Skip to content

১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুরে আসুন নীল জলের দুনিয়ায়

সমুদ্রসৈকত বা দ্বীপ বরাবরের মতই সবার প্রিয়। সমুদ্র আর নীল আকাশের অপূর্ব সমন্বয়। সি-বেডে বসে সমুদ্রের উত্তাল গর্জন আর শীতল বাতাস, এ এক অন্যরকম রোমাঞ্চ। এই এমন অপরূপ সৌন্দর্য দেখে নিজের চোখকে প্রশান্তি দিতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। 

১৮৯০ সালের দিকে বাঙালি ও রাখাইন সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ এই দ্বীপে এসে বসতি স্থাপন করেন। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, এখানে প্রথম অধিবাসী হিসেবে বসতি স্থাপন করেছিল মোট ১৩টি পরিবার। যারা সবাই ছিলেন মৎস্যজীবী। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে দ্বীপটিকে যখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়। তারপর থেকেই মানুষ দ্বীপটিকে সেন্টমার্টিন নামেই চেনে। নারিকেল জিঞ্জিরা খ্যাত এই দ্বীপটি কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ দ্বীপ ৭.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপকে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ও বলা হয়। মূল দ্বীপ ছাড়াও আরও একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে যা ‘ছেড়াদ্বীপ’ নামে পরিচিত। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় লক্ষ করা যায় সেন্টমার্টিনে। চাইলে আপনিও যেতে পারেন। তবে যাওয়ার আগে কিছু তথ্য অবশ্যই জেনে নেবেন।

যা যা দেখতে পাবেন
বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু হলো ছেঁড়া দ্বীপ। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূ-খণ্ড নেই। চেষ্টা করবেন ৪টার আগে আগেই রওনা দিতে তাহলে ছেঁড়া দ্বীপে সূর্যাস্ত দেখে ফিরতে পারবেন। সেন্টমার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০-৫০০ বর্গমিটার আয়তনবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপ আছে। যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ‘ছেঁড়াদিয়া’ বা ‘সিরাদিয়া’ বলা হয়। ছেঁড়া অর্থ বিচ্ছিন্ন বা আলাদা, আর মূল দ্বীপ ভূ-খণ্ড থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন বলেই এ দ্বীপপুঞ্জের নাম ছেঁড়া দ্বীপ। প্রবাল দ্বীপের ইউনিয়ন সেন্টমার্টিন থেকে ছেঁড়া দ্বীপ প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
দক্ষিণের এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আছে প্রচুর প্রাকৃতিক পাথর। দ্বীপের প্রায় অর্ধেকই জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানিতে ডুবে যায়। বলে রাখা ভালো ছেঁড়া দ্বীপের সূর্যাস্ত অসাধারণ তবে সূর্যাস্তের পরে বেশি দেরি করবেন না। সন্ধ্যায় মূল দ্বীপে ফিরে বাজারের জেটিতে আড্ডা দিতে পারেন কিংবা পশ্চিম বীচের যে কোন জায়গায় বসাতে পারেন গানের আসর। রাতে বার-বি-কিউ করার ক্ষেত্রে রিসোর্টে করতে পারেন। রিসোর্টে মাছের দাম একটু বেশি নিলেও মাছগুলো ফ্রেশ থাকে। অথবা আশেপাশের হোটেলে পছন্দমত মাছ বারবিকিউ করে খেতে পারবেন। সেন্টমার্টিন একটি প্রবাল দ্বীপ, এবং এখানে একটি সুন্দর প্রবাল প্রাচীর রয়েছে। আপনি স্নরকেলিং বা ডুব দিয়ে এই প্রবাল প্রাচীরটি দেখতে পারেন। এছাড়া সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে একটি সুন্দর ঝাউবন রয়েছে। এই ঝাউবনটি একটি শান্ত এবং মনোরম পরিবেশ তৈরি করে।

কখন যাবেন সেন্টমার্টিন
সেইন্টমার্টিন যাওয়ার ভালো সময় হলো নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। তখন আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং সমুদ্রের পানি থাকে ঘন নীল। এরকম নীল জলরাশির সমুদ্র বাংলাদেশে একমাত্র সেন্টমার্টিন থেকে দেখা যায়। টেকনাফ – সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। বছরের বাকি সময় জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। আর ট্রলারে যেতে চাইলে সারা বছরই যাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে ট্রলারে যাতায়ত নিরাপদ নয়। 
যেভাবে যাবেন
সেন্টমার্টিন যেতে হলে সাধারণত কক্সবাজার জেলার টেকনাফে আসতে হবে। টেকনাফ থেকে জাহাজ, স্পিডবোট অথবা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে সরাসরি বাসে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে জাহাজে/ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া সুবিধাজনক। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় কক্সবাজার সহ থাকলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে তারপর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত উত্তাল থাকায় টেকনাফ থেক জাহাজ না ছেড়ে কক্সবাজারের ইনানী বিচ থেকে নিয়মিত জাহাজ ছেড়ে যাচ্ছে। 
যেখানে থাকবেন
স্ট্যান্ডার্ড হোটেল/রিসোর্ট ডাবল বেড ১৫০০-২৫০০ টাকা। বাজারের দিকে মোটামুটি মানের হোটেল ৮০০-১২০০ টাকা। খুবই পিক সিজন আর সরকারি ছুটির দিনে ভাড়া আরও একটু বেড়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে সমুদ্রের কাছের বা একটু ভালো রিসোর্ট থাকতে রুম প্রতি ২৫০০-৩০০০ টাকা লাগবে। বেশিরভাগ রুমে ডাবল বেড থাকে। এক রুমে কয়েকজন মিলে থাকলে খরচ ভাগ হয়ে কমে যাবে। পিক সিজন ও ছুটির দিন ছাড়া গেলে খরচ আরও কম হবে। এছাড়া আরও কম খরচে থাকতে চাইলে স্থানীয় মানুষদের বাড়িতে অল্প টাকায় থাকতে পারবেন, এ জন্যে একটু খুঁজে ও কথা বলে দেখতে হবে। আবার যদি একদম নিরিবিলি থাওতে চাল তাহলে থাকার জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু হোটেল বা রিসোর্ট সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে যাবেন। এতে ভাড়া পড়বে রুমভেদে ১,৫০০-৫,০০০ টাকা।
খাওয়া-দাওয়া
পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে বেশ কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁ। প্রতিবেলা খাবার খরচ পড়বে মেন্যু ভেদে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। রাতে চাইলে মাছ দিয়ে বারবিকিউ করা যাবে। রিসোর্টে বললে তারাই ব্যবস্থা করে দিবে। এখানকার ডাব অবশ্যই খাবেন। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ খেতে ভুলবেন না। এখানে রূপচাঁদা, ভেটকি, কোরাল, টুনা, চিংড়ি, স্যামন সহ হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ পাবেন। প্রায় প্রত্যেকটা রিসোর্টেই রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে খেতে পারবেন। হোটেল বা রিসোর্টে বারবিকিউ পার্টিও করতে পারেন। হোটেল বা রেস্তোরাঁয় খাওয়ার আগে একটু যাচাই করে নেবেন। কোনো কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই দরদাম করে নেবেন।

দেবিকা দে

Debika Dey Srishty Junior Sub-Editor, Fortnightly Anannya

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ