আফগান মেয়েদের ফের স্কুলনিষিদ্ধ, দেশটি কোথায় যাচ্ছে
খাদিজা আক্তার
নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্যে আফগানিস্তানের স্কুলগুলো ২০২৪ সালের ২০ মার্চ খুলেছে। কিন্তু গত দুই বছরের মতো এবারেও দেশটির মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। তালেবান কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর আগে, তালেবানরা ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে।
আফগানিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার নতুন শিক্ষাবর্ষ ঘোষণা করে। কাবুলে এক ঘোষণায় বলা হয়, একটি অনুষ্ঠানে স্কুলের ঘণ্টা বাজানোর মধ্য দিয়ে সব প্রদেশে নতুন শিক্ষা বর্ষ শুরু হবে। মিডিয়া আউটলেটগুলোতে জারি করা আমন্ত্রণে নারী সাংবাদিকদের অনুষ্ঠান কাভার করতে পরিষ্কারভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসূত্রগুলো বলছে, আফগানিস্তানে ক্রমাগত উগ্রবাদী, কট্টরপন্থীদের বিচরণ বেড়েই চলেছে। যা সমূলে বিনাশ না করতে পারলে ভবিষ্যৎ আফগান নারীদের জন্য আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে! তালেবানরা নারীকে অবরুদ্ধ করতে যতটা সম্ভব, তারও বেশি হেনস্তা করে চলেছে! কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের তেমন কোনো সরব ভূমিকা নেই।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারীদের ঘরবন্দি করেছে। নারীদের পার্কে বেড়ানো নিষিদ্ধ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ। পাশাপাশি পার্লার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নারী পরিচালিত রেডিও স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ তালেবান সরকার জানিয়েছে, গজনি প্রদেশের তালেবান শাসিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্কুল ও স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের প্রধানদের বলেছে, ১০ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের প্রাইমারি স্কুলে পড়ার অনুমতি নেই। এতে আরও বলা হয়েছিল, কিছু এলাকায় প্রচার ও নির্দেশনা মন্ত্রণালয় (যা পূর্বে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত ছিল) মেয়েদের স্কুলের প্রধানদের অনুরোধ করেছিল, তৃতীয় শ্রেণির ওপরে অধ্যয়নরত মেয়েদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে।
পূর্ব আফগানিস্তানের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী বিবিসিকে জানায়, তাদের বলা হয়েছিল যে, যে মেয়েরা লম্বা এবং বয়স ১০ বছরের বেশি তারা স্কুলে প্রবেশ করতে পারবে না। গত বছরের ডিসেম্বরে নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তালেবান। সেসময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি জাতিসংঘও এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়। তবে এর মধ্যেই যেন সব সীমাবদ্ধ থেকে গেছে! তালেবানদের এই বর্বর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসী যদি একজোট না হয় তবে এই কট্টরপন্থীদের বর্বরতার ভয়াবহ প্রভাব আমাদের সমাজেও প্রভাব ফেলবে।
একটি সমাজ গঠন হয় নারী-পুরুষের সম্মিলিত সহোযোগিতায়। কখনোই পুরুষের একার দ্বারা সব সংঘাত-সংকট প্রতিহত করা সম্ভব নয়। কোনো কালেই তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু উগ্রবাদীরা নারীকে দাসী বানিয়ে রাখতে চায়। রাজদরবারে যেমন এক রানি থাকলে তার আরও উপপত্নী-রক্ষিতা-দাসী থাকতো, এ যুগের আফগান যেন ঠিক ততটাই বর্বরতায় মিশছে! তালেবানদের হুজুগে কার্যক্রমে নারীরা যে কী প্রচণ্ড পরিমাণে নির্যাতনের শিকার, তা সে দেশের নারীরা বিভিন্নভাবে প্রকাশের চেষ্টা করেছে! তালেবানদের এমন নিপীড়নকে রুখতে হলে আন্তর্জাতিক মহলকে কূটনৈতিক-রাষ্ট্রিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে।