নিয়মহীন প্রসবে প্রাণ হারাচ্ছে মা ও শিশু
ছোট্ট একটি শব্দ ‘মা’ তবে বিশাল অর্থ এর। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায় গর্ভবতী অবস্থায়। সন্তানের মুখে এই ‘মা’ ডাকটি শুনতে দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রাম করেন প্রতিটি নারী। কিন্তু এই নয় মাস সংগ্রাম কোন সংগ্রাম মনে হয় না যদি একটি মা প্রসবের পরে তার সন্তানের মুখটি দেখে।
কিন্তু এই প্রসবটা সবসময় আনন্দময় নাও হতে পারে। কখনো কখনো হারাতে হতে পারে মা ও শিশুর জীবন।
প্রতিদিন সন্তান জন্মদানজনিত জটিলতায় গড়ে ১৩ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। দেশের মাতৃমৃত্যু হারের কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো বাড়িতে সন্তান প্রসব। গত ২০ বছরে দেশে মাতৃমৃত্যু ৭২ শতাংশ কমেছে। এরপরও প্রতিদিন সন্তান জন্মদানজনিত জটিলতায় মায়ের মৃত্যু হয়।
আজ ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘হাসপাতালে সন্তান প্রসব করান, মা ও নবজাতকের জীবন বাঁচান’।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজার নারী গর্ভধারণ ও গর্ভধারণ সংক্রান্ত কারণে মারা যান বলে জানায় ডব্লিউএইচও। দেশে গত দুই দশকে মাতৃমৃত্যু কমেছে ৭২ শতাংশ। তবে আরও কমিয়ে আনতে চায় সরকার। হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনা খরচে ও নানান সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও অসচেতনভাবে অনেকেই বাড়িতে বাচ্চা প্রসব করানোর চেষ্টা করাতে গিয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটাচ্ছে।
চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস ২০২৩)–এর গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল’ প্রতিবেদন অনুসারে, এখনো বাড়িতে সন্তান প্রসবের হার প্রায় ৩৩ শতাংশ। চারবার বা ততধিক প্রসবপূর্ব সেবা নেওয়ার হার মাত্র ৩৯ শতাংশ। প্রতি হাজার জীবিত শিশু জন্মের বিপরীতে এক মাসের কম বয়সী বা নবজাতক মারা যাচ্ছে ২০ জন। প্রতি লাখ জীবিত শিশু জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান ১৩৬ মা।
বর্তমান সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রসূতি মায়ের দক্ষ সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৭০ জনে নামিয়ে আনার ও নবজাতকের মৃত্যু প্রতি হাজারে ১২ জনের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশু জন্মদানের জন্য গর্ভকালে মায়ের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুব জরুরি। নিরাপদ মাতৃত্ব মাতৃমৃত্যুহার কমায় এবং নবজাতকের মৃত্যু ও দীর্ঘ মেয়াদি অসুস্থতা রোধ করে। মায়ের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে সেটা পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।