Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যামেরা হাতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করছেন আফ্রিকার তরুণ

আফ্রিকার প্রাণিজগতও জলবায়ু পরিবর্তন ও চোরাশিকারের কারণে বিপন্ন হয়ে উঠছে৷ এক প্রতিভাবান মানুষ নিজের ক্যামেরা ও উদ্যম সম্বল করে বৃহত্তর সমাজের মধ্যে সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে চলেছেন৷

আমব্রোস লেতোলুয়াই একাধিক প্রতিভার অধিকারী৷ তার ছাগলগুলির কী প্রয়োজন, তিনি সেটা জানেন৷ ৩০ বছর বয়সি কেনিয়ার এই মানুষটি জীবজন্তুর প্রতিভাধর ফটোগ্রাফারও বটে৷ তিনি দেশের কেন্দ্রস্থলে নাইবুংগা সংরক্ষিত এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন৷ এর আগে তিনি কলেজে ওয়াইল্ডলাইফ ম্যানেজমেন্ট ও প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷

প্রায় ১১,০০০ হেক্টর মাপের বিশাল এলাকা জুড়ে তিনি বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটি বন্য প্রাণী নথিভুক্ত করছেন৷ কিন্তু শুধু ফটোই যথেষ্ট নয়৷ প্রাণী সুরক্ষার জন্য আশেপাশের এলাকার মানুষদেরও সামিল করে তাদের বিষয়টা বোঝানো জরুরি৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমব্রোস বলেন, ‘‘শুরুতে সমস্যা হয়েছিল৷ কিন্তু এর মধ্যে বয়স্ক মানুষ, নারী ও শিশুরা সাহায্য করেছে৷ এভাবে সবাই মিলে আমরা সমস্যার মোকাবিলা করতে পারছি৷ যেমন মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে সংঘাত আমরা সমাজবদ্ধভাবে সমাধান করছি৷’’

চিতাবাঘ বার বার এমন সংঘাতের কারণ হচ্ছে৷ আমব্রোস কিন্তু লেন্সের মাধ্যমে সহজে আর এই প্রাণীর দেখা পাচ্ছেন না৷ মূলত চোরাশিকার ও বাসভূমি সংকুচিত হয়ে ওঠার কারণে প্রাণীগুলি কোণঠাসা হয়ে পড়ছে৷ ইতোমধ্যে চিতা লুপ্তপ্রায় প্রাণীর লাল তালিকায় স্থান পেয়েছে৷

বিশেষ করে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ নামে পরিচিত কালো চিতা সবচেয়ে বিপন্ন হয়ে উঠেছে৷ আমব্রোস এই প্রজাতির দশটি প্রাণী শনাক্ত করেছেন৷ সেগুলি জঙ্গল, উন্মুক্ত সাভানা ঘাসভূমি ও বুশল্যান্ডের ঝোপের মধ্যে বাস করে৷ আলোকচিত্রী হিসেবে তিনি এই প্রাণীগুলিকে সামগ্রিক ইকোসিস্টেমের নাজুক অবস্থার উদাহরণ হিসেবে গণ্য করেন৷

আমব্রোস নিজেকে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখেন৷ স্থানীয় নারীরা অতীতে চিতাকে শত্রু হিসেবে দেখতেন৷ এখন সেই প্রাণীর সুরক্ষার জন্য তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ তারা নিজেদের ‘চুই মামা’ বা চিতার মা নামে ডাকেন৷ এই উদ্যোগের সহ প্রতিষ্ঠাতা এলি মডেস্টা বলেন, ‘‘এই প্রাণী রক্ষা করা কতটা জরুরি, আমরা তা বুঝেছি৷ কারণ চুই মামার প্রতিষ্ঠার অনেক সুফল পাওয়া গেছে৷”

কারণ পর্যটকরা উপার্জনের পথ খুলে দিচ্ছেন৷ ফলে নারীদেরও উপকার হচ্ছে৷ ইতোমধ্যে তারা সাভানা বনভূমির মাঝে নিজস্ব এক ছোট সদর দফতর খুলেছেন৷

একটি তথ্যকেন্দ্র আমব্রোস লেতোলুয়াইয়ের আরেকটি প্রকল্প৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ সেখানে তিনি শিশুদের ক্যামেরার ব্যবহার শেখান এবং তাদের নিয়ে প্রাণিজগত ঘুরে দেখান৷ শিক্ষার প্যামফ্লেট ও দূরবিন নিয়ে সাফারি শুরু হয়৷ যেমন বিষয় হিসেবে ‘বার্ড ওয়াচিং’ বেছে নেওয়া হয়েছিল৷ সাত থেকে ১৫ বছর বয়সি ছাত্রছাত্রীরা তাতে অংশ নিচ্ছে৷

কোন কোন পাখি পর্যবেক্ষণ করা হলো, সাফারির শেষে তারা সবাই মিলে তার মূল্যায়ন করে৷ অনেকের জন্য সেটা ছিল সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা৷ ওয়াইল্ডলাইফ কিডস রিসোর্স সেন্টারের লতিপারি কিদিদিং বলে, ‘‘আমি বড় হয়ে রেঞ্জার হতে চাই, কারণ এখানে অনেক মানুষ প্রাণিজগত সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না৷ আগে মানুষ অনেক প্রাণী হত্যা করেছে৷ কিন্তু কিছুদিন আগে আমি স্কুলে বিভিন্ন প্রজাতির সুরক্ষা সম্পর্কে একটা বই পড়েছি৷ এখন আমি মানুষকে প্রাণীগুলির গুরুত্ব শেখাতে এবং চোরাশিকার বন্ধ করতে চাই৷”

আমব্রোস ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷ তিনি লক্ষ্য করছেন, তরুণ প্রজন্ম পরিবেশ সম্পর্কে আরো সচেতন হয়ে উঠছে৷ পরিবেশের সৌন্দর্য্য ও নাজুকতা সম্পর্কে কীভাবে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব, নিজের ক্যামেরা সম্বল করে তিনি তা প্রমাণ করে দিচ্ছেন।

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ