Skip to content

২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী আম্পায়ারে ক্রিকেটারদের আপত্তি কেন

জীবিকা অর্জনের জন্য পেশা নির্বাচন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা স্পিকার নির্বাচনে লৈঙ্গিক পরিচয় এখন গৌন। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক তার যোগ্যতা অনুযায়ী পেশা নির্বাচন করতে পারবেন। সংবিধান তাকে সেই অধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ (১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী,বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।’ আর সংবিধানের ২৮ (৩) অনুচ্ছেদে পরিষ্কার ঘোষণা আছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।’

সংবিধানে থাকা নাগরিক অধিকার প্রসঙ্গে কথাগুলো বলতে হলো গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সুপার লিগের প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে মনিরুজ্জামানের সঙ্গে ফিল্ড আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসিকে নিয়ে দুই দলের ক্রিকেটার ও অফিসিয়ালদের ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশের খবর পড়ে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, নারী আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসির অধীনে খেলতে আপত্তি জানিয়েছে দুই ক্লাব। প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের খেলোয়াড় ও অফিসিয়ালরা এই আপত্তি তুলেছেন বলে জানিয়েছেন বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু। যার ফলে নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যায়নি ম্যাচ। ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর জেসিকে নিয়েই শুরু হয় খেলা। তবে এদিন আম্পায়ার পরিবর্তন চেয়ে নাকি ফোন করা হয়েছিল কমিটির চেয়ারম্যানকে। দেশের বেসরকারি একটি গণমাধ্যমকে ইফতেখার আহমেদ মিঠু বলেন, ‘তারা দুই দল এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছিল, কিন্তু পরে মেনে নিয়েছে। জেসি একজন আইসিসির অফিশিয়াল আন্তর্জাতিক আম্পায়ার। তাকে যেহেতু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, অবশ্যই মূল্যায়ন করে দেওয়া হয়েছে। এখন এটা না মানলে তো আমরা বৈষম্য করছি।’

মিঠু আরও জানান, সাথিরা জাকির জেসি আইসিসির প্যানেলভুক্ত আম্পায়ার। যেখানে আইসিসি অনুমোদন দিয়েছে তাকে সেখানে ডিপিএলের দুই দল যেন ভুলতে বসেছে সব নিয়ম-নীতি। তাই শাস্তির মুখে পড়তে পারে দু’দলই। দুই দলের শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, শাস্তি দেওয়ার বিষয়টা আসলে সিসিডিএমের। আমরা তাদের জানাব। আমি শাস্তি দেওয়ার কেউ না। আমি আমার আম্পায়ারকে শাস্তি দিতে পারব। আমি যেটা শুনেছি এটা হয়েছে। আমি খুঁজে বের করার চেষ্টা করব কী হয়েছে। যদি এটা আসলেই হয়ে থাকে তাহলে এটা আসলে বৈষম্য। তিনি একজন আন্তর্জাতিক আম্পায়ার, নারী হোক বা পুরুষ।

এখন প্রশ্ন হলো, খেলোয়াড়রা কেন নারী আম্পায়ার দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করবেন? নারীর আম্পায়ার থাকলে তাদের খেলায় কী সমস্যা হতে পারে! সাথিরা জেসির যোগ্যতা, দক্ষতা না থাকলে সেটা ভিন্ন কথা ছিল। কিন্তু সাথিরা জেসি দেশের নারী ক্রিকেটের প্রথম দিকের সদস্য ছিলেন তিনি, লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের অধিনায়কত্বও করেছেন। এরপর ক্রিকেট কোচিং ক্যারিয়ারকে পাশে রেখে আম্পায়ারিংয়ে নেমে পড়েন তিনি। যেখানে ইতিহাস তৈরি করেছেন সাবেক এই নারী ক্রিকেটার। আম্পায়ারিংয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

সবশেষ আইসিসির আম্পায়ারিং প্যানেলে যুক্ত হয়ে দেশের ক্রিকেটের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন তিনি। সাথিরা জেসির এতো যোগ্যতা শুধু নারী বিদ্বেষের কারণে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে এটা কেমন লথা! সাথিরা জেসি আম্পায়ারিংয়ের যোগ্যতা প্রমাণ করেই যেহেতু এই পজিশনে এসেছেন তাকে অবমূল্যায়ন করে, তার সঙ্গে খেলতে না চেয়ে এই দল অধিভুক্ত সবাই দীনতার পরিচয় দিয়েছেন। কড়া সমালোচনার মুখে যদিও সিদ্ধান্তের রদবদল করেছে উভয় ক্লাব।

সংবিধানের ৭ খ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে-তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।’ সংবিধান ছাড়াও দেশে ২০১৮ সালে জেন্ডার বৈষম্য বিলোপ আাইন পাস করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে যখন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তখন তা সাধারণের মেনে নেওয়া কষ্টকর। সাধারণত সাধারণ জনগণের কাছে ভরসা স্থল সেলিব্রিটিরা। কিন্তু তাদের সেই নীচতা সাধরণকেই বা কী শিক্ষা দেয়!

কর্মক্ষেত্রে, পরিবারে কোথাওই নারীকে তার যোগ্যতা-দক্ষতা বলে মূল্যায়ন করা হয় না। ‘নারী’ ট্যাগ লাগিয়ে নানাবিধ প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়! যা নিতান্তই জ্ঞানের অপরিপক্বতা। শুভবোধের উদয় হোক। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘুচে যাক। ধরার বুকে মানবতা, মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ঘটুক।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ