Skip to content

২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম: ভালো থাকবেন যেভাবে

বর্তমানে নারীদের হরমোনজনিত একটা সাধারণ অসুস্থতা হলো পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা পিসিওস। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনে ২ জন নারী এই পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম অসুখে আক্রান্ত। হরমোনজনিত অসুখ হওয়ার কারণে নারীরা সাধারণত বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। কিছু নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব।

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম কী

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) হল নারীদের মধ্যে অ্যান্ড্রোজেন (পুরুষ হরমোন) এর মাত্রা বেড়ে যাবার জন্য কিছু উপসর্গের সমাহার। পিসিওএস আসলে একটি হরমোনজনিত ব্যাধি। সাধারণত সুস্থ নারীদের ডিম্বাশয় প্রত্যেক মাসে একটি করে ডিম্বানু ছেড়ে থাকে। এটি গর্ভদশা চলাকালীন পরিণত হয় নতুবা নির্মূল হয়ে একটি সাধারণ মাসিক চক্রের রূপ নেয়। কিন্তু যখন মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় তখন অ্যান্ড্রোজেন হরমোন আধ্যিকের কারণে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বড় হয়ে ডিম বের হওয়ার কথা, তাতে বাধা সৃষ্টি হয় এবং এভাবে একসময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পিসিওএসে আক্রান্ত নারীদের ডিম্বানুগুলি সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠে না অথবা নিয়মিত ডিম্বস্ফোটন চক্রের সময় ডিম্বানু ছাড়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে নিয়মিত ঋতুচক্র বাধাগ্রস্থ হয়।
পিসিওএস-এ আক্রান্ত বেশিরভাগ নারীদের মধ্যে উচ্চ মাপের আন্ড্রোজেন অথবা পুরুষ হরমোনগুলোর উপস্থিতি থাকে। এই রোগের বেশিরভাগ বাইরের ও ভেতরের সমস্যাগুলি আন্ড্রোজেন বুদ্ধিজনিত সমস্যার সঙ্গে জড়িত। জিনগত ও পরিবেশগত কারণের মিলিত প্রভাবে পিসিওএস হতে দেখা যায়।
পলি কথার অর্থ অনেক সুতরাং পলিসিস্টিক মানে হল অনেকগুলো সিস্ট। পিসিওএসের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল জরায়ু থেকে ডিম নির্গত না হওয়া। তার পরিবর্তে যা ঘটে তা হল ডিমের চারপাশে তরল জমে সেগুলো সিস্টে পরিণত হয়। যদিও এই বৈশিষ্ট্যের কারনে একে পলিসিস্টিক ডিসওর্ডার বলা হয় তবুও অনেকক্ষেত্রেই সব মেয়েদেরই ডিম্বাশয়ে একাধিক সিস্ট নাও থাকতে পারে না। যেহেতু একাধিক কারনে পিসিওএস হয়ে থাকে তাই এর একক কোন চিকিৎসা নেই।
১৮ থেকে ৪৪ বছরের মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ এন্ডোক্রিন প্রন্থির রোগ হল পিসিওএস। এই বয়সের প্রায় ২% থেকে ২০% নারী এই অসুখে আক্রান্ত। এই রোগের একটি প্রধান কারণ হল হরমোনের অসামঞ্জস্যতার জন্য নারীদের শারীরিক উর্বরতা কমে যাওয়া। বর্তমানে যাকে পিসিওএস বলা হয় সেই রোগের প্রাচীনতম বর্ণনা পাওয়া যায় ১৭২১ সালে ইটালিতে।

লক্ষণ ও উপসর্গ

এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কারো কারো একটি দুটি উপসর্গ থাকতে পারে আবার কারো অনেকগুলো উপসর্গ থাকতে পারে। এমনকি একজন মেয়ের মধ্যেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ বেড়ে যেতে বা কমে যেতে দেখা যায়। পিসিওএস এর সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলো নিম্নরূপঃ
ঋতুস্রাবের ব্যাধি: অধিকাংশ সময়ে পিসিওএস এর জন্য দেখা যায় অলিগোমেনোরিয়া (এক বছরে নয়ের কম ঋতুচক্র) বা অ্যামেনোরিয়া (পর পর তিন বা তার বেশি মাস ধরে কোন ঋতুস্রাব না হওয়া), কিন্তু অন্য কিছু কিছু ঋতুস্রাবের ব্যাধিও দেখা দিতে পারে।
উচ্চ মাত্রায় পুরুষ হরমোন। এটিকে ইংরেজিতে বলা হয় হাইপারঅ্যান্ড্রোজেনিজম। নারীর শরীরে উচ্চ মাত্রায় পুরুষালী হরমোন নিসৃত হওয়ার ফলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায় যেমন:
ব্রণ ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে বা পূর্বে তুলনায় বেড়ে যেতে পারে বা নতুন করে দেখা দিতে পারে।
হিরসুটিজম শরীরে পুরুষের মত লোম, যেমন গালে এবং বুকে লোম ওঠা। তবে অন্য জাতির থেকে পিসিওএস আক্রান্ত এশিয়ানদের হিরসুটিজম হবার সম্ভাবনা কম।
হাইপারমেনোরিয়া- অতিরিক্ত এবং বেশিদিন চলা রক্তস্রাব,অ্যান্ড্রোজেনিক আঅ্যালোপেশিয়া চুল পাতলা হয়ে যাওয়া বা বিক্ষিপ্তভাবে চুল উঠে যাওয়া উপর্যুক্ত লক্ষণগুলো ছাড়াও আরো অন্য কিছু লক্ষণ ও আসতে পারে পিসিওএস সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে এবং রোগী যদি স্বাস্থ্যবান হতে থাকেন, তাহলে দীর্ঘকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে। পিসিওএসের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য যে লক্ষণগুলো জটিলতর অবস্থায় দেখা যায় সেগুলো হল:
টাইপ-২ বহুমূত্র রোগ ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন প্রতিরোধ্যতা, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস অতিস্থূলতা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হৃদরোগ মেটাবলিক সিনড্রোম স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস মেজাজ পরিবর্তন যেমন ডিপ্রেশন, এ্যাংজাইটি অথবা খাদ্য গ্রহণে ব্যতয় ইত্যাদি জরায়ুর ক্যান্সার। গর্ভপাত হবার সম্ভবনা দেখা দেয়। প্রি-একলাম্পশিয়া উচ্চ রক্তচাপ।

PCOD এর চিকিৎসা?
PCOD এর নিরাময় এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। যাইহোক, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের সাথে, আপনি এই অবস্থা পরিচালনা করতে পারেন। আপনার স্বাস্থ্যসেবা দল সম্ভবত PCOD-এর জন্য বহু-বিষয়ক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করবে। এতে একজন গাইনোকোলজিস্ট, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, ডায়েটিশিয়ান, নস্করত্ব বিশেষজ্ঞ এবং চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
আপনার উপসর্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এবং পরিচালনা করার সবচেয়ে ব্যবহারিক উপায়গুলির মধ্যে একটি হল সঠিক ওজন ব্যবস্থাপনা। আপনি কি জানেন যে আপনি 5% ওজন কমাতে পারলেও, এটি আপনার চিকিৎসাকে সহজ এবং আরও কার্যকর করবে? তাই যেসব নারীদের PCOD আছে আদের অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসে বজায় রাখতে হবে। আপনার যদি এই অবস্থা থাকে তবে আপনার কার্বোহাইড্রেট এবং চিনির পরিমাণ কমিয়ে নিন এবং আরও উচ্চ ফাইবার এবং উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে ভুলবেন না।

PCOD চিকিৎসার জন্য ওষুধ এবং সার্জারি

পরামর্শের পরে, আপনার ডাক্তার আপনার মাসিক চক্র সংশোধন করার জন্য বিভিন্ন ওষুধের সুপারিশ করবেন। তিনি যেমন ওষুধ লিখতে পারেন। সম্মিলিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধ- এই বড়িগুলিতে প্রোজেস্টিন এবং ইস্ট্রোজেন থাকে যা পুরুষ যৌন হরমোনগুলির উৎপাদন হ্রাস করে এবং আপনার হরমোনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে যা ফলিকলগুলিকে ডিম ছেড়ে দেয়, ব্রণ তৈরি করে এবং অতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
প্রোজেস্টিন থেরাপি- আপনার ডাক্তার আপনাকে প্রতি মাসে বা দুই মাসে দশ থেকে চৌদ্দ দিনের জন্য প্রোজেস্টিন গ্রহণ করার পরামর্শ দেবেন এবং এই ওষুধে আপনার মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ ও সংশোধন করুন।
অপরিণত ফলিকল চিকিৎসা- আপনার এন্ডোক্রিনোলজি উন্নত করতে এবং ডিম্বাশয়ে ফলিকলের সংখ্যা হ্রাস করার জন্য আপনার ডাক্তার অপরিণত ফলিকল অ্যাসপিরেশন PCOS চিকিৎসার সুপারিশ করতে পারেন, এইভাবে গর্ভাবস্থার সুবিধা হয়।
আপনার ডাক্তার ডিম্বস্ফোটনের উন্নতির জন্য ক্রোমিফেন, সেট্রোজোল, মেটফর্মিন এবং গোনাডোট্রফিন জাতীয় ওষুধের পরামর্শ দেবেন। চুলের বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করার জন্য, আপনার ডাক্তার বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, স্পিরোনোল্যাকটোন এবং ইফ্লোরনিখিন লিখে দেবেন। যদিও সার্জারি পছন্দের তাৎক্ষণিক বিকল্প নয়, আপনার ডাক্তার, গুরুতর ক্ষেত্রে, ল্যাপারোস্কোপিক ওভারিয়ান স্লিপিং করতে পারেন, যা ডিম্বস্ফোটনকে ট্রিগার করতে সাহায্য করবে, অর্থাৎ ডিম্বাশয় থেকে ডিমের মুক্তি।

PCOD এর চিকিৎসার জন্য ডায়েট

যদিও PCOD-এ ভূগছেন এমন মহিলাদের জন্য অনেক লাইফস্টাইল সুপারিশ করা হয়, আপনাকে কম চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেট সামগ্রী সহ PCOD ডায়েট অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা হয়। এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রার কোনো আকস্মিক উত্থান রোধ করবে এবং আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। যে খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে

  • প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত খাবার
  • পালং শাক, কালে এবং অন্যান্য শাক
  • উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার
  • ব্রকলি এবং ফুলকপি
  • বাদাম এবং legumes
  • মাছ
  • পুরো শস্য
  • কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার

PCOD এর জন্য কোন ব্যায়াম সবচেয়ে ভালো?

আপনি যদি PCOD-এ ভুগছেন, তাহলে আপনার প্রথম কাজ হল আপনার বডি মাস ইনডেক্স (BMI) কমানো। আপনি বিবেচনা করতে পারেন যে ব্যায়াম বিভিন্ন ধরনের:

  • উচ্চ-তীব্রতা ব্যবধান প্রশিক্ষণ (HIIT)
  • কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্কআউট
  • শরীর-মনের ব্যায়াম
  • শক্তি প্রশিক্ষণ
  • ব্যবধান প্রশিক্ষণ
ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ