Skip to content

১৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গার্মেন্টসে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে

গার্মেন্টসে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে

তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। বিশেষজ্ঞদের মতে অটোমেশন ও অন্যান্য খাতের তুলনায় মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় এই খাতে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ অনেক কমে গেছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, পোশাক খাতে নিযুক্ত মোট শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা কমে ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ একসময় পোশাক খাতের মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি ছিলেন নারী। বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্চল থেকে রাজধানীতে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করতেন তারা এই খাতে কাজ নিতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে অন্যান্য খাতে চাকরির সুযোগ খুব সীমিত থাকায় আশির দশকে মূলত অদক্ষ নারী শ্রমিকরা পোশাক খাতের হাল ধরেন।

একসময় দেশের মাথাপিছু আয় অনেক কম হওয়ায় নারী শ্রমিকরা কম বেতন হলেও চাকরি নিতে আগ্রহী ছিলেন। এরপর বহু বছর ধরে পোশাক খাতে পুরুষ শ্রমিকের বিপরীতে গড়ে অন্তত দুজন নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হতো। সাম্প্রতিক সময়ে এই অনুপাত কমেছে। নারীদেরও আগ্রহ কমে গেছে। তারা কারখানায় শ্রম দেওয়ার চেয়ে করপোরেট চাকরিতে বেশি আগ্রহী।

বছরের পর বছর ধরে নারী শ্রমিকদের অবদানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাকের ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। গত পাঁচ দশকে গ্রামাঞ্চলে শ্রমিকদের জন্য প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে তারা এখন জেলা পর্যায়ে বা নিজ শহরে কাজ করতে পারেন। এজন্য অনেকেই এখন পোশাক খাতে কাজ করতে আগ্রহী হন না। অনেক পোশাক কারখানা শ্রমিক সংকটে ভুগছে। এজন্য কেবল নারী নয়, পুরুষরাও এখন পোশাক খাতে কাজ করতে চান না।

কিছু সংকটও রয়েছে। কম মজুরি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কঠিন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ও ভারী যন্ত্রপাতি চালানোর দক্ষতার অভাবে পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা অনেক বছর ধরে কারখানায় কাজ করার পর স্বাবলম্বী হন। তখন তারা উদ্যোক্তা হন অথবা স্বামীর সঙ্গে কৃষিকাজের মতো পারিবারিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতার কারণেও এমনটি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ব্র্যাক ইউনিভাসির্টির সেন্টার ফর অন্টারপ্রেনারশিপ ডেভলপমেন্ট বিভাগের আওতায় তৈরি পোশাক নিয়ে ম্যাপড ইন বাংলাদেশ নামে একটি প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে নারী এবং পুরুষ কর্মীদের অনুপাত শিরোনামে একটি গবেষণায় জানা যায়, ৩৫০০টি কারখানার তথ্যকে বেইজ হিসেবে ধরে দেখা গেছে, নারী শ্রমিকদের হার ৫৮ শতাংশ এবং পুরুষ শ্রমিকদের হার ৪২ শতাংশ। গবেষণায় বলা হয়েছে যে, তৈরি পোশাক শিল্পের ৮০ ভাগ কর্মীই নারী- দীর্ঘদিনের এই ধারণাটি এসেছে আসলে সিউয়িং বা সেলাইয়ে নারী শ্রমিক বেশি থাকার বিষয়টি থেকে। বাস্তবে এই ধারণার পক্ষে তেমন কোন শক্ত প্রমাণ মেলেনি বলেও গবেষণায় বলা হচ্ছে। ম্যাপড ইন বাংলাদেশের যে গবেষণা সেখানে বলা হচ্ছে যে, সবচেয়ে বেশি নারী কাজ করেন উভেন এবং মিক্সড ফ্যাক্টরি বা যেখানে সব ধরণের পণ্য উৎপাদিত হয় এমন কারখানায়। আর নিট এবং সোয়েটার কারখানায় পুরুষ কর্মীদের সংখ্যা বেশি।

তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, শ্রম ঘন খাত হওয়ার কারণে এবং নারী কর্মীদের শ্রম তুলনামূলক সন্তা হওয়ার কারণে এই খাতে নারী শ্রমিকদেরই আধিক্য ছিল। তৈরি পোশাক শিল্পে পুরুষের তুলনায় নারী কর্মীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হলেও এই চিত্রে পরিবর্তন আসছে। বাড়ছে পুরুষ কর্মীদের হার। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং মালিকদের আচরণ এবং কারখানায় নারী বান্ধব পরিবেশ না থাকার কারণে নারীদের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। নারীদের মধ্যে পড়াশুনা জানার হারটা কম। ফলে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের অংশগ্রহণও কমছে।

নারী বান্ধব খাত বলে যে ধারণা ছিল সেটি থেকে সরে এসে সেখানে পুরুষদের সংযোজন বাড়ছে। কারণ অব্যাহতভাবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, পণ্যের মান উন্নয়ন এবং পণ্যের বিশেষায়ন হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়াতে দক্ষ শ্রমিকের দরকার হয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত নারী শ্রমিকরা দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগটি পান না যেটা পুরুষরা পারেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে কারখানাগুলোতে পুরুষদের সুযোগ বাড়ছে।

অন্যদিকে কারখানা গুলো ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কম সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগের দিকে যাচ্ছে। উৎপাদন বাড়াতে মাল্টি টাস্কিং মেশিনারিজ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সেখানেও কাজের সুযোগ কমছে নারীদের। আরেকটি প্রবণতা রয়েছে যে, যারা দক্ষ সেই সব শ্রমিকের সুযোগ বাড়ছে। ফলে এন্ট্রি লেভেলে শ্রমিকদের নিয়োগ কমছে।

বাংলাদেশের যেসব এলাকায় গার্মেন্টস রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রয়েছে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে। এসব জেলায় ৩২শর বেশি কারখানায় কর্মরত রয়েছেন ২৫ লাখের বেশি শ্রমিক। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী রয়েছেন সাড়ে ১০ লাখ এবং নারী কর্মী রয়েছেন ১৫ লাখ। গার্মেন্টস শিল্পে নারীদের যতি আবার বেশি মাত্রায় নিয়োগ করতে হয় তাহলে তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এটি যত দ্রুত করা যাবে সেটি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তত ইতিবাচক হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ