মানুষের আবেগের চাবিকাঠি যেখানে
আমাদের শরীর, মন-মেজাজ, আবেগের পেছনে হরমোনের ভূমিকা কম নয়৷ নির্দিষ্ট কিছু ‘সুইচ’ নির্দিষ্ট হরমোনের নিঃসরণ ঘটিয়ে সুখ, আনন্দ, সুরক্ষা, আত্মতুষ্টি ইত্যাদি নানা অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে পারে।
সব কিছুই সহজ হতো, যদি না এই সুইচটা থাকতো৷ আনন্দের সুইচ। একবার তাতে চাপ দিলেই দুঃখ এবং উদ্বেগ উধাও হয়ে যায়। সারা শরীর জুড়ে আনন্দের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে। সত্যি কিন্তু এমন সুইচ রয়েছে, অন্তত জীববিদ্যার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তো বটেই। সেই সুইচ চালু করার একাধিক উপায় রয়েছে।
মিষ্টি ও নোনতা, সাফল্য ও যৌনক্রিয়া, অ্যালকোহল ও মাদকের পাশাপাশি অনলাইন ও জুয়া খেলাও মনে আনন্দ দিতে পারে৷ এই সব পদক্ষেপ মস্তিষ্কের পুরস্কার কেন্দ্র বলে পরিচিত অংশে ডোপামিন নিঃসরণ করে৷ সেই মেসোলিম্বিক সিস্টেমের মধ্যে নিউরোট্রান্সমিটার থাকে৷
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সে ক্ষেত্রে কি আমরা সত্যি আনন্দ অনুভব করি? বহুকাল ধরে ডোপামিন ‘সুখের হরমোন’ বলে পরিচিত ছিল৷ বাস্তবে কিন্তু সেই হরমোন আমাদের মধ্যে চাহিদা আরো বাড়িয়ে তোলে, অর্থাৎ মনে অভাবের অনুভূতি জেগে ওঠে৷ মুখে চকোলেট ঢোকানোর আগেই ডোপামিনের সুইচ টেপা হয়ে যায়৷ প্রথম চকোলেট খাওয়ার আগেই দ্বিতীয়টির দিকে আমাদের হাত চলে যায়৷
আরো একটি সমস্যা রয়েছে। ঘনঘন সেই সুইচ টিপলে তার প্রভাব অনেক দুর্বল হয়ে ওঠে। কোনো এক সময়ে গভীর সুখের অভিজ্ঞতা উধাও হয়ে যায় এবং শুধু কিছুটা স্বাভাবিক বোধ করার তাগিদেই আমরা সেই সুইচ টিপতে থাকি। তাই আসক্তিজনিত রোগের ক্ষেত্রে ডোপামিন যে বড় ভূমিকা পালন করে, তা নিয়ে বিস্ময়ের কোনো কারণ নেই।
কিন্তু এ ছাড়া অন্য সুইচও রয়েছে। যেমন অনেক খেলাধুলা করলে এন্ডরফিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটে৷ এর ফলে আমরা প্রাণবন্ত ও উচ্ছাসিত হয়ে উঠি৷ সেইসঙ্গে এন্ডোক্যানাবাইনোড শরীরের পেশির ব্যথাও দূর করে।
অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিশেষ করে স্পর্শ অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়। সেটা আমাদের সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ও বজায় রাখতে সাহায্য করে৷ জীবনসঙ্গী বা সদ্যোজাত সন্তানের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি দেখা যায়। এর ফলে আমরা সুরক্ষা ও আশ্রয়ের অনুভূতি পাই।
নির্দিষ্ট কিছু খাদ্য, খেলাধুলা ও সূর্যের আলো সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সেই হরমোন আমাদের মধ্যে সন্তুষ্টি ও নিজের সঙ্গে একাত্মতার বোধ জাগিয়ে তোলে৷ তবে সেই সব সুইচ স্বয়ংক্রিয় নয়৷ খেলাধুলার জন্য আত্মশৃঙ্খলার প্রয়োজন৷ অন্য মানুষের সঙ্গে আলাপ করতে হলে আমাদেরই সক্রিয় হতে হয়। একমাত্র সঠিক প্রেরণাই লক্ষ্য পূরণের পথ। সেই প্রেরণার জন্য আমাদের এক পরিচিত সুইচের আশ্রয় নিতে হয়৷ আর সেটা হলো ডোপামিন। কারণ অন্য কিছুই আমাদের এত বেশি উদ্বুদ্ধ করতে পারে না।
মোদ্দা কথা হলো, প্রলোভন সত্ত্বেও সুখের অনুভূতির জন্য একটি সুইচের সন্ধানে তেমন ফল পাওয়া যায় না৷ একাধিক সুইচ চালু করলে তবেই সুখ ও আনন্দের পথে অগ্রসর হওয়া যায়।
অনন্যা/এআই