মেকআপে যেভাবে এলো ‘ন্যুড’
সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তনশীল আজকে যেই ধারাটির জনপ্রিয় ৫ বছর পর সেই ধারাটি হতে পারে পুরাতন। সেটা যেকোনো বিষয় হতে পারে কখনো বা পোশাক, কখনো বা সাজসজ্জা, কখনো বা ফ্যাশন। ৭০ আর ৮০-এর দশকে সাজসজ্জা ছিল মেটালিক, গ্লিটারি, ভাইব্রেন্ট মেকআপের যুগ। ৯০–এর দশকে জনপ্রিয়তা পেলো ‘ম্যাট ফিনিশ’ মেকআপ। শূন্য দশকেও দেদার চলেছে ম্যাট ফিনিশ সাথে ছিলো কিছুটা গ্লিটারি। তবে ন্যাচারাল বিষয়টা কি বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে তাই সেটার নাম ছিল ‘ন্যাচারাল মেকআপ’। আর এখন এক যুগ ধরে চলছে ন্যুড মেকআপের চল। করোনাকালীন এটি আরও পরিশীলিত হয়ে নাম পেয়েছে ‘নো মেকআপ’ মেকআপ লুক।
ন্যুড মেকআপের এই ধারা এলো কীভাবে?
‘ন্যুড’ নামটা একজন মার্কিন বিউটি এডিটরের দেওয়া। নিউইয়র্ক থেকে মিলান হয়ে প্যারিস—ফ্যাশনের রাজধানীগুলোয় নামটা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। নামটা উদ্যাপিত হয়েছে বিশ্বের বড় বড় ফ্যাশন উৎসবে। আর ফ্যাশন ম্যাগাজিন, ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমের কল্যাণে সেই নাম ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।
৯০–এর দশকে মেকআপের ক্ষেত্রে হঠাৎ আমূল পরিবর্তন আসে। তখন থেকেই জনপ্রিয়তা পেতে থাকে ‘ন্যাচারাল লুক’। এতে ত্বকের রঙের মেকআপ–সামগ্রী ব্যবহৃত হতে থাকে। যাঁর যেটা স্বাভাবিক সৌন্দর্য, সেটাকেই প্রকাশ করা হয় মেকআপে। সেই সৌন্দর্যের মধ্যে ছিল এক ধরনের মুগ্ধতা। এই ধারণাকে সাদরে গ্রহণ করেন সৌন্দর্য অঙ্গনের রথী–মহারথীরা। ন্যুড মেকআপ মানেই এখানে ব্যবহার করা হবে হালকা সব রং। তা–ও আবার ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে। লিপস্টিক থেকে শুরু করে, আইশ্যাডো— সবকিছুতেই ব্যবহার করা হয় হালকা রং, যাতে ফুটে ওঠে ‘ক্লাসি লুক’। এটাই ন্যুড মেকআপের বিশেষত্ব। যেহেতু, মেকআপটা আলাদা কোনো লুক দেয় না, আবার যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে মানুষের নিজস্ব সৌন্দর্যকেই তুলে ধরা হয়, তাই পশ্চিমা বিশ্বে একে ন্যুড নামে ডাকা শুরু হয়। মেকআপে ‘নেক্সট টু নাথিং’ ভাবটা বজায় রাখা হয় অর্থাৎ লুকটা এমন হয় যে দেখে মনে হয় প্রায় কোনো মেকআপই ব্যবহার করা হয়নি। এ ধরনের মেকআপের জন্য ন্যুডের চেয়ে মানানসই নাম আর কি হবে!
‘নো মেকআপ’ মেকআপ লুক
ফ্যাশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ইনস্টাগ্রাম, বিউটির ক্ষেত্রে সেটি টিকটক।
২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত টিকটক অ্যাপটি ডাউনলোড করা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটিবার। ২০১৮ সালের শুরু থেকে টিকটকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান বিউটি ইনফ্লুয়েন্সাররা। তরুণ ইনফ্লুয়েন্সাররা একেবারেই নিজেদের স্বাভাবিক চেহারায় হাজির হয়ে পান মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ। লাভ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ফলে ‘ন্যুড মেকআপ’ আরও একধাপ এগিয়ে জনপ্রিয়তা পায় ‘নো মেকআপ’ লুক। এতে অনেক মেকআপ–সামগ্রী ব্যবহার করা হলেও দেখাবে এমন যেন কোনো মেকআপই করা হয়নি।
তবে এই ধরনের মেকআপ করার জন্য অবশ্যই ত্বক যেন স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ এবং উজ্জ্বল হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ‘নো মেকআপ’ মেকআপ লুক করার আগে কিংবা ‘ ন্যুড ‘ মেকআপ করার আগে অবশ্যই ত্বকের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন ত্বকে কোন জেল বা টোনার ব্যবহার করা মেকআপ করার আগে ত্বকে হালকা বড় দিয়ে নেওয়া এই বিষয়গুলোর একটু অবলম্বন করা উচিত।
তবে ‘ন্যুড’ বলুন বা ‘নো মেকআপ মেকআপ লুক’—দুই
ধরনের মেকআপই যথেষ্ট দামি। আর দুটোতেই পর্যাপ্ত পরিমাণ মেকআপ–সামগ্রীর ব্যবহার হয়। কেননা, এই মেকআপের মূল উদ্দেশ্য হলো, আগে চেহারার অসুবিধা বা ক্রুটিগুলো ঢাকা। তারপর, স্বাভাবিক সৌন্দর্যটাই বাড়িয়ে তোলা। আবার ফিনিশিংটাও খুবই নিখুঁত হওয়া চাই। কেননা, দেখে তো মনে হতে হবে যে তেমন কোনো মেকআপই করা হয়নি! ফলে গ্লসি, মেটালিক বা ভাইব্রেন্ট মেকআপের চেয়ে এখানে মেকআপ–সামগ্রী বেশি লাগে।
তাই মেকআপ পণ্যের পাশাপাশি ত্বকের যত্নের বোনের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে।
সূত্র – উইকিপিডিয়া