Skip to content

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাষার সমঝোতা সম্পর্কে পূর্ণতা

একটি পরিবার,সমাজ কিংবা দেশ যেখানেই মানুষের বসবাস থাকুকনা কেন মানুষ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক না তৈরি করে ভালোভাবে বাঁচতে পারবে না। কারন মানুষ একা বাঁচেনা। সে তার চারপাশে বন্ধু, পরিজনের সঙ্গে সুখে দুঃখে মিলেমিশে বাস করতে চায়। তা না হলে মানুষের জন্য জীবন হয়ে উঠবে অর্থহীন।

আর নিঃসঙ্গ ভাবে অর্থহীন জীবন যেন না কাটাতে হয় সে জন্য মানুষ তার আপনজনকে ঘিরে সুসম্পর্ক তৈরি করে। এবং একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক সুন্দর করে গড়ে তোলার প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে ভাষা। তাই মানুষের সঙ্গে যে কোন সম্পর্কই হোক তার প্রকাশের জন্য সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাষার ব্যাবহার অত্যন্ত জরুরি।
অর্থাৎ একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বুঝতে হলে তার ভাষার সম্পর্কটা ঠিকঠাক বোঝা জরুরি হয়ে ওঠে। কারণ ভাষা-ই তো একরকম ঠিক করে দেয় কোন মানুষের সম্পর্ক কি। এবং কোন সম্পর্কে কার কি করণীয়। কোন সম্পর্কে তার দায়-দায়ীত্ব কি এবং কতটা। একটি সম্পর্কের মাঝে কি ধরনের থাকে এবং সে আচরণবিধিই বা কেমন হবে। ভাষাই সম্পর্কের মাঝে এসব বিষয়ে অদৃশ্য এক ছক এঁকে দেয়।

একদিকে লক্ষ করা বলা যায় মানুষ তার সামাজিক জীবনে ‍সম্পর্কের বাইরে যেমন যেতে পারেনা তেমনি ভাষার বাইরেও না। কিংবা বলা যায়, ভাষা ছাড়া সম্পর্ক বোঝানো যায়না তাই সম্পর্কে ভাষার ব্যাবহার থাকবেই। অর্থাৎ বলা যায়, মানুষের জীবন ভাষাছাড়া অচল। জীবনকে সচলের সিঁড়ি বা যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম হলো যাবতীয় সম্পর্কের আবর্তে থাকা ভাষা। কারণ ভাষাই আমাদের জীবনকে অর্থবহ করে।
ভাষাইতো ঠিক করে দেয় বাস্তব অবাস্তবতার দোলাচলে বসবাসকারী মানুষের সম্পর্ক। ভাষার মাধ্যমেই মানুষ পরিচিত হয় সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, দাস-মালিক, সমতা-অসমতা, স্বাধীনতা-পরাধীনতা, পরিচিত-অপরিচিত, অভিবাসী-স্থায়ী, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মত সব সম্পর্কের সঙ্গে।

যদিও সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে সমাজের কিছু গদবাঁধা নিয়ম রয়েছে যা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের দেয়াল তৈরি হয়। যা মানুষকে কুন্ঠিত করে দেয়। অন্যভাবে বলা যায় মানুষ এতে পরাধীনতা ও দাসত্বের বেড়াজালে জীবনকে যেন অনেকবেশি জটিল করে ফেলে।

মুলত সম্পর্ক হচ্ছে মানুষের একটা পরম আশ্রয়ের জায়গা যেখানে মানুষ সব জটিলতাকে লাঘবের পর দ্বিধাহীন চিত্তে ফিরে এসে অবসাদের ঘাম মুছতে পারে। যা আসলে সব কঠিন পথের শেষ ঠিকানা। কিংবা বলা যায় সম্পর্ক হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে মানুষ হতে পারে তার বাসনার অবসানমুক্তি।

তবে যেকোনো সম্পর্কই কিন্তু প্রেম, আদর, আন্তরিকতা কিংবা ভীতি বা শাসন নয়। কখনো সম্পর্ক যেন কয়েদখানার মতো মনে হয়। যেখানে আছে শুধু শর্ত, নিয়ম আর শাস্তির বিধান। যেখানে নেই কোন জানলা যা দিয়ে বয়ে চলে সুবাতাস।

এছাড়া ‘সম্পর্ক’ কিন্তু সবসময় দুজন নারী-পুরুষের মাঝে প্রেমই নয় সম্পর্ক বলতে সমাজে প্রতিষ্ঠিত, আকাঙ্ক্ষিত সব ধরনের সম্পর্ককে বুঝানো হয় ওই ভাষারই মাধ্যমে।

অর্থাৎ মানুষ কার সঙ্গে কতটুকু কথা বলবেন, কিভাবে বলবেন কিরকম আচরণ করবেন, কি পরিমাণ শ্রদ্ধা করবেন, কাকে কতটা গ্রহণ আর কতটা ভালবাসবেন ইত্যাদি এই সবকিছু ঠিক করে দেয় ভাষা।
এছাড়া সম্পর্কের ধরণ, সম্পর্কের নাম- প্রেম, বিয়ে, পরিবার, বন্ধুত্ব কিংবা ছোট-বড়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পুলিশ-জনগণ, হিন্দু-মুসলিম,নারী/পুরুষ, শ্রমিক-মালিক, ধনি-গরীব ও নানাবিধ সম্পর্কের পরিচিতি ঘটে শুধু মাত্র ভাষার সমঝতার ভিত্তিতে।

এছাড়া সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকের সম্পর্ক কেমন হবে অর্থাৎ অভিভাবকের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কটা ভক্তির নাকি ভীতির। তা কিন্তু সমঝতা সম্পন্ন ভাষা প্রকাশে। এতে উভয়ের সম্পর্ক সুন্দর হয়। সেইজন্যেই রবিন্দ্রনাথ বলেছেন-”সকল শাস্ত্রেই লিখিয়াছে যে, গুরুজনের অবাধ্য হওয়া পাপ, কোনো শাস্ত্রেই লিখে নাই, কনিষ্ঠদের প্রতি যথেচ্ছা ব্যবহার করা পাপ।”
অন্যদিকে নর-নারী বা স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্কের মন্দ ভালো অর্থাৎ তাদের সুখি-অসুখি দাম্পত্য কিন্তু তাদের প্রেম ভালোবাসা, সম্মান অসম্মান, যত্ন অযত্ন,বিশ্বাসঅবিশ্বাসের প্রকাশ পায় সমঝোতা পূর্ন ভাষায় তাদের সম্পর্কের বন্ধনে দৃঢ়তা থাকবে।
তাই স্পষ্টই বলা যায় একটি ভাষাহীন সম্পর্ক নির্জীব পদার্থ ছাড়া আর কিছুই না। অর্থাৎ ভাষার সমঝোতাই পারে সম্পর্কের বন্ধনকে অটুট রাখতে।

দেবিকা দে

Debika Dey Srishty Junior Sub-Editor, Fortnightly Anannya

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ