বসনে একুশের ছোঁয়া
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারী/ আমি কি ভুলিতে পারি।
একুশ মানেই বাঙালির অহংকার। বাঙালি জাতির একটি অন্যতম দিন । যে ভাষায় আমরা কথা বলি, আমাদের নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করি সেই ভাষাকেই অর্জনের উপলক্ষ্য এই দিনটি পালন করি আমরা। এই ভাষার জন্য পথের মাখে নিজের বুকে বড় বড় অক্ষরে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই লিখতে আপোস করে নি এই বীর বাঙালি জাতি। বাংলা ভাষা কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। একে দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার সম্মান। যাকে পুরো জাতি উদযাপন করে এই ২১শে ফেব্রুয়ারির দিনে।
যেকোনো উৎসবের অন্যতম একটি অংশ হলো পোশাক। পোশাক মানুষের রুচির পরিচয় দেয়।
উৎসবকে কেন্দ্র করেই পোশাক নির্ধারণ করা উচিৎ। তার পাশাপাশি প্রাধান্য দিতে হবে রঙকে। পোশাক ও রং উৎসবের প্রতিচ্ছবি। পোশাক উৎসবকে চেনায়। উৎসবের ভাষা প্রকাশ করে। তাই যে কোন উৎসবকে মাথায় রেখে পোশাক এবং রংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। উৎসবকে কেন্দ্র করে সঠিক পোশাক নির্বাচন করা একজন ব্যক্তির রুচিশীল মানসিকতার পরিচয় দেয়। তাই বসনেও একুশের ছোঁয়া থাকুক।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি শুরু হয় প্রভাতের প্রভাতফেরীর মাধ্যমে। গলায় গান আর হাতে ফুল নিয়ে ধীর পায়ে শহীদ মিনারের দিকে পৌঁছায় মানুষ। একুশে ফেব্রুয়ারির এই দিনটিকে সাজানো হয় কালো আর সাদা রঙের আঙ্গিকে। যদিও এখন কিছুকিছু ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ পরিমাণে লাল রঙের ব্যবহার দেখা পাওয়া যায়।
পোশাকের নকশা
একুশে ফেব্রুয়ারি পোশাকের নকশাগুলো একটু হালকা ধরনেরই হয়ে থাকে। বেশিরভাগ নকশার ক্ষেত্রেই দেখা যায় দেশীয় ধাঁচার ছোঁয়া। অ, আ, ই, ঈ, ক, খ, সহ সব বর্ণমালা, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার নানান ধরনের দেশীয় কবিতার লাইন গানের লাইন প্রভৃতি।
পোশাকের ধরণ
শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, কুর্তি ও ছেলেদের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি এ ধরনের পোশাকগুলোই দেশীয় বিভিন্ন উৎসবে চোখে পড়ে। অন্যদিক থেকে এই পোশাকগুলো আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির সাথে জড়িত। এ পোশাকগুলো যেকোনো উৎসবে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। এই পোশাকগুলোর মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরা যায়। উৎসবকে কেন্দ্র করে শাড়ি এবং পাঞ্জাবির গুরুত্ব অন্যান্য পোশাকের তুলনায় একটু বেশি। কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, ফতুয়া এ ধরনের পোশাক পরা যেতেই পারে।
পোশাকের রঙ
নিঃসন্দেহে একুশে ফেব্রুয়ারি পোশাকের রং সাদা কালো। এটাই খুব স্বাভাবিক। তবে এখন যুগের সাথে সাথে এসেছে পোশাকের রঙের মধ্যে কিছু ভিন্নতা। সাদাকালো রঙের পাশাপাশি দেখা যায় নানান ধরনের রং ব্যবহার করতে। যেমন- লাল- সবুজ আবার অনেক সময় সাদাকালো রঙের পরিবর্তে ছাই ধূসর বেশ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বর্তমান সময়ে।কিন্তু খুব গাঢ় রঙের ব্যবহার বা খুব উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার এই দিন করতে দেখা যায় না। কারন উৎসবের সাথে রঙের পরিপূরক সম্পর্ক রয়েছে। সাদা কালো শাড়ির মধ্যে হালকা লাল বা সবুজ সুতোর কাজ দেখা যায়। অনেক সময় মেরুন খাকি এই ধরনের রঙের কাজও চোখে পড়ে। অন্যদিকে অনেককে দেখা যায় ছাই কালো এই ধরনের রঙের মিশেলের শাড়ি পরতে।
কাপড়ের ধরণ
জামদানি তাঁত ব্লক বাটিক এই ধরনের কাপড়ের নকশাই একুশে ফেব্রুয়ারিতে বেশি দেখা যায় বিশেষ করে ব্লকের নকশার জনপ্রিয়তা একুশে ফেব্রুয়ারি পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
পোশাকের পাশাপাশি ফ্যাশন অনুষঙ্গ একটি অন্যতম ভূমিকা রাখবে। সম্পূর্ণ সাজটিকে সুন্দর করে তোলার জন্য সেই ক্ষেত্রে শাড়ির সাথে বা যেকোনো পোশাকের সাথে মিলিয়ে গহনা, জুতা, ব্যাগ সমস্ত কিছু বহন করা সাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেকোনো অনুষঙ্গ সম্পূর্ণ সাজকে সুন্দর করে তোলে। তাই শাড়ি বা অন্য পোশাকের সাথেই সঠিক গহনা থেকে শুরু করে অন্যান্য যত জিনিস আছে তার সঠিক ব্যবহার করা জরুরি। সাজের সম্পূর্ণ পূর্ণতা তখনই আসে যখন ফ্যাশনের পাশাপাশি অনুষঙ্গের সঠিক ব্যবহার হয়।