Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইতিহাসে জামদানি শাড়ি

জামদানি শাড়ি বাঙালির ঐতিহ্যের নাম। জামদানি শাড়ি প্রত্যেকটা নারীর অনুভূতির জায়গা। অনেক নারী স্বপ্ন জুড়েই শুধু জামদানি শাড়ি। শাড়ি নারীর ভালোবাসা জায়গা হলেও জামদানি অন্যরকম। জামদানি পড়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে না এমন নারী পাওয়া অসম্ভব। তবে এই জামদানির ইতিকথা কি কেউ জানেন? চলুন আজ জামদানির ইতিকথা জানা যাক –

জামদানি শাড়ির ইতিহাস
জামদানি শাড়ির ইতিহাস বলতে গেলে মসলিন সারির ইতিহাস জানতে হবে তাই সেই যে ধরেই জেনে নেই জামদানি শাড়ির ইতিহাস। আমরা সকলেই কম বেশি জানি প্রাচীন ঢাকা মসলিন কাপড়ের জন্য বিশ্বজুড়ে নাম ছিল। মসলিন শাড়ির জনপ্রিয়তা উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে অবধি পৌছে গিয়েছিল। মসলিন ও জামদানি শাড়ির ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে কী জানেন ?

বর্তমান জামদানিকেই ধরা হয় মসলিনের উত্তরাধিকারী হিসেবে। যেহেতু মসলিনের ইতিহাস বেশ প্রাচীন সে হিসবে জামদা্নিও বেশ প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ। আজকের যে জামদানিকে আমরা চিনি জানি তার দেখা পাওয়া যায় সেই খৃষ্টপূর্বাব্দ সময় থেকে। জামদানি শাড়ির সবচেয়ে প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায়, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে। কৌটিল্যের’ “অর্থশাস্ত্র” গ্রন্থটি লিখিত হয়েছে আনুমানিক ৩০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন তখনকার বঙ্গ ও পুন্ড্র (বর্তমানে বগুড়া) অঞ্চলে কিছু কাপড়ের কারখানার কথা। জানা যায় সেখানে নাকি মিহিন কিছু কাপড়ের উৎপাদন করা হতো।

এছাড়াও পেরিপ্লাস অব দ্য এরিথ্রিয়ান সি বইতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। প্লেরিপাস একটি নৌপথে বানিজ্যের বিবরণ সংক্রান্ত গ্রন্থ। প্লেরিপাস একটি গ্রিক শব্দ। এর অর্থ সমুদ্রের বুকে পাল তুলে ভেসে বেড়ানো। এটি খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে রচিত। সেখানেও বঙ্গ অঞ্চলের মিহিন বস্ত্রের কথা উল্লেখ আছে। এছাড়াও আরব, চীন ও ইতালীর বিভিন্ন পর্যটক ও ব্যবসায়ীর বর্ণনাতে বারবার পাওয়া গিয়েছে এই ধরনের বস্ত্রের বিবরণ। এথেকে বুঝা যায় প্রাচীন যুগ থেকেই বাঙলা অঞ্চল মিহিন সুক্ষ্ণ কাপড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল।

ঐতিহাসিক এসব বর্ণনা বিশ্লেষন করে জানা যায় প্রাচীন সেই মিহিন বস্ত্রটিই হলো মসলিন। আর এই মসলিনে করা নকশা থেকেই জামদানী শাড়ির উৎপত্তি।

জামদানি নামকরণ

জামদানির নামকরণ নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। জামদানি মূলত ফারসি ভাষা থেকে এসেছে ধারণা করা হয়। ফারসিতে “জামা” অর্থ হলো পোশাক ও “দানা” অর্থ হলো বুটি। অর্থ্যাৎ জামদানির অর্থ দাঁড়ায় বুটিদার পোশাক। অপর একটি মতো অনুযায়ী ফার্সিতে “জাম” অর্থ সুপেয় মদ ও “দানি” অর্থ পেয়ালা। অর্থ্যাৎ  ইরানী মদ পরিবেশকারীদের পরিহিত মসলিন পোশাক থেকে হয়তো জামদানি নামটি এসেছে। যেহেতু ফার্সি ভাষার শব্দ তাই অনেকে মনে করেন তখনকার ভারতবর্ষে আগত মুসলিমদের দ্বারাই এই কাপড়ের বিস্তার ঘটে। কিন্তু বাংলার উর্বর মাটি ও আবহাওয়া এর রসদ জুগিয়েছিল। আসলে পারস্য ও মুঘল দুইটি সংস্কৃতির মিশ্রনের ফলই এই কাপড়। ঢাকাই মসলিন ও জামদানির স্বর্ণযুগ ধরা হয় মুঘল আমলকে। মিহিন কাপড়ের ওপর করা কারুকার্যগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় নকশাগুলিতে মুঘল ও পারস্যের শিল্পরীতির প্রভাব রয়েছে। কারজ এই সময়েই জামদানি ও মসলীন কাপড় চাহিদা তুঙ্গে ছিল। এবং এই কাপড়ের কারিগররা এত সর্বোচ্চ উন্নতি সাধন করেছিলেন। মূলত বাংলাদেশের ঢাকা জেলাতেই জামদানি শাড়ি সর্বোচ্চ উৎকর্ষতা লাভ করে। এই শাড়ি বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরী করা হলেও ঢাকাকেই এর আদি জন্মস্থান বলে ধরা হয়। ঢাকার সোনারগাঁও, তিতাবাড়ি, ধামড়াই, বাজিতপুর ইত্যাদি অঞ্চল এই কাপড় উৎপাদনের জন্য শীর্ষে ছিল। ধারনা করা হয় শীতলক্ষ্যা নদীর তীড় ঘেষে অবস্থিত হওয়ায় সোনারগাঁওয়ের আর্দ্র পরিবেশ এই কাপড় তৈরীতে অবদান রাখতো। ফলে এই অঞ্চলের কাপড় সবচেয়ে উৎকর্ষ হতো এবং স্বর্বজনস্বীকৃত গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলো।

নকশা অনুযায়ী আবার জামদানির বিভিন্ন ভাগ আছে। নকশার বিভিন্নতার ওপর নির্ভর করে জামদানিকে তেরছা, জলপাড়, পান্না হাজার, করোলা, দুবলাজাল, সাবুরগা, বলিহার, শাপলা ফুল, আঙ্গুরলতা, ময়ূরপ্যাচপাড়, বাঘনলি, কলমিলতা, চন্দ্রপাড়, ঝুমকা, বুটিদার, ঝালর, ময়ূরপাখা ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।

জামদানি শাড়ির নকশা
জামদানী শাড়ি মূলত মুঘল-পারসীয় মিশ্র সংস্কৃতির একটি শিল্প। এর নকশাগুলো লক্ষ্য করলে মুঘল-পারসীয় শিল্পরীতির ব্যবহার দেখা যায়। তবে সময়ের সাথে সাথে সবকিছুতেই বৈচিত্র আসে। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমল থেকেই ফুলেল মসলিন ও জামদানি প্রচলন শুরু হয়েছিল। ১৯৬০ এর দশকে লাল জামদানি শাড়ির বিশাল জনপ্রিয়তা ছিল।

জামদানি শাড়ি আমাদের দেশের নিজস্ব ঐতিহ্য। আমাদের উচিত নিজস্ব এই সাংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা এবং জামদানি শিল্পের প্রসারের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা।

তথ্য – সংগৃহীত

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ