জাগো নারী যুদ্ধজয়ী বীরযোদ্ধা
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর; অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। নজরুলের এই গানের দুটি লাইন যেন আজও মানুষের হৃদয়ে চির অম্লান। প্রথম দিকে এই নারী দিবস নারী শ্রমিক মজুরিদের নিজস্ব অধিকার আদায়ের দাবিতে সূচনা হলেও বর্তমান সময়ে সমগ্র পৃথিবীতে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে পরিচিত ৮ই মার্চ, যা আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়।
নারী দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন ভাবনা থাকলেও প্রকৃত অর্থে রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি সকল ক্ষেত্রে ও কর্মস্থানে নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করাই হলো নারী দিবসের প্রধান লক্ষ্য। সমাজে ও সর্বত্র ক্ষেত্রে নারীর অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরে এ লক্ষ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলাই হলো এর উদ্দেশ্য। এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ সালে কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, মজুরিবৈষম্য, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা।
১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্রেট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জারমান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম নারী সম্মেলন হয়েছিলো। এ সম্মেলনেই ক্লারা প্রতিবছর ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ই মার্চ পালিত হতে লাগল। এমনকি বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দুঃখের সাথে এটা বলতে হয় যে, নারী অধিকারের এই লড়াই অনেক সফলতা অর্জন করলেও নারী পুরুষের সমতা এখনও সুনিশ্চিত হয়নি।
নারী বিষয়ক তথ্য পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে এ বিষয় উদীয়মান হয় যে, নারীরা এখনও পশ্চাতে অবহেলিত। এমনকি তারা ক্ষমতায়ন ও অধিকার আদায়ের দিক থেকে পুরুষের তুলনায় অনেকাংশে পিছিয়ে। এখনও অনেক দেশেই নারীরা মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এমনকি পরিবারেও পিছিয়ে রয়েছে। মূল বিষয় হলো নারীরা পাবলিক বাস থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে, গৃহে, বিদ্যাপীঠে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, যৌতুকের জন্য চলছে নারী হত্যা। দক্ষিণ এশিয়া নারী নির্যাতন ও পীড়নের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে। বিশ্ব নারী দিবসে এসব সমস্যা নিয়ে কথা হয়। শুধু তাই নয়, নারীর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বহুবিধ কর্মপন্থা গৃহীত হয়। শুধু নারী দিবসেই নয়, সারা বছরই এমন আশাবাদী উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ আমাদের। তবে বাংলাদেশের নারীদের অধিকার, ক্ষমতায়ন, নারী মুক্তির দিকে বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করতে হবে। বিশ্ব নারী দিবস সমতা, উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে নারীর যাত্রাকে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে যাবে। সাথে সাথে প্রতিটি নারীকে হয়ে উঠতে হবে নির্ভয় ও অদম্য এবং নিজের আত্নরক্ষায় সাবলীল হয়ে ওঠার প্রত্যাশা।
মেহনাজ শাহরিন অর্থি,
শিক্ষার্থী, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়