Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউরোপে জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রান্সের ‘জার্মান পিৎসা’

অ্যালসেশিয়ান কুকুরের কথা প্রায় সবাই জানে৷ ফ্রান্সের সেই অঞ্চলের একটি পদ ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও বিশ্বের অনেক প্রান্তে এখনো অজানা থেকে গেছে৷ পিৎসার মতো দেখতে সেই পদের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে৷

ফ্রান্সের তার্ৎ ফ্লঁবে-কে ইটালির পিৎসার জবাব হিসেবে গণ্য করা হয়৷ আলসাস প্রদেশের সেই পদের স্থানীয় নাম ফ্লামেক্যুশে৷ তার্ৎ ফ্লঁবে তৈরির সময়ে সঠিক উপাদান অত্যন্ত জরুরি৷ সেই সঙ্গে আরেকটি বিষয় আরো গুরুত্বপূর্ণ৷ শুধু কাঠের চুলায় সেটি প্রস্তুত করা হয়৷

‘ল্য তিগ্র’ রেস্তোরাঁর মালিক জফ্রোয়া ল্যবোল বলেন, ‘‘তার্ৎ ফ্লঁবে এমন এক পদ, যা সকলে মিলে খায়৷ ছয় জন লোকের সঙ্গে ভাগ করে সাধারণত সেটি খাওয়া হয়৷”

ফলে শুরুতেই নানা ধরনের তার্ৎ ফ্লঁবে অর্ডার দেওয়া হয়৷ কিন্তু খাঁটি তার্ৎ ফ্লঁবে কীভাবে তৈরি করা হয়? সেই পদ পরিবেশনের ঐতিহ্যই বা কী রকম? একে একে সেই বিষয়গুলি জানা যাক৷

ফ্রান্সের পূর্বে আলসাস অঞ্চলের স্ট্রাসবুর্গ শহরে যাওয়া যাক৷ অতীতে বার বার সেই এলাকা হাতবদল হয়েছে৷ কখনো জার্মানি, কখনো ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে থেকেছে আলসাস৷ ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে সেটি ফ্রান্সেরই অংশ৷ সেখান থেকেই তার্ৎ ফ্লঁবে-র উৎপত্তি৷ অ্যামেরিকায় পদটি ‘জার্মান পিৎসা’ হিসেবে পরিচিত৷ ‘ল্য তিগ্র’ নামের রেস্তোরাঁয় কাঠের ওভেনে চিরায়ত পদ্ধতিতে সেই পদ প্রস্তুত করা হয়৷ জফ্রোয়া বলেন, ‘‘আগুন তার্ৎ ফ্লঁবে-র মধ্যে স্মোকি স্বাদ আনে এবং মচমচে সোনালী করে তোলে৷ গ্যাস বা ইলেকট্রিক ওভেন ব্যবহার করলে পদটি কখনোই এমন সোনালী হলুদ রং পেতো না৷”

হাতে মাখা ময়দার তাল দিয়ে জফ্রোয়া ল্যবোল গোটা প্রক্রিয়া শুরু করেন৷সেই তালের জন্য আমাদের ময়দা, পানি, বিয়ার, সাওয়ার ডো, ইস্ট, সূর্যমুখী ফুলের তেল এবং লবণ লাগে৷

খেয়াল করলে বোঝা যাবে, পাউরুটির তালের জন্যও প্রায় একই উপকরণ লাগে৷ অতীতে অনেক গ্রামে মানুষ সপ্তাহে একবার পাউরুটি তৈরির জন্য মিলিত হতেন৷ কারণ গ্রামে প্রায়ই একটাই মাত্র ওভেন থাকতো৷ পাতলা তার্ৎ ফ্লঁবে তাপমাত্রা পরীক্ষার কাজে সাহায্য করতো৷ সেটি খুব দ্রুত প্রস্তুত হয়ে গেলে রুটিকে অপেক্ষা করতে হতো৷

কিন্তু ‘ল্য তিগ্র’ রেস্তোরাঁর মাখনের তালে কেন বিয়ার যোগ করা হয়? জফ্রোয়া বলেন, ‘‘বিয়ার যোগ করলে বেশি ইস্টের প্রয়োজন হয় না৷ তাছাড়া ময়দার তালে বিশেষ এক স্বাদ যোগ হয়৷”

জফ্রোয়া সেই ময়দার তাল পাতলা করে বেলে নেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথমবার বেলার পর সেই তাল প্রায় দুই মিলিমিটার পুরু হয়৷ দ্বিতীয়বারের পর সেটা মাত্র এক মিলিমিটার হয়ে যায়৷ এভাবে আমরা তার্ৎ ফ্লঁবে খুব দ্রুত প্রস্তুত করতে পারি৷ ওভেনের তাপমাত্রা অনুযায়ী এক বা দেড় মিনিট সময় লাগে৷”

তার্ৎ ফ্লঁবের ভিত্তি হলো এক ক্রিম৷ ডিমের কুসুম, লবণ, স্টার্চ, গোলমরিচ এবং জায়ফল একসঙ্গে মিশিয়ে তাতে পরিমাণ মতো ক্রেম ফ্রেশ ও কোয়ার্ক যোগ করা হয়৷ সেই ক্রিম বেলে নেওয়া ময়দার তালের উপর সমানভাবে মাখনো হয়৷ তার উপর শুধু আলসাস অঞ্চলের চিরায়ত পিঁয়াজ ও বেকনের ছোট টুকরো ছড়িয়ে দেওয়া হয়৷ জফ্রোয়া ল্যবোল মনে করেন, ‘‘এটা আসলে খুব সহজ এক পদ৷ আসলে সেটি গ্রামাঞ্চল থেকে, চাষিদের কাছ থেকে এসেছে৷ সবাই মিলে সেই পদ ভাগ করে খেতো৷ সামাজিক অবস্থান যেমনই হোক না কেন, আলসাসের সব স্তরের মানুষই এই পদ খেতে ভালোবাসে৷”

একবার ওভেনে ঢোকানোর পর সবকিছু খুব দ্রুত গতিতে চলে৷ ৩৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মিনিট পরই সেটি মচমচে হয়ে ওঠে৷

ঐতিহ্য অনুযায়ী কাঠের পাতলা তক্তার উপর তার্ৎ ফ্লঁবে পরিবেশন করা হয়৷ আধুনিক হাইজিনের বিধির সঙ্গে সেই ঐতিহ্য খাপ না খেলেও তাতে সেখানকার মানুষের কিছুই এসে যায় না৷ বরং সবাই মিলে হাতে করে সেই পদ ভাগ করার রীতিই বেশি গুরুত্ব পায়৷

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ