েছে মা দুর্গার মতো ধৈর্য্য, রয়েছে ক্ষমতাও। তেমনি মানুষরূপে অসুরগুলো আমাদের আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনো আমরা দেখতে পাচ্ছি, কখনো পাচ্ছিনা।
তারা সমাজে এমন ধরনের হিংস্র বিষাক্ত নোংরা অপকর্ম চালাচ্ছে তা কল্পনারও ঊর্ধ্বে। এই মানুষরূপী অসুর গুলো কখনো বা হত্যা করছে গর্ভের দুর্গাকে। কখনো বা ধর্ষণ করছে পথের দূর্গাকে।

সমগ্র বিশ্ব আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। আইন ও অনেক শক্ত পোক্ত হয়েছে। নিয়ম শৃঙ্খলাও বেশ কঠিন। তবুও অসুরদের মনে নেই কোন ভয়, নেই কোন সংশয়। কোনো নারীকে সম্মান তো অনেক দূরের বিষয়। সব সময় তাদের চোখে মুখেই ফুটে উঠে ধর্ষণের প্রতিচ্ছবি। রাতের আঁধার এ তো অনেক দূরের বিষয় দিনেও নারীরা নিরাপদ নয়। এতগুলো অন্যায় করার চিন্তা করতেও যেখানে ভয় লাগার কথা সেখানে নির্দ্বিধায় এত বড় অন্যায়টি করেই ফেলছে।

গর্ভাবস্থায় একটা নারীকে সবসময় অনেক বেশি যত্নে রাখা উচিত রাখা উচিত। স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা প্রয়োজন এই সময়ে। এই গর্ভাবস্থা একজন নারীর জন্য সবচেয়ে কঠিন ও সুন্দর সময়। গর্ভাবস্থায় মধ্য দিয়ে একজন নারী মাতৃত্বের সাধ অনুভব করে। তবে এই অনুভব অনুভূতি কখনো কখনো অভিশাপে রূপ নেয়। যখন জানতে পারে গর্ভের শিশুটি ছেলে নয় মেয়ে। এক নিমিষে যেন কালো আঁধার নেমে আসে সেই নারীটির জীবন। পারিবারিক অনেক চাপে গর্ভের দুর্গাকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে বিসর্জন দিয়ে দিতে হয়।

প্রত্যেকটা নারী দেবী দুর্গার এক রূপ। এই রূপকে আমরা সম্মান না করে বরং তাদেরকে অসম্মান করার কথা ভাবি। মা -মেয়ে-বোন সব রূপেই আছে দূর্গা শক্তি। দেবী দুর্গা দশ হাতে দোষ শক্তিতে যেমন পৃথিবীকে রক্ষা করেন। আমাদের ঘরের দুর্গারাও ঠিক সেই ভাবেই আমাদের সমাজকে রক্ষা করে। আমাদের পরিবারকে রক্ষা করে। কিন্তু সেই সমস্ত কথা ভাবে কে! একটা সমাজ রক্ষা করা উভয় এর দায়িত্ব। কিন্তু এই দায়িত্ব পরিণত হয় অত্যাচারে ও অন্যায়ে।
প্রতি পদে পদে সকল ক্ষেত্রে দোষ শুধু কেবল নারীর। আচ্ছা একটা মায়ের গর্ভে যদি আরেকটা মা দুর্গা থাকে তাহলে দোষ কোথায় বা সমস্যাই বা কোথায়! তাকে কেন পৃথিবীর আলো দেখার আগেই অন্ধকারে বিলীন হয়ে যেতে হবে!
পথের দুর্গা, পথের দুর্গা তো পথে পথেই মুহূর্তে মুহূর্তেই অপদস্তের শিকার হয়। নানান উস্কানি, অপরাধ, অত্যাচার এবং সর্বশেষ ধর্ষণ। কোথাও কি একবারও ভেবে দেখা হয় তার দূর্গাদেবীর স্বয়ং রূপ।

শুধু পথের দূর্গা বা গর্ভের দুর্গাকে নয়। জন্মদাত্রী দুর্গাকেও আমরা ঘরে নয় বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসি। বিয়ে করা বউ রূপী দুর্গাকে অত্যাচার করি। একটা মেয়ের জন্মের পরে তার সম্পর্কের স্তর সময়ের সাথে সাথে প্রয়োজনের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়। কিন্তু কোন স্তরেই সে সম্মানিত বা নিরাপদ নয়।
অথচ আমরা বিশাল আয়োজন করে দেবী দুর্গাকে পূজা করি। এত বিশাল আয়োজন করে পূজা করে দেবী দুর্গাকে শ্রদ্ধা করার পাশাপাশি আমাদের ঘরের দুর্গাকে, আমাদের জীবনের দুর্গাকে, আমাদের সম্পর্কের দুর্গাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা উচিত। তবেই এই পৃথিবীতে এই সমাজের আসল দুর্গার প্রতিষ্ঠা হবে। অসুরদের বিনাশ হবে। সমগ্র বিশ্বে সুখ, শান্তি সমৃদ্ধ ও কল্যাণ হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ