আইভরি কোস্টের এক নারী বিজ্ঞানীর কথা
আইভরি কোস্টের কামারা আজাতা জৈব কীটনাশক উৎপাদন করে অনেকের দুশ্চিন্তা দূর করেছেন৷বিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য ইউনেস্কো পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
কামারা আজাতার বয়স ২৭। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ও টেকসই কৃষির বিষয়ে পিএইচডি করছেন৷ ফাইটোপ্যাথোলজিস্ট হিসেবে তিনি উদ্ভিদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাও করেন।
কৃষির বিষয়ে কামারার বরাবর আগ্রহ ছিল৷ কারণ, তার বাবার একটা খামার ছিল৷ শিশু বয়স থেকেই তিনি বাবার সঙ্গে ক্ষেতের মধ্যে ঘুরতেন৷ তাঁর মতে, কোনো কাজ বেশি করলে তার প্রতি ভালোবাসাও জন্মায়৷ সে সময়ে তিনি ভেবে দেখলেন ইয়াম নিয়ে চর্চা করলে কেমন হয়! কারণ বাসায় তারা সব সময়ে ইয়াম পেতেন৷ সবাই লক্ষ্য করছিল, যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইয়াম বেশিদিন তাজা থাকছে না৷ পচন ধরলে মানুষ শুধু পচা অংশটাই কেটে বাদ দেয়৷ পুরোটাই ফেলে দেওয়া হয় না৷ কারণ সে ক্ষেত্রে বাকি অংশটি বিক্রি করা বা খাওয়া যায়৷
কামারা পাঁচটি ভিন্ন ধরনের ছত্রাক শনাক্ত করেছেন, যেগুলি আইভরি কোস্টে ইয়ামে পচন ধরায়৷ সেই কাজ করতে তাঁর তিন বছর সময় লেগেছে৷ কিন্তু ছত্রাক শনাক্ত করার সময়েই তিনি সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল সন্ধান করছিলেন৷
কামারা ২০২২ সালে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে লোরেয়াল ইউনেস্কো পুরস্কার পেয়েছেন৷ সেই অনুষ্ঠানের দিনে তিনি খুবই চাপের মধ্যে ছিলেন৷ আশেপাশের সবাই তা জানতো৷ কারণ, আইভরি কোস্টেই সেই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, দর্শকরাও সেখানকারই মানুষ৷ সরকারের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন৷ ফলে তিনি প্রবল স্ট্রেস অনুভব করেছেন৷ শেষে অবশ্য তিনি খুশি হয়েছেন৷
কামারা আজাতা যে জৈব কীটনাশক তৈরি করেছেন, সেটা শুধু এসেন্সিয়াল অয়েল, উদ্ভিদের নির্যাস ও পানি দিয়ে তৈরি৷ আর কিছুই নেই৷ যেসব নারী এখানে ইয়াম বিক্রি করেন, তারা প্রথমে এমন কিছুর অস্তিত্বের কথা জেনে খুব অবাক হয়েছিলেন৷ সেটা সত্যি কাজ করবে কিনা, সে বিষয়ে তাঁদের মনে সংশয় ছিল৷ তাদের মনে দুশ্চিন্তা ছিল৷ মনে হয়েছিল, সেই কীটনাশক শুধু তাঁদের ইয়াম ভিজে রাখবে, কোনো ফল পাওয়া যাবে না৷ ফলে আরো লোকসান হবে।
সেই কীটনাশক ব্যবহার করে সত্যি সুফল পেয়ে তারা খুবই খুশি হয়েছিলেন। আরো বেশিদিন স্টকের ইয়াম তাজা রাখার এই বিকল্প পেয়ে তাঁদের সুবিধা হয়েছিল৷ কামারা নতুন কিছু করে সে ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পেরে খুশি হয়েছিলেন।
কামারা আজাতা নিজেকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে এত মাতামাতি আশা করেননি। হাই স্কুলে থাকার সময় মারি ক্যুরি তার আদর্শ ছিলেন। তিনি শ্বেতাঙ্গ ছিলেন৷ কামারার কাছে কোনো তথ্য না থাকায় তিনি জানতেন না যে আফ্রিকার নারীরাও বিজ্ঞান চর্চা করেন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখলেন যে তাঁর বিজ্ঞানের লেকচারাররাও নারী।
কামারা ল্যাবে তরুণী গবেষকদের এক্সপেরিমেন্টের কাজে সাহায্য করেন৷ তিনি তাঁদের কিছুটা কোচিং করার চেষ্টাও করেন৷ কামারার মতে, আফ্রিকার মানুষ হওয়াই তাদের দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ৷ তাই তিনি তাঁদের বলেন, তিনি ডক্টরেট করলে ও বৃত্তি পেলে তারাও সেই সুযোগ পেতে পারেন৷ কারণ তাদের ক্যারিয়ারের পথ প্রায় একই রকম৷ নিজেকে আরো কম বয়সে পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ পেলে কামারা বলতেন, অবশ্যই এগিয়ে যাও, শীর্ষে ওঠার চেষ্টা করো।
অনন্যা/এআই