নারী দিবসের রঙ
নারী দিবসের মোট পাঁচটি রঙ। একটা দিন উদযাপনের জানা একটি রঙ বাছাই করে নিতে হয়। ওই রঙই মূলত দিনটির আবেগ-অনুভূতি বারণ করে। নারী দিবসও তেমনি এক আবেগের দিন। দিনটি উদযাপিত হচ্ছে সম্প্রতি কিছু বছর ধরে কিন্তু এর ইতিহাসের ব্যাপকভা আরও অতীতে। কিন্তু নারী। দিবসের প্রসঙ্গ এলেই মাথায় বেগুনি রঙ ভর করে। আসলেই কি তাই? নারী দিবসের মজাই এখানে। দৈনন্দিন জীবনের কোনো ঘটনা তা যেকোনো করে। বেগুনি রঙটির ক্ষেত্রেও তা এমনই। ক্ষেত্রেরই হোক, তাকে ধারণ।
যারা টুকটাক সিনেমা দেখেন তারা স্টিভেন স্পিলবার্গের সিনেমা একবার না একবার দেখেছেন। যিনি অত সিনেমাও দেখেন নি. ডিনিও একবারো তাকে ‘জুরাসিক পার্ক’ এর নির্মাতা বলে চিনে নেবেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না তার জীবনের প্রথম দিককার গুরুত্বপূর্ণ সিনেমাগুলো করটা অর্থবহুল। ১৯৮৫ সালে তিনি দ্য কালার গাপন’ সিনেমাটি মুক্তি দেন। মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ নারী লেখক জানিস ওয়াকারের একটি উপন্যাস অবলম্বনে। সিনেমাটি নির্মিত হয়। বইটিও প্রকাশের পর জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ইংল্যান্ডেও বইটি বেস্টসেলার হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এক বছর পর বইটির জন্য তিনি পুলিৎজার পুরভার পান। এভাবেই তিনি ইতিহাস গড়েন। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে সাহিত্যের এই সম্মানজনক পুরস্কার পান তিনি। উপন্যাসে আফ্রিকান আমেরিকান বৈষমাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
২০১৮ সালে প্যানটেন বেগুনিকে বর্ষসেরা রঙ বলে আখ্যা। দেয়। ওই উপন্যাস এবং সিনেমার প্রভাবকে কেউ অগ্রাহ্য করতে পারে নি। প্যানটোনকে জেনেন তো? এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠন রঙ নিয়ে কাজ করে। তবে এই বেগুনি সাধারণ চোখের বেগুনী নয়। মহাকাশের অতিবেগুনী রশ্মিকে। স্বীকৃতি জানিয়ে রঙটিকে এমন স্বীকৃতি দেয়া হয়। প্যানটোনের দাবী, বেগুনী মহাকাশের ন্যায় অসীম। এই অসীমের মাঝে খুঁজে পাওয়া যাবে সীমাহীন সম্ভাবনার দুয়ার। এই সম্ভাবনাই নারী দিবসের সুর হিসেবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কমিটিও মেনে নিলেন। তারাও বলেন, অতিবেগুনী রশ্নি সম্পর্কে এখনও জানার অনেক কিছু বাকি। নারীদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যেতে পারে। নারীর সম্ভাবনা সম্পর্কেও অনেক কিছু জানা বাকি।
পরে ২০১৮ সালে ‘বেগুনি’কে বর্ষসেরা রঙের স্বীকৃতি দেয় প্যানটোন। প্যানটোন বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত রং নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। যদিও এই বেগুনি আমাদের ‘সাদা’ চোখে দেখা সাধারণ বেগুনি রং নয়; মহাকাশের অতিবেগুনি রশ্মিকে স্বীকৃতি জানিয়ে বেগুনিকে বর্ষসেরা রঙের ঘোষণা দেওয়া হয়। প্যানটোনের ব্যাখ্যায় বলা হয়, বেগুনি মানে মহাকাশের মতো অসীম এবং তা থেকে নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনার সঙ্গে সুর মেলায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কর্তৃপক্ষ। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বেগুনি ঠিক নারীর মতো স্বতন্ত্র। অতিবেগুনি রশ্মিকে যেমন জানার অনেক বাকি। আছে, তেমনি নারীর সম্ভাবনাকেও।
সেই থেকে নারী দিবসের সঙ্গে যুক্ত হয় বেগুনি রঙটি। ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত টানা চার বছর নারী দিবসের রঙ হিসেবে বেগুনিকে বেছে নেয়া হয়। আজও সমানাধিকারের প্রতীক হিসেবে বেগুনি রঙটিকে ব্যবহার করা হয়। এটাও ইতিহাসের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশ শতকের প্রথমদিকে বেগুনির সঙ্গে সাদা ও সবুজ রঙ মেশাতেন ব্রিটেনের নারীরা। তারা মূলত ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এ রঙকে বেছে নিয়েছিলেন। তাদের কাছে বেগুনী আভিজাত্যের প্রতীক। সাদা যেমন শুদ্ধতা এবং সবুজ আশার প্রতীক। তাই ঘোষণা না দিলেও সাদা আর সবুজে নারী দিবসের কিছুটা রঙ তো আছেই। একবার ভেবে দেখুন বেগুনীই কেন? লাল আর নীল মিলে হয় বেগুনী। নীল হয়েছে বিষাদের রঙ আর লাল বিপ্লবের উদ্দাম স্রোত। বিষাদ ছুঁয়েছে বিপ্লব। নারী দিবসের বেগুনি রঙ তাই সবুজ, সাদা, লাল, নীল এ চার রঙ সহ মোট পাঁচটি রঙ ধারণ করে।