ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়ার বদভ্যাস এড়াবেন যেভাবে
সংযমের মাস রমজান। এই সংযমের মাধ্যমে দেহ ও মনের শুদ্ধি পাওয়ার লক্ষ্যই যেন পুরো মাসজুড়ে। রোজার স্বাস্থ্যকর দিকের পাশাপাশি এই সময়ে কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে ওঠার আশঙ্কাও থাকে। এই যেমন ইফতারে গরম গরম জিলাপি আর বেগুনী খাওয়ার লোভটা কোনোভাবেই এড়ানো সম্ভব না। এই গরমে অন্তত ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টার মতো পানাহার না করে থাকতে হয়। সারাদিন প্রচণ্ড গরমে ব্যস্ত থাকার পর ডিহাইড্রেশন যেমন থাকে তেমনই পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা।
আর ইফতারের আইটেমগুলোকেও ঠিক স্বাস্থ্যকর বলা চলেনা। বেগুনী, আলুর চপ থেকে শুরু করে মুড়িমাখা – এসবকিছুই পেটের পীড়া, গ্যাস, প্রদাহজনিত সমস্যা বাড়াতে পারে। শুধু তাই না, ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়া যায়না। আর এত ভাজাপোড়া বেশি খেলে কি হতে পারে তা তো জানা কথাই। ওজন বাড়া আর হৃদরোগের ঝুঁকি। তাই সারাদিন রোজা রেখে দেহের যতটুকু উন্নতি হতে পারে তারচেয়ে বেশি হয় ক্ষতি।
তাহলে রমজানে অতিরিক্ত খাওয়ার পরিস্থিতি কি এড়ানো সম্ভব না? অবশ্যই সম্ভব। এ কথা সত্য রোজা রেখে সারা বছরের নিয়ম ঠিকঠাক মেনে চলা সম্ভব হয়না। আর এই এক মাসে কিছুটা ব্যতিক্রম হবেই। একটু চেষ্টা করলে খুব সহজেই অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস দূর করা সম্ভব। সেটা কিভাবে? পুরো রোজার মাসজুড়ে এই কটি অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে অতিরিক্ত খাওয়া কিংবা ওজন বাড়ার সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারবেন:
সেহরি না খেয়ে রোজা রাখবেন না
অনেকেই সেহরি না খেয়েই রোজা রাখেন। আবার অনেকেই বেশ আগে আগে সেহরি খেয়ে ফেলেন। সেহরির সময় শেষ হওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে সেহরি খেয়ে নেয়া সবচেয়ে ভালো। সেহরি না খেয়ে রোজা উচিত না। কারণ সেহরি সারাদিন চলার মতো যথেষ্ট শক্তির জোগান দেয়। মূলত সেহরিতে প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। মাছ, মাংস, ডাল, আঁশসমৃদ্ধ সবজি, শিম হালকা মশলা দিয়ে রান্না করতে পারেন। তবে এমন খাবার খাবেন না যা গরমে ডিহাইড্রেশনে ভোগায়। বিশেষত চা, কোক এসব খাবেন না। কারণ চা, বা কোমল পানীয় দেহের খনিজ পদার্থ এবং পানি দ্রুত নির্গত করে। এতে ক্ষুধা এবং পিপাসা লাগে বেশি।
ইফতারের পর ভেঙে ভেঙে কম করে খান
ইফতারের সময় পেটভর্তি খাবার খাওয়ার পরই শরীর ঝিম মেরে দেয়। এতে অনেকে রাতের খাবার না খেয়ে একেবারে সেহরি খাওয়ার চেষ্টা করে। এমনটা করা উচিত না। বরং কম কম করে প্রতিবারই খান। মানবমস্তিস্ক পেট ভরে যাওয়ার সিগন্যাল বেশ দেরিতে দেয়। এজন্যে তাড়াহুড়োয় অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তাই আস্তে ধীরে খান। প্রতিবার কম কম করে খান। এতে রাতের খাবার খাওয়ার জন্যে ক্ষুধা কাজ করবে। এমনকি গ্যাস বা অন্যান্য সমস্যাও আপনাকে এত যন্ত্রণা দিবেনা।
ঘরেই ইফতার করুন
ব্যস্ত জীবনে ঘরে ইফতার করার সুযোগও অনেকে পাননা। আবার অনেকে বাইরেই ইফতার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মনে রাখবেন, হোটেলের ইফতার তৈরিতে পুরনো বা ব্যবহৃত তেল ব্যবহার হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্যে মোটেও ভালো না। তারচেয়ে ঘরেই ইফতারের আয়োজন করা ভালো। বিশেষত ভাজাপোড়া কমিয়ে ফল বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত। এতে পরিমিত ইফতার করার সুযোগ যেমন হবে তেমনই অতিরিক্ত খাওয়ার হাত থেকেও রেহাই মিলবে।
রোজা ভাঙুন হালকা কিছু দিয়ে
আজান শোনার পর পানি খেয়েই ভাজাপোড়ায় হামলে পড়া চলবেনা। বরং হালকা কিছু দিয়ে প্রথমে ক্ষুধার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন। পানির সাথে খেজুর খেয়ে দেখতে পারেন। এতে শরীর হাইড্রেটেড হবে দ্রুত। কয়েক টুকরো ফল দিয়ে ইফতার করুন। তারপর ভাজাপোড়া খান।
বেশি করে চিবুন
গিলে ফেলবেন না। ক্ষুধায় অনেকেই ভালোমতো খাবার চিবোয় না। এতে অতিরিক্ত ইফতার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকেই। তাই আস্তে আস্তে চিবিয়ে খান। বিশেষত মুড়িমাখা আস্তেধীরে চিবিয়ে চিবিয়ে খান। এতে পেট ফেঁপে যাওয়া বা অতিরিক্ত খাওয়ার বদভ্যাস থাকবেনা।
অনন্যা/জেএজে