তীব্র গরমে নারীর সুস্থতায় করণীয়
শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকাল। সেই সাথে প্রকৃতিতে বেড়ে চলেছে গরমের তীব্রতা। এই গরমে বিশেষ করে ঘরে বাইরে সবখানে নারীর নাজেহাল অবস্থা। কাজের মধ্যে হঠাৎ প্রচণ্ড গরমে যেন শুরু হয় হাঁসফাঁস। তীব্র দাবদাহে পুরুষদের তুলনায় নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন গরম মানেই ডিহাইড্রেশন, চিকেন পক্স, জ্বর, ঠান্ডা, পেটের সমস্যা-এ ধরনের নানা অসুস্থতায় ভোগেন নারীরা। সঙ্গে চুল পরা, ঘামাচি, এলার্জির বাড়তি উপদ্রব তো আছেই। তাই এই তাপদাহে নিজেকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন সঠিক খাবার গ্রহণ, আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন এবং নিয়মিত ত্বকের যত্ন।
অনেক সময় দেখা যায় অফিসের কাজে কিংবা বাড়িতে রান্না বা অন্য কাজের মধ্যে। হঠাৎ কোন কোন নারীর মনে হয় গরমে গায়ে জ্বলা শুরু হচ্ছে। এছাড়া কখনো মুখ- কান লাল হতেও দেখা যায়।
নারীদের এ সমস্যার নাম হট ফ্লাশ। এ-সম্পর্কে ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার খাদিজা জানিয়েছেন, মেনোপজ বা মাসিক বন্ধ হওয়ার দু-এক বছর আগে থেকে হট ফ্লাশ শুরু হতে পারে। টানা ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এ সমস্যা। নারীদের দিনে ৫ থেকে ১০ বার আকস্মিক হট ফ্লাশ হতে পারে।
হট ফ্লাশের কারণ হিসেবে তিনি জানান, সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সের পর থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া। যা মেনোপজের পর চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। এছাড়া কারো যদি কোনো কারণে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জরায়ু বা ডিম্বাশয় অপসারণ করতে হয়, তাহলে তাদের এ সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ, এতে হরমোনের মাত্রা দ্রুত কমে যায়।
এক্ষেত্রে হট ফ্লাশ থেকে পরিত্রাণ পেতে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি কিছু নিয়ম মানার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ডাক্তার খাদিজা মনে করেন হট ফ্লাশ এর মত সমস্যা এড়াতে বাইরে যাওয়ার সময় অথবা গরম বেশি লাগতে পারে এধরনের কাজের জায়গায় নারীদের হালকা রঙের পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরিধান করা উচিত।
এছাড়া গরমে নারীদের খাদ্য গ্রহণেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন চা-কফি ও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এসময় নারীদের প্রচুর পানি পান করতে বলেছেন। তার মতে সবুজ শাকসবজি সয়া, কালিজিরা, ছোলা, ডালজাতীয় খাবারে প্রাকৃতিক ফাইটো ইস্ট্রোজেন আছে। তাই তিনি এসব খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া এসময় নারীদের যেকোনো ধরনের মানসিকচাপ ও উদ্বেগ এড়াতে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে প্রকৃতির বৈরি আচরণ থেকে প্রত্যেক নারী রক্ষা পেতে পারে যদি তারা নিজের প্রতি কিছুটা সচেতন থাকেন। এক্ষেত্রে বাইরে বের হওয়ার আগে নারীরা ব্যাগের মধ্যে রাখতে পারেন ভাপ মোড়ানো প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করার সরঞ্জাম।
সেক্ষেত্রে গরমে বের হওয়ার আগে প্রথমেই যে জিনিসটি
সঙ্গে নিতে হবে সেটি হল এক বোতল পানি। এছাড়া যাদের ডিহাইড্রেশনের সমস্যা আছে কিংবা গাড়িতে উঠলে বমি হয়, তাদের ব্যাগে এক বা একাধিক প্যাকেট গুর স্যালাইনের প্যাকেট রাখতে পারেন।
তাছাড়া রোদে বাইরে বের হতে হলে ব্যাগে অবশ্যই একটি ছাতা থাকলে নারীদের ত্বক ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে। অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘন্টা তেতে ওঠা রাস্তায় জ্যামে গাড়ি কিংবা বাসে বসে থাকতে হয়। কিংবা অফিসে হঠাৎই বিদ্যুৎ চলে যায়। এই সময়ে গরমের তাপদাহ থেকে বাঁচতে একটি হাতপাখা সঙ্গে রাখতেই পারেন। এছাড়া গরমে চোখের যত্নে সানগ্লাস খুবই উপকারী। এই কড়া রোদে বেশিক্ষণ খালি চোখে তাকিয়ে থাকা যায় না। উচিতও না। এজন্য সকলের সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত। তাই এই গরমে বের হওয়ার আগে ব্যাগে অবশ্যই একটি সানগ্লাস থাকা চাই।
গরমে অনেকে প্রচুর থেমে যান। ধুলোবালি লেপটে যায় মুখে। এই যাম থেকে এবং ধুলোবালি থেকে পরিত্রাণ পেতে টিস্যুর বিকল্প নেই। এ কারণে নারীদের ব্যাগে অবশ্যই ফেসিয়াল টিস্যুর প্যাকেট রাখতে হবে।
অন্যদিকে মায়েরা শিশুদের নিয়ে বের হলে কিছু অতিরিক্ত জিনিস অবশ্যই সঙ্গে রাখতে পারেন। বেবি তোয়ালে, ডায়াপার্স, পানির বোতল, হালকা ভরন খাবার, অতিরিক্ত পোশাক, শিশুর গরমের সমসয় থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নেজাল স্প্রে।
প্রকৃতির এই বৈরি আবহাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে প্রত্যেক নারীর খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরার নিয়মানুবর্তিতার ওপরই নির্ভর করে সুস্থতা ও ভালো থাকা। তাই নারী তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সতর্ক থাকুন।