লাপাত্তা লেডিস- নারীর পছন্দকে সন্মান করুন
বলিউড দুনিয়ায় আমির খান এবং তার সাবেক স্ত্রী কিরণ রাও দুজনই যেন সত্যিই অসাধারণ। একজন অসাধারণ অভিনেতা আরেকজন অসাধারণ নির্মাতা।
২জনেই যে সিনেমায় হাত দেন সেই সিনেমা-ই যেন সুপারহিট হয়ে যায় এবং এর প্রমাণ মিল্লো আবারো
লাপাতা লেডিস সিনামাটির মাধ্যমে।
লাপাতা লেডিসের নির্মাতা কিরণ রাও প্রযোজনায় আমির খান প্রোডাকশন এবং কিন্ডলিং প্রোডাকশন ৷ সিনেমাটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে এর গল্প ও অভিনয়শিল্পীদের কারণে। নতুন মুখ নিয়েই দারুণ কাজ করেছেন কিরণ রাও, তবে বড় তারকা বলতে একমাত্র রবি কিষাণ রয়েছে সিনেমায়।
মার্চ মাসের ১ তারিখে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এই সিনেমাটি। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আসে ২৬ এপ্রিল। আর ওটিটিতে আসার পরই পরই ঝড় তুলে ফেলে সিনেমাটি । নেটফ্লিক্সে দারুণ সাড়া ফেলেছে সিনেমাটি। এখন নেটফ্লিক্সে স্ট্রিমিংয়ের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে ‘লাপাতা লেডিস।’
ট্রেনের মধ্যে দুই কনের আলাদা হয়ে যাওয়ার গল্প নিয়ে তৈরি কিরণ রাওয়ের ‘লাপাতা লেডিস’। সিনেমায় দেখানো হয়, ট্রেনে কয়েক জোড়া নতুন বিবাহিত দম্পতি। সব নববধূর গায়ে জরানো লাল শাড়ি, বিয়ের অলংকার আর বড় করে ঘোমটা টানা। দেখতে সবাই-ই একই রকম। নিজের স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষকে মুখ না দেখানোই এখানকার নিয়ম। ভুল করে ভুল কনের হাত ধরে ট্রেন থেকে নেমে যায় এক বর। এক কনে পরপুরুষের সঙ্গে রওনা দেয় অজানা এক গ্রামে, আর অন্য কনের গন্তব্য হয় অজ্ঞাত স্টেশনে। পরে স্ত্রীদের খুঁজে পেতে পুলিশের কাছে যান দুই স্বামী। প্রথমেই হারানো স্ত্রীর ছবি নিয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশও। একজনের ছবিই নেই, আরেকজনের মাথায় লম্বা ঘোমটা। তারপরও দুই নববধূর সন্ধানে নেমে পরে পুলিশ। অন্যদিকে সম্পূর্ণ আলাদা জগতে গিয়ে নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করেন গ্রামে বেড়ে ওঠা দুই কনে। সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন নীতানশি গোয়েল, প্রতিভা রত্না, স্পর্শ শ্রীবাস্তব ও রবি কিষাণ।
তবে সিনেমার সাথে আলাদাভাবে আলোচনায় এসেছেন প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা নীতানশি গোয়েল। যে চরিত্রের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়েই গল্প। খুব অল্প বয়স তার, ১৬ বছর বয়সেই জনপ্রিয়তা পেলেন তিনি। কনটেন্ট ক্রিয়েটর থেকে জনপ্রিয়তা পেয়ে বড় পর্দায় কাজ করার সুজোগ পেলেন উনি। তার জন্ম দিল্লির নয়ডায়।
এতোটুকু পড়ে সিনেমার গল্প সম্পর্কে মোটামুটি সবারই একটা ধারণা হয়েছে। যে আসলে ভিতরে কি আছে। তবে সিনেমাটা আসলে আমাদেরকে বা আমাদের মাঝে কি উপস্থাপন করতে চেয়েছে? কি বোঝাতে চেয়েছে? আমাদের জন্য কোন বার্তাটির বহন করে এনেছে? তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে তা হলো নারীর পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সম্মান করা উচিত। কেউ যদি চায় সংসার করতে সে, সেটাই করতে পারে। কেউ যদি চায় পড়াশোনা করে নিজেকে সমাজের সামনে উপস্থাপন করতে সে, সেটাই করতে পারে। চাওয়াটা যার যার ব্যক্তিগত। তবে সংসার করা হোক কিংবা পড়াশোনা করা কোনটাই সহজ কাজ নয়। তাই কোন বিষয়কে খুব নিচু চোখে না দেখাই ভালো। নারীর পছন্দকে তার জায়গা থেকে তার মানসিকতা থেকে তার পছন্দ কে সম্মান জানিয়ে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। ছবিটি এক ধরনের নারী কেন্দ্রিক।
ছবিতে আরও একটি বিষয় স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে বিশ্বাস, অপেক্ষা এবং মনোবল এই তিনটি বিষয় যদি মানুষের মধ্যে বিরাজ করে সে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে অবশ্যই পৌঁছাতে পারবে।
সিনেমাটির গল্প, কাস্ট, প্রোডাকশন ডিজাইন, সিনেমাটোগ্রাফি সবকিছু নিয়ে প্রসংসায় পঞ্চমুখ বড় বড় নির্মাতাদের কাছেও। সবার মুখে সিনেমাটি নিয়ে একটিই কথা যে সিনেমাটি যেমন হাস্যকর এবং আবেগপূর্ণ, তেমনই সত্যি।
সিনেমায় সমাজ বা সমাজবদ্ধ মানুষের প্রতি অনেকগুলো প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়েছে। শুধু ভারতেই নয়, এই উপমহাদেশের পুরুষ শাসিত বহু অঞ্চলে নারীদের শিক্ষা বা সামাজিক অধিকার, এমনকি মানবাধিকারও অনুপস্থিত। কিন্তু অজস্র নারীদের এই অধিকার ভোগ করতে কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয় । একারণে বহু নারীকেই যেতে হয়েছে নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে। এমনই গল্প তুলে ধরেছেন কিরণ রাও, তার সিনেমা লাপাতা লেডিসে। তবে সেটা মোলায়েমভাবে ও যত্নের সাথে। তাই সিনেমাটি কখনও আপনাকে হাসাবে, কখনও কাঁদাবে আবার কখনও আপনার চিন্তা উদ্রেক করবে।