আফ্রিকার হস্তশিল্পের ঐতিহ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া
আধুনিক এ ফ্যাশনের যুগে হাতের কাজের কদর কমে চলেছে৷ আফ্রিকার এক নারী প্রাচীন সেই শিল্প বাঁচিয়ে রেখে আধুনিক ফ্যাশনের জগতে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্রত নিয়েছেন৷
নিখুঁত হাতের কাজ, সুন্দর করে বোনা হয়েছে৷ কিন্তু আজকের যুগে কেই বা নিজের হাতে ক্রোশে বা মাক্রামে তৈরি করে? হেনরিয়েটা আগিয়েকুমহেনে কিন্তু নিজের ডিজাইনে এমন চিরায়ত কৌশল ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘কৌশলগুলি বহু প্রজন্ম আগের হলেও আমার ডিজাইন আধুনিক বাজারের কাছে আকর্ষণীয়৷ এমন ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমার মতো মানুষের আগ্রহ দেখলে আপনারও প্রেরণা পাওয়া উচিত৷ মনে হতে পারে, সে করলে আমিও পারবো৷”
গবেষণায় দেখা গেছে ক্রোশেইং বা মাক্রামের কাজ করলে মন শান্ত হয়, স্ট্রেস কমে যায়, একাগ্রতার উন্নতি হয়৷ সেই কাজ এমনকি উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার উপসর্গও কমিয়ে দেয়৷ কিন্তু হেনরিয়েটা কেন এমন মান্ধাতার আমলের কাপড় তৈরির প্রক্রিয়ার দিকে ঝুঁকালেন? কীভাবেই বা সেই উদ্যোগ শুরু হলো? সেই উদ্যোগের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘হাতে করে কোনো কিছু তৈরি করার আইডিয়া আমার ভালো লাগে৷ দাদি-নানীর সঙ্গে বড় হয়ে ওঠার সময়ে আমি দেখেছি, তাঁরা কীভাবে নিজেদের জন্য জিনিসপত্র তৈরি করেছেন৷ তাঁরা বিডস, চোকার তৈরির প্রক্রিয়া শিখেছেন৷ শখ হিসেবেই তাঁরা এ সব করতেন৷ বড় হওয়ার সময়ে আমি এমন কিছু জিনিস উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি৷ মাক্রামে, ক্রোশে ও অন্যান্য সামগ্রী পেয়ে খুব ভালো লেগেছে৷ আমার মতে, ঐতিহ্যবাহী বুননের কৌশল বিষণ্ণতা ও স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে৷ হাতের আঙুল, সুতা এ কর্ডের সঞ্চালনের প্রক্রিয়া সত্যি অত্যন্ত ইন্টারেস্টিং৷তার জন্য গভীর মনোযোগ ও একাগ্রতার প্রয়োজন৷একটি সারি থেকে শুরু করে দ্বিতীয় সারিতে পৌঁছানো যায়৷ তারপর নিজের মনের সাধ অনুযায়ী কাপড় সৃষ্টি হয়৷ আমার ক্ষেত্রে এভাবে স্ট্রেস, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা দূর হয়৷ ”
হেনরিয়েটা সমন্বিত গ্রামীণ শিল্প ও শিল্পখাত নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ তন্তু ও কাপড় তাঁর বিশেষ আগ্রহের বিষয়৷ ‘কায়াদুয়া এক্সপিরিয়েন্স’ নামের প্রথম উদ্যোগে তিনি হাতে গোনা কিছু মানুষের সামনে নিজের ডিজাইন তুলে ধরেছেন৷কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঐতিহ্য আবার চাঙ্গা করে তুলতে তাঁর প্রচেষ্টা কীভাবে সাহায্য করবে? ক্রেতা হিসেবে ডানিয়েলা ওহেমেং মনে করেন, ‘‘কায়াদুয়া ব্র্যান্ডের বৃদ্ধির পেছনে প্রচলিত ঐতিহ্যগত কৌশলের আধুনিকীকরণ কাজ করেছে৷ কাপড় ছুঁলেই বুঝবেন, সবটাই হাতে তৈরি৷ তিনিই আফ্রিকার নারীর ভাষা বলছেন৷ বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট জগতের নারীদের ভাষা কণ্ঠ তুলে ধরছেন৷ আমার মতে, সবার কায়াদুয়া প্ল্যাটফর্মে থাকা উচিত৷”
হেনরিয়েটা আগিয়েকুমহেনে নিজের উদ্যোগের একাধিক দিক তুলে ধরলেন৷তিনি বলেন, ‘‘কায়াদুয়া এক্সপিরিয়েন্সের আয়োজক হওয়ার প্রধান কারণ হলো আদানপ্রদানের ইচ্ছা৷ কারিগরদের সঙ্গে কাজের সুবাদে তাদের সঙ্গে অনেক কথা হয়৷ আমি তাদের সঙ্গ খুব উপভোগ করি৷ কায়াদুয়া মূলত অনলাইন ফ্যাশন ব্র্যান্ড হিসেবে কাজ করেছে৷ আমি চেয়েছিলাম, মানুষ এসে ডিজাইন, মেটিরিয়াল ও বর্ণাঢ্য রং সম্পর্কে সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতার স্বাদ নিক৷ আমি মাক্রামেও ব্যবহার করি৷ পিন নয়, শুধু হাত দিয়ে বোনা হয়৷ সেই কাপড় দিয়ে ল্যাম্পশেড, চটি, জামাকাপড় তৈরি করা যায়৷ মাক্রামে নানা ভাবে কাজে লাগানো যায়৷ ক্রোশেইং-ও আছে৷ আমরা জামাকাপড় তৈরির কাজে সেই কৌশল প্রয়োগ করি৷ কায়াদুয়ায় এভাবেই আমরা আমাদের পণ্য তৈরি করি৷”
সময়হীন ডিজাইনের কারণে হেরিটেজ পণ্য খুবই টেকসই৷ এমনকি দুই দশক পরেও তাঁর পণ্যগুলি অনন্য ও ফ্যাশনদূরস্ত থেকে যাবে৷
অনন্যা/এআই