Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাগরকন্যা কুয়াকাটা

কুয়াকাটাকে বলা হয় ‘সাগরকনয়। প্রাকৃতিক সম্ভারে সমৃদ্ধ সাগরকন্যা কুয়াকাটা। এখানে একই স্থান থেকে সুর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। লাল কাঁকড়ার দ্বীপ নামে এখানে আলাদা একটা জায়গাই রয়েছে, সেখানে খুব ভোরে পৌঁছাতে পারলে দেখা যায় পুরো সমুদ্রসৈকতে লাল কাঁকড়ার জন নিজেদের কার্পেটের মতো বিছিয়ে রেখেছে।
সৈকতের বিভিন্ন রূপ বিভিন্ন ঋতুতে উপভোগ করা সম্ভব ।সাগরের গর্ভনিসহ বিশাল আকৃতির ঢেউয়ের জনাবাশি যখন একের পর এক সৈকতে আছড়ে পরে, ঠিক তখনই প্রকৃতি প্রেমীদের সকল ক্রান্তি ধুয়ে মুছে যায়। ঢেউয়ের শব্দে মলে একটা অদ্ভুত শান্তি অনুভব হয় ডেউয়ের শব্দটা শুনতে প্রচুর প্রতি মধুর লাগে। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আশে পাশে তাকালেই বেলাভূমিতে দেখা যায় লাল কাঁকড়ায় নৃত্য ও জেলেদের জীবন জীবিকার যুদ্ধ। এছাড়া পরিচিত হওয়া যাবে স্থানীয় আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-কালচারের নামে। দেখা যাবে তাদের সৃষ্ট ঐতিহাসিক সেই সুপেয় পানির বুয়া ও সংলছ শ্রী মঙ্গণ বৌদ্ধবিহার।তাই দেখার মতো আরও অনেক জায়গা রয়েছে এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে সেই সম্পর্ষে আমরা অল্প কিছু জানি।

শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধবিহার

এই বিহারে এশিয়ার সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মুর্তি তয়োছে। এখানে এলে আপনি গৌতম বুদ্ধর মূর্তির পাশাপাশি ২০০ বছর পুরাতন একটি কুয়াও দেখতে পাবেন। এছাড়াও, এখানে এলে আপনি দেখতে পাবেন রাখাইনদের শতবছরের প্রাচীন রীতি নীতি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বৌদ্ধ বিহারে প্রবেশের মুখে দাঁড়ান দুইটি মূর্তি রয়েছে। এগুলো চুনজী দেবীর। রাখাইনদের ধর্মীয় বিশ্বাসে চুনস্ত্রী দেবী মন্দিরের রক্ষাকর্তা। উপরের দিকে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে রয়েছে শাক্য রাজার মূর্তি। বিহারটি সাধারণ জনসাধারণের জন্য সকাল ৮ টা থেকে ১১ টা ও ২ টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা ফি ধার্য রয়েছে।

লাল কাঁকড়ার চর

কাঁকড়ার চরে ভোরে বা সকালে গেলে লাল কাঁকড়ার দেখা পাওয়া টা কাষ্টকর। সূর্যের তাপে বালু উত্তপ্ত হয়ে গেলে কাঁকড়া রা বাইরে বর হয়ে আসে। তাই, সকাল ১১ টার দিকে গেলেই সহজে লাল কাঁকড়ার দৌড়া দৌড়ি উপভোগ করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনার উপস্থিতি যেন কোন ভাবেই টের না পায় গেলেই গর্তে চলে যায়। এই লাল কাঁকড়ার চরে আপনাকে বাইকে করে যেতে হবে, সকাল ৭ টার পর থেকে বেলা ১২ পর্যন্ত হাজার হাজার লাল কাঁকড়া দেখতে পাবেন এখানে। এছাড়া বিকালের সময়েও দেখা মিলবে লাল কাঁকড়ার। ভাটার সময় পানি কিছুটা নেমে গেলে অসংখ্য লাল কাঁকড়া মিছিল নিয়ে ছুটে চলে। এঁকেবেঁকে পুরো বেলাভূমিতে যেন ভারা আলপনা আঁকছে। কুয়াকাটা ও গামতি সৈকতে এখন এ দৃশ্য নিত্যদিনের। যেন দীর্ঘদিন পর ‘বেদখল’ হয়ে যাওয়া বেলাভূমি পুনরুদ্ধার করেছে কাঁকড়ার দল।

শুটকি পল্লী

শুঁটকির জন্য বিখ্যাত জায়গা কুয়াকাটা। প্রাকৃতিকভাবে শুকিয়ে বাজারজাত করা হয় কুয়াকাটার শুটকি। প্রাকৃতিকভাবে শুকানোর ফলে এর রয়েছে আলাদা স্বাদ। কুয়াকাটায় আসা পর্যটক-দর্শনার্থীদের কাছে প্রতিদিন শতাধিক কেজি শুটকি বিক্রির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ১২ মাস শুটকির চাহিদা থাকলেও নেই কোনো স্থায়ী পল্লী। যারা শুঁটকি খায় না তারাও যায় এইখানে।

লেম্বুর বন

কুয়াকাটা যাবে আর লেম্বুর বন যাবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। পর্যটকরা লেবু বন বা বাগান মনে করতে পারেন আসলে লেম্বু ছিল রাখাইন সম্প্রদায়ের একটি মেয়ে। তার বাড়ি ও বাগান এখানে ছিল। সমুদ্রে সে বাড়ি হারিয়ে গেছে। এখান থেকে পশ্চিমে ফাতরার বন দেখা যায়। লেম্বু বাগান থেকে সূর্যাস্ত সবথেকে ভাল দেখা যায়। এখানে সামুদ্রিক শামুক ঝিনুকের প্রচুর খোলস পাওয়া যায়। এখানে বেশ কিছু দোকান গড়ে উঠেছে। কাঁকড়া বা মাছ ফ্রাই করে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

কুয়াকাটা যাওয়ার উপায়

নদী ও সড়ক পথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়ক পথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা অনেক কম সময়ে এবং সহজে যাওয়া যায়। তবে লঞ্চ ভ্রমণ ও আরামের কথা বিবেচনা করলে কুয়াকাটা যেতে নদী পথই উত্তম। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লঞ্চে করে পটুয়াখালীতে গিয়ে সেখান থেকে বাসে। করে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। অথবা লঞ্চে সদরঘাট থেকে বরিশাল গিয়ে সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা যেতে পারবেন। মাথাপিছু ৩০০০- ৬০০০ টাকা রাখলে খুব সুন্দর ভ্রমণ হয়ে যাবে।

কুয়াকাটা কোথায় থাকবেন

পর্যটকদের থাকার জন্য কুয়াকাটায় বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল আছে। মান ও শ্রেণী অনুযায়ী এসব হোটেলে ৫০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকায় থাকতে পারবেন। হোটেল রুম ভাড়া কমাতে কয়েকজন মিলে শেয়ার করে থাকলে খরচ কম হবে। সিজন ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া গেলে আগে থেকে হোটেল বুক করার প্রয়োজন পরে না। আর অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ